ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

মেঘের বীজবপন ॥ ইচ্ছেমতো আবহাওয়া পরিবর্তন!

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৬ মে ২০১৭

মেঘের বীজবপন ॥ ইচ্ছেমতো আবহাওয়া পরিবর্তন!

প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ ও প্রাণীকূলের জীবন দুর্বিসহ করে তুলছে। তীব্র গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এ অবস্থায় মনে হয়, আবহাওয়া যদি ইচ্ছে মতো পরিবর্তন করা যেত! বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণে আবহাওয়াও পরিবর্তন করা সম্ভব। আর তা সফলভাবে সম্ভব হয়েছে রাশিয়ায়। মস্কোর সবচেয়ে বড় সামরিক প্যারেডের একদিন আগের শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, পরদিন তুষারপাত এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও প্যারেডের সময়টা কিন্তু রৌদ্রজ্জ্বল ছিল। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? ৯ মে জার্মান নাৎসী বাহিনীর কাছ থেকে বিজয় অর্জন উদযাপন দিবস উপলক্ষে মস্কোতে বিশাল প্যারেডের আয়োজন হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দিনটি বরাবরই রৌদ্রজ্জ্বল ছিল। কিন্তু এ বছরে এসে আবহাওয়াবিদরা জানালেন ৯ মে অবিরাম তুষার আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা। কিন্তু ঠিক প্যারেডের সময় মেঘের বদলে আকাশে দেখা দিল ঝলমলে সূর্য। এটা সম্ভব হয়েছে ‘ক্লাউড সিডিং’-এর কারণে। রুশ বিমানবাহিনী অতীতেও ‘ক্লাউড সিডিং’ বা বৃষ্টিকণার বীজ বপন করেছেন। অর্থাৎ যে সময়টায় আকাশ পরিষ্কার থাকার প্রয়োজন, সেই সময়ের আগে বৃষ্টি কণার বীজ বপন করে বৃষ্টি ঝরিয়ে আকাশ পরিষ্কার করে ফেলা হয়। এর ফলে ঠিক প্যারেডের সময় সিটি সেন্টারে আকাশটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। প্যারেড শেষের দিকে আকাশে একটি একটু করে মেঘ জমতে থাকল আর প্যারেড শেষে পুরো আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল। মহড়ার সময়ও ক্লাউড সিডিং এর সফল পরীক্ষা করা হয়েছিল। ঠিক যতটা সময় আকাশ পরিষ্কার রাখার দরকার ছিল ততটা সময় আকাশ ছিল ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল। তবে এই প্রযুক্তি যে সবক্ষেত্রে খাটে এটা মানতে রাজি নন অনেকে। আবহাওয়াবিদদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে তারা বলছেন, আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা সীমিত। তারা বলছেন ক্লাউড সিডিং এর প্রযুক্তি একটা ছোট্ট এলাকায় কাজ করে কিন্তু বিস্তৃত পরিসরে এটা সম্ভব নয়। এর আগে একবার চাষের জন্য বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু সেখানে এই প্রযুক্তি কাজ করেনি। ক্লাউড সিডিং এর মূল মন্ত্র হলোÑ ঝড়ো মেঘের মধ্যে কৃত্রিম নিউক্লিয়াস প্রবেশ করানো। এর ফলে মেঘ ঐ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে ঘনীভূত হয়ে ছোট ছোট বরফে পরিণত হয়, যেটাকে বলা হয় ‘সিলভার আয়োডায়িড পার্টিকেল’। কেবল রুশ সেনাবাহিনী নয়, জার্মানির ওয়াইন প্রস্তুতকারী চাষীরাও এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন আঙ্গুর ক্ষেতে ক্ষতি এড়ানোর জন্য। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হলো বিমানের মাধ্যমে পুরো এলাকায় নিউক্লিয়াস সলিউশন স্প্রে করা। ঝড়ো মেঘের উপরে বা মধ্যে বিমানটি প্রবেশ করিয়ে এই স্প্রে করা হয়, কণাগুলো এত ছোট হয় যে মাটিতে পড়ার আগে বৃষ্টির কণায় রূপ নেয়। এই পদ্ধতিতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। কারণ যে পরিমাণ সিলভার আয়োডায়িড বৃষ্টির পানির সঙ্গে মাটিতে দ্রবীভূত হয়, তাতে রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ এতই সামান্য, যে তাতে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। সূত্র : ডয়েচে ভেলে, বিবিসি
×