ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘নজরুলের প্রতিভার আঁতুরঘর ছিল তাঁর সৈনিক জীবন’

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৭ মে ২০১৭

‘নজরুলের প্রতিভার আঁতুরঘর ছিল তাঁর সৈনিক জীবন’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নজরুলের সাহিত্য ও শিল্পচর্চাকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল তার সৈনিক জীবন। ১৯১৭ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। এ বছর পূর্ণ হলো নজরুলের সৈনিক জীবনের শতবর্ষ। আর নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৈনিক জীবনে শতবর্ষবিষয়ক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নজরুল ইনস্টিটিউট। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মোনালিসা দাস। ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া। আলোচনায় অংশ নেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও নজরুল গবেষক এরশাদ আহমেদ শাহীন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নজরুলের সৈনিক জীবনের শুরু হয়েছিল ১৮ বছর বয়সে। সৈনিক জীবন থেকে তিনি ফিরে আসেন ভিন্ন এক নজরুল হয়ে। ওই সৈনিক জীবন তার ভেতর আন্তর্জাতিকতাবোধ তৈরি করে দেয়ার পাশাপাশি ছড়িয়ে দিয়েছিল বিপ্লবী চেতনা। এসব কারণেই নজরুলের সৈনিক তার জীবনের একটি বড় ঘটনা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোনালিসা দাস বলেন, নজরুলের সব প্রতিভার আঁতুড়ঘর ছিল তার সৈনিক জীবন। তার সাহিত্যচর্চায় মননশীলতার পেছনে প্রবলভাবে কাজ করেছে সেনা ছাউনি জীবন। তার গজল আঙ্গিকের গানের সূত্রপাত, ফারসী ভাষা রপ্ত করা, সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশে হাতেখড়ি, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চেতনা গড়ে উঠেছিল ওই সময়ে। সৈনিক জীবনের গোটা সময়টা তাকে তৈরি করেছে সৃষ্টিশীলতার পথে ধাবিত হতে। মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সৈনিক জীবন নজরুলকে গড়ে তুলে মানবতাবাদের প্রতিনিধি হিসেবে। এই জীবন নজরুলকে পরিণত করেছে মুক্তপথের বৈশ্বিক মানুষে। সৃষ্টির আলোয় সমকালের ভেতর দিয়ে খুঁজেছেন মুক্ত পৃথিবী। দাঁড়িয়েছেন ঔপনিবেশিকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও ব্যক্তিবাদের বিরুদ্ধে। এভাবেই সামষ্টিক মুক্তির সেরা সৈনিক হয়েছেন নজরুল। আলোচনা শেষে গান ও কবিতায় সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বের সূচনা হয় শিশু শিল্পীদের গাওয়া ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’ গানের মাধ্যমে। এরপর গ্রিন হেরাল্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা নজরুলের ‘দাও ধৈর্য, দাও শৈর্য’ গানটি পরিবেশন করে ইংরেজী ভাষায়। এই গানটির স্টাফ নোটেশনসহ পরিচালনায় ছিলেন খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী তিমির নন্দী। ইনস্টিটিউটের তরুণ শিল্পীদের গাওয়া দুটি গানের শিরোনাম ছিল ‘আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়’ ও ‘চল চল চল’। ইনস্টিটিউটের উচ্চতর বিভাগের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘জয় হোক’, ও ‘শঙ্কা শূন্য’। প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের শিল্পী শ্রেয়া সুস্মিতা পরিবেশন করেন ‘মোর ঘুম ঘোরে’। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী লায়লা আফরোজ ও ডালিয়া নওশীন। ‘মোজাফ্ফরের প্রিয় গান’ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের পৃথিবীকে বিদায় জানানোর পাঁচ বছর হলো পূর্ণ হলো। তার স্মরণে শুক্রবার এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন বসেছিল। ছায়ানট ভবনের রমেশ চন্দ্র স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই অর্থনীতিবিদের প্রিয় গানগুলো গেয়ে তাকে স্মরণ করা হয়। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ স্মৃতি সংসদ এই সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে। ২০১২ সালের ২২ মে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ইমেরিটাস মোজাফফর আহমদ। ‘মোজাফ্ফরের প্রিয় গান’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ফাঁকে ফাঁকে দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বরা অধ্যাপক আহমদের স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বনামধন্য শিল্পী সুতপা সাহা, অভয়া দত্ত, ফারজানা আক্তার পপি এবং মুস্তাফিজুর রহমান তূর্য। এস্রাজে ছিলেন অসিত বিশ্বাস, মন্দিরাতে প্রদীপ রায় এবং তবলায় সুবীর ঘোষ। আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে এবং আমার মুক্তি এই আকাশে আলোয় আলোয় দুটি সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্মৃতিচারণ করেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সহধর্মিণী ড. রওশন জাহান প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আহমদের ছেলে মমতাজুল করিম এবং জামাতা মির্জা হাসান। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ছিলেন। তিনি একই সঙ্গে সৌন্দর্য পিপাসু ছিলেন, সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একজন স্বনামধন্য গবেষকও ছিলেন। ড. রওশন জাহান বলেন, মোজাফ্ফর সবসময় ন্যায় ও সত্যের কথা বলতেন, সেই পথে হেঁটেছেন এবং সে পথে হাঁটতে গিয়ে যখন কেউ সাড়া দেয়নি, তখন তিনি একলাই চলেছেন, হেঁটেছেন। আর সেই চলার প্রেরণা পেয়েছেন তিনি রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা থেকে। স্মৃতি সংসদের সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিল্পীরা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের প্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনান। অপালা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আপন সংস্কৃতির চর্চা করে বাঙালী জাতিসত্তায় উত্তরণ এবং সংস্কৃতি সমন্বিত শিক্ষা নগর থেকে বাইরে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জের আটি ভাওয়াল গ্রামে নতুন ভবন নির্মাণ করছে ছায়ানট। শুক্রবার সকালে অপালা-ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ হাসান আজিজুল হক। বললেন, অপালা বহু দিন আগেই এই লক্ষ্যকে আদর্শ ধরে কাজ শুরু করেছিলেন, কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। ছায়ানট সে কাজ শুরু করতে পারছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন কথাশিল্পী। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক এবং সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মী অপালা ফরহত নবেদের পরিবারের দান করা ১ বিঘা জমিতেই গড়ে তোলা হচ্ছে অপালা-ভবন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের স্বাগত কথনে সম্পূর্ণ প্রেক্ষপট বর্ণনা করেন ছায়ানটের সহসভাপতি আবুল হাসনাত। সমাপনী ভাষণে ছায়ানটের সভাপতি বলেছেন, নিজ আদর্শ নিয়ে শহর ছাড়িয়ে উপশহরের মানুষের কাছে যাওয়ার উদ্যোগটা ছায়ানটের একটা বড় অর্জন। সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলা জরুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তারানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন এবং প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওবায়েদ রহমান।
×