ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় দিবস পালন, দেশী সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতে হবে, প্রতি বছর সেশন ফি নয় ॥ হাইকোর্টের রায়

ইংরেজী মাধ্যম স্কুল চলবে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৬ মে ২০১৭

ইংরেজী মাধ্যম স্কুল চলবে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ ধরনের স্কুল পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জাতীয় দিবস পালন, দেশীয় সংস্কৃতিসহ বাংলাকে গুরুত্ব দিতে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এ রায়ে। বৃহস্পতিবার সেশন ফি ও ভ্যাট আদায় নিয়ে দুটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মোঃ বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অনিক আর হক ও জেআর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর। পরে বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এ রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে নির্দেশনাগুলো পরিপত্র আকারে জারি করে সব ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে কি-না তা প্রতি তিন মাস পরপর প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলোÑ বেসরকারী স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে। অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ওই অভিভাবক প্রতিনিধির বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ করতে হবে। তাতে মালিকপক্ষের কোন প্রাধান্য থাকবে না। রায়ে আরও বলা হয়েছে, এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফির নামে কোন ‘ফি’ আদায় করা যাবে না। ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে ম্যানেজিং কমিটি। তাতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে। ইংরেজী মাধ্যমের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং প্রত্যেক অভিভাবককে ওই রিপোর্ট সরবরাহ করতেও বলা হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। এছাড়া প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালী কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতেও নির্দেশনা এসেছে রায়ে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত এখন যেভাবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে তারচেয়ে ভালভাবে শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার চর্চা করাতে হবে, যাতে তারা শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে। অভিভাবকদের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল হাইকোর্ট ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশ দেয়। তার আগে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক। ওই আবেদনের শুনানি করে আদালত রুল দেয়। ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। দুটি রুলের ওপর একসঙ্গে চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ রায় দেয়।
×