ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে ইতিহাসের অংশ দলের সবাই

আলোচনায় মাহমুদুল্লার ঝড়ো ইনিংস

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৬ মে ২০১৭

আলোচনায় মাহমুদুল্লার ঝড়ো ইনিংস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি দুর্দান্ত ব্যাটিংই না করলেন। প্রয়োজনের মুহূর্তে এমন ঝড়ো ব্যাটিং দেখালেন তাতে উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশও ইতিহাস গড়ে ফেলল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে উঠে গেল। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে পেছনে ফেলল। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সম্ভাবনাও অনেক বাড়িয়ে তুলল। যে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে শ্রীলঙ্কা সফরে নির্ধারিত ওভারের সিরিজের আগেই দেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা উঠেছিল, ধূম্রজাল তৈরি হয়েছিল, সেই মাহমুদুল্লাহই কিনা দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা যোগ্য। ৩৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৪৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। এমনকি ১২ বলে জিততে যখন বাংলাদেশের ৫ রান দরকার, মুশফিকুর রহীম এক রান নেন। মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ। তিনহাজার রানের মাইলফলকেও পা রাখেন। নিউজিল্যান্ডের করা ২৭০ রান অতিক্রম করতে গিয়ে শুরুতেই সৌম্য সরকার আউটের পর তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান রুম্মন মিলে ভরসা দেন। দুইজন মিলে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন। যেই ১৪৩ রানে গিয়ে তামিম আউট হয়ে যান, মুহূর্তেই ৪ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১৬০ রানেই চলে যায় চার উইকেট। এরপর মুশফিক ও সাকিব মিলে একটু এগিয়ে যান। ১৯৯ সালে সাকিবও সাজঘরে ফিরলে চরম বিপত্তিতে পড়ে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ব্যাট হাতে নামেন। শুরু হয় মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পালা। দেখতে দেখতে দুইজন মিলে দলকে এগিয়েও নিয়ে যান। মুশফিকই আসল কাজটি করেন। দলের বিপর্যয়ের সময় উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ৪৫ রানের অপরাজিত ইনিংসও খেলেন। ম্যাচ সেরাও তাই হন। কিন্তু মুশফিক যতই উইকেট আঁকড়ে থাকেন, যদি মাহমুদুল্লাহ এমন ইনিংস না খেলতেন তাহলে বাংলাদেশের জেতা কঠিনই ছিল। নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন কী আর শেষে গিয়ে মাহমুদুল্লাহর মতো এমন খেলা খেলতে পারতেন? তাই মাহমুদুল্লাহর এমন ঝড়ো ইনিংসই আসলে সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। শুরুটা একেবারে ধীরগতিতে করেন মাহমুদুল্লাহ। ১১ বলে মাত্র ৩ রান নেন। কিন্তু এরপর থেকেই বিধ্বংসী রূপে ধরা দেন এ ব্যাটসম্যান। তাতে দলও জিতে যায়। নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে হারায় বাংলাদেশ। কিউইদের হারিয়ে সব দলকেই বিদেশের মাটিতে হারানোর চক্রও পূরণ করে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের প্রশংসাও করতে ভুলেননি নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে কৃতিত্ব অবশ্য দিতে হবে। ব্যাটিংটা খুব ভাল করেছে তারা। ইনিংসের গতিও নিয়ন্ত্রণ করেছে দারুণভাবে।’ অবশ্য এমন জয়ের পরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখতে রাজি নন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মূলত বাংলাদেশকে পেছনেই রাখতে চান তিনি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যখন আবারও মুখোমুখি হব সেটা পুরোপুরি নতুন একটা ম্যাচ। বাংলাদেশকেও সে ম্যাচটা নতুন করেই শুরু করতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের দলে তখন পরিবর্তন আসবে। আমাদের হাতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। সুতরাং এটা আমাদের দলকে নতুন করে সংগঠিত হতে সহায়তা করবে।’ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার পরই বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে চাই। এর আগের ম্যাচেই আমাদের জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি। তবে আমি মনে করি, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যেভাবে খেললাম, সেভাবে খেলতে পারলে আমরা নিউজিল্যান্ডকেও পরের ম্যাচে হারাতে পারব।’ সেই জয়ের স্বাদ মিলে গেছে। তাতে ভীষণ খুশিও অধিনায়ক। এ জয়ের সঙ্গে র‌্যাঙ্কিং ভাবনাও মাথায় ছিল বলেই জানান মাশরাফি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘ম্যাচটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা জানতাম, যদি জিততে পারি তাহলে ছয় নম্বরে (র‌্যাঙ্কিং) উঠে আসব। শুধু তাই নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের লড়তে হবে। সেক্ষেত্রে এই জয় তাদের বিপক্ষে আমাদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে।’ তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ৯ জুন খেলা রয়েছে সেই খেলাটি এত সহজ হবে না বলেই মনে করছেন মাশরাফি। কারণ তখন যে আরও ক্রিকেটার নিউজিল্যান্ড দলে যোগ হবে, ‘আমি মনে করি টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট দলে যোগ দেয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের বোলিং লাইনআপ আরও শক্ত হবে। এছাড়া কেন উইলিয়ামসন-মার্টিন গাপটিলও ফিরবেন ব্যাট হাতে। সেক্ষেত্রে সবকিছু সহজ হবে না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘তারপরও একটা জয় সবসময়ই দলকে অনুপ্রাণিত করে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা পাকিস্তান-ভারতের সাথে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়তে হবে। তো এগুলো সবই আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে, সাহায্য করবে।’ শেষে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং নিয়ে মাশরাফি বললেন, ‘অভিজ্ঞতা কেনা যায় না। মুশফিক ও রিয়াদ যেভাবে ব্যাটিং করেছে তা অবিশ্বাস্য। আমরা এরকম পরিস্থিতিতে অনেক ম্যাচ হেরেছি। তাই ভয়টা ছিলই। কিন্তু তারা দারুণ ব্যাটিং করেছে।’ তাদের দুইজনের এ দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ইতিহাসও গড়ল।
×