ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কানকুন সম্মেলন

বাংলাদেশের সার্বিক কর্মকা- ও ঢাকা ঘোষণার প্রশংসা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৭ মে ২০১৭

বাংলাদেশের সার্বিক কর্মকা- ও ঢাকা ঘোষণার প্রশংসা

তপন বিশ্বাস, কানকুন, মেক্সিকো থেকে ॥ দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনের শুরুতে বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। দুর্যোগ প্রশমনে বাংলাদেশের সার্বিক কর্মকা- এবং ২০১৫ সালের ঢাকা ঘোষণাসহ বিভিন্ন কর্মকা- সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। জাপান, ইতালি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, থাইল্যান্ড, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের অনুরোধে অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট বক্তব্য দিতে হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে। কম যাননি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামালও। একের পর এক অধিবেশন সামলিয়েছেন সমান তালে। পুরো টিমের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে অধিবেশনগুলো সামলিয়ে বাংলাদেশের সাফল্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছেন। সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে দেশের কার্যক্রমগুলো। পাশাপাশি এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের এ সম্পর্কিত বক্তব্য ভবিষ্যত সাফল্যকে আরও আশাবাদী করে তুলেছে। ‘গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন-২০১৭’ শীর্ষক আলোচনা সভার শুরুতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ন্যাশনাল প্ল্যান নিয়ে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশের নেয়া ব্রিজ-কালভার্ট, হোরিজোনিং বোন, সোলার প্যানেলের কার্যক্রমে প্রশংসা করেন জাপান, ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীরা। দুর্যোগে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন থাইল্যান্ড, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীরা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ ঘোষণা হওয়ায় তারা প্রশংসা করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীর বলেছেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নেয়া উদ্যোগগুলো ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে পারলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তারা এসডিজি অর্জনে সক্ষম হবে।[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে বাংলাদেশ সরকার জনসচেতনাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যে কারণে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা প্রায় জনগণই সম্পন্ন করতে পারে। দুর্যোগে উপকূলবাসীর আশ্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। আরও অনেক নির্মাণাধীন রয়েছে। মুজিব কেল্লাগুলোকেও সংস্কার করা হচ্ছে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় কী সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে ইতোপূর্বে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ জানে ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের করণীয় কী। দুর্যোগকালীন মোকাবেলা এবং দুর্যোগ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনে মাটির নিচে পানি, দেশলাইসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে জনগণ সচেতন হয়েছে এবং দুর্যোগে মৃত্যুর হার কমেছে। এছাড়া কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার আগে জনগণকে সে সম্পর্ক বিভিন্ন বুূলেটিনের মাধ্যমে অবহিত করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি যে কোন পরিস্থিতিতে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচী রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসকদের কাছে বিশেষ ফান্ড রাখা রয়েছে। এছাড়াও যে কোন পরিস্থিতিতে ভিজিএফ, ফেয়ারপ্রাইচ কার্ড, টিআর, কাবিটার মতো কর্মসূচী সরকারের হাতে রয়েছে। এ সকল কর্মসূচীর মাধ্যমে যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষম রয়েছে। তিনি বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশ দুর্যোগ মোকাবেলা করে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে। আর বাংলাদেশে এখন আর তার প্রয়োজন পড়ে না। মন্ত্রী বালেন, শুধু দুর্যোগ মোকাবেলায় নয়, দেশের দারিদ্র্য বিমোচনেও সরকার ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশকে প্রথমে মধ্যম আয়ের দেশ ও পরে উন্নত দেশে পরিণত করতে বিভিন্ন মেয়াদের কর্মসূচী হাতে নিয়ে কাজ করছে সরকার। বাংলাদেশ এখন বিশে^ এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। যে কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ বিভিন্ন কর্মকা- প্রশংসিত হচ্ছে। এই সম্মেলনেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ‘ইন্টার মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে’ বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট বক্তব্য দিতে হয়েছে। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের প্রত্যেককে তিন মিনিট করে বক্তব্য দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর আগে থেকে বাংলাদেশ নিয়ে সর্বস্তরে আলোচনা চলে। তিনি লিখিত বক্তব্য দেয়া শুরু করলে একে একে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বাংলাদেশের মন্ত্রীকে অতিরিক্ত সময় বক্তব্য দেয়ার দাবি জানান। পরে সঞ্চালক মন্ত্রীর বক্তব্য থামিয়ে আরও অতিরিক্ত পাঁচ মিনিট বক্তব্য দেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় সঞ্চালক বলেন, বাংলাদেশের কাছ থেকে অনেকের শেখার আছে। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী মোট আট মিনিট বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য শেষে হলরুম করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।
×