ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোজা শুরুর আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৭ মে ২০১৭

রোজা শুরুর আগেই ভোগ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোজা শুরুর আগেই আরেক দফা বাড়লো ভোগ্যপণ্যের দাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠে। ভোগ্যপণ্যের বাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ইফতারি আইটেম বানাতে চিনি, ছোলা ও খেজুরের চাহিদা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। তাই দাম বেড়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৮ টাকা এবং জাত ও মানভেদে ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ছোলা। মসলা জাতীয় পণ্য রসুনের দাম সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭৫ টাকা। এছাড়া বেড়েছে আদার দাম। ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, আটাসহ অন্যসব ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের বেশি দামে। সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। এদিকে রমজানে বেশি চাহিদার সব ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ দেশে রয়েছে বলে দাবি করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছেÑ তাই সঙ্কট হওয়ার কোন কারণ নেই। জিনিসপত্রের দামও বাড়বে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। শুধু তাই সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবি থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন সাধারণ ভোক্তারা। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদনে ভোক্তাদের জন্য সুখবর দিয়ে আরও বলা হয়, রমজানের চাহিদাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সে লক্ষ্যে বাজারের দিকে গোয়েন্দা সংস্থার তীক্ষ্ম নজরদারি থাকবে। এছাড়া টিসিবির মাধ্যমে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে বলে জনকণ্ঠকে জনিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু। তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে অন্যবারের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভাল। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে সেগুলোর মজুদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া টিসিবিতে প্রয়োজন মতো পণ্য মজুদ রাখা হচ্ছে। কোন রকম সঙ্কটের সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, এবার কোন ধরনের কারসাজির সুযোগ নেই। কারণ যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আনতে হয় সেসব পণ্য এবার বেশি বেশি আমদানি করে মজুদ করা হচ্ছে। বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যদিও পণ্য আমদানির পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেশি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। এরই মধ্যে বেড়ে গেছে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও ডালের দাম। উৎপাদন মৌসুম হওয়ায় পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকলেও রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেশনের কারণে আমদানি বেশি হওয়ার পরও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়বে না বলে ব্যবসায়ীরা সরকারকে যে প্রতিশ্রুতি দেন, পরবর্তী সময়ে তা আর রক্ষা করা হয় না। এ জন্য দুর্বল বাজার তদারকি এবং যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাবকে দায়ী করেন তারা। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ভোক্তা অধিকার নিশ্চত করতে হলে সবার আগে জোর দিতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ওপর। সারাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দেয়া জরুরী। সেটি কোন একটি প্রতিষ্ঠানের একক প্রচেষ্টা কিংবা সক্ষমতা দিয়ে সম্ভব হবে না। সরকারের আন্তরিকতা থাকতে হবে। পাশাপাশি সুধী সমাজকেও উদ্যোগী হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকেও। সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। পণ্যগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং গত এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ডজনখানেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ সয়াবিন তেল, পামতেল, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, চিনি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা ও খাবার লবণ। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৭৮ টাকায়। চিনির আমদানি মূল্য, জাহাজভাড়া, পরিশোধন ব্যয়, ঋণের সুদহার, কোম্পানির মুনাফা, পরিবেশক বা পাইকারি ব্যবসায়ীর মুনাফা ও খুচরা ব্যবসায়ীর মুনাফাসহ সব খরচ যোগ করে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখিয়েছে, প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য হতে পারে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। রোজার আগে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি চিনিতে অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ভোক্তাদের পকেট থেকে। টিসিবির হিসাবে, গতকাল ঢাকার বাজারগুলোতে খোলা চিনির দর ছিল ৬৭ থেকে ৭০ টাকা। ঠিক এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হতো ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। এ এক মাসে দেশের ভেতরে চিনির দর বাড়ার কোন কারণ সৃষ্টি হয়নি, আন্তর্জাতিক বাজারে দর উল্টো কমেছে। তা সত্ত্বেও ভোক্তাদের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। একই অবস্থা রমজানে ইফতারে জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য ছোলার দামের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে বলা হয়েছে, আমদানি মূল্য, সব খরচ ও মুনাফাসহ মানভেদে প্রতি কেজি ছোলার সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য হওয়া উচিত ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। রমজান এখনও আসেনি, তার আগেই ছোলার দাম পৌঁছে গেছে ৯৫-১০০ টাকার ওপরে। টিসিবির বাজারদরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে মানভেদে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ১০০ টাকায়। সংস্থাটির হিসাবেই এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। আর এক মাস আগে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এছাড়া সম্প্রতি অতিবৃষ্টি এবং হাওর এলাকায় বন্যার কারণে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে শাকসবিজর ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে বাজারে সবজির দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে। সে কারণে রাজধানীতে অধিকাংশ শাকসবজিসহ কাঁচাপণ্যের দাম বেড়েছে।
×