ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কট বা দুঃসময়ে কবি বাঙালীর অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস

সাম্য ও সম্প্রীতির বার্তায় নজরুলজয়ন্তী উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ মে ২০১৭

সাম্য ও সম্প্রীতির বার্তায় নজরুলজয়ন্তী উদযাপন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সৃষ্টির আলোয় একই সঙ্গে মানবতা ও প্রেমকে ধারণ করেছিলেন। কবিতা কিংবা গানে ছড়িয়েছেন সাম্যের বাণী। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র সৃষ্ট শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছিলেনÑ ‘সকল কালের সকল দেশের/সকল মানুষ/এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো/এক মিলনের বাঁশী’। অন্যদিকে অন্যায় কিংবা শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে তার কলম। মানবতার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে মানেননি জাত-পাত বা ধর্মের সীমারেখা। মানুষের মাঝে সাম্য ও সম্প্রীতির ছড়িয়ে দিতে উচ্চারণ করেছিলেনÑ গাহি সাম্যের গান/মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান/নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি ...। এভাবেই মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অনুপ্রেরণার অনন্ত উৎস হয়েছে নজরুলের গান কিংবা কবিতা। দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও বিপ্লবের কবি হিসেবে আপন আসনটি পেতেছিলেন বাংলা শিল্প-সাহিত্যের অনুরাগীদের মনের কোটায়। সঙ্কট বা দুঃসময়ে আজও তিনি বাঙালীর অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এগারোই জ্যেষ্ঠ বৃহস্পতিবার ছিল গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াকু কবির ১১৮তম জন্মজয়ন্তী। বাংলা সাহিত্য ও শিল্পের নতুন পথের দিশারি এই কবির জন্মদিনে হৃদয় উৎসারিত ভালবাসার সঙ্গে কবির অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী চেতনার অনুরণন ছিল জাতির অন্তরে। উগ্রবাদের আস্ফালনে ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ে যখন আক্রান্ত হচ্ছে দেশ তখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতায় আবির্ভূত হয়েছেন নজরুল। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, বক্তার কথায় কিংবা নৃত্যের মুদ্রায় সাম্য ও সম্প্রীতির বার্তায় উদ্্যাপিত হলো নজরুলজয়ন্তী। সকাল থেকেই শুরু হয় মানবতার কবিকে অঞ্জলি অর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শাহবাগের চারুকলা অনুষদসংলগ্ন কবির সমাধি। ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বর্ণিল নানা অনুষ্ঠানে নৃত্য-গীত, কবিতা ও কথায় স্মরণ করা হয় কবিকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি উদ্যাপনের পাশাপাশি ছিল নানা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন। জাতীয় পত্রিকাগুলো গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে নজরুলজয়ন্তীর বিশেষ প্রতিবেদন। একইভাবে সরকারী-বেসরকারী টেলিভিশনে ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে নজরুলজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। সব মিলিয়ে দিনটি ছিল নজরুলময়। অনুরাগীদের অন্তরের গহিন ভালবাসা ও বন্দনায় কেটেছে মানবতা ও সাম্যের কবির জন্মজয়ন্তী। দিনভর বর্ণিল আয়োজনে ঢাকাসহ সারাদেশে হৃদয়ের উষ্ণতায় উদ্যাপিত হয়েছে জাতীয় কবির জন্মদিন। আর কবির জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতায় শহর ঢাকা হয়ে উঠেছিল নজরুলময়। প্রতিটি আয়োজনে ছিল নজরুলকে নতুন করে আবিষ্কারের অবিরাম প্রচেষ্টা। এ বছর জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী উদ্্যাপনের মূল আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীতে। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজন করে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেনÑ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কবির নাতনি খিলখিল কাজী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান। অনুষ্ঠানে ‘সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল’ বিষয়ে স্মারক বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। আলোচনা শেষে শিল্পকলা একাডেমি ও নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিবেশনায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফুলে ফুলে আবৃত কবির সমাধি পুব আকাশে সূর্যোদয়ের পরপরই শুরু হয় জন্মদিনে কবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন পর্ব। ভোর থেকেই জাতীয় কবির সমাধিসৌধে নেমে আসে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা সর্বস্তরের মানুষের ঢল। কবি পরিবারের পক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন তার দুই নাতনি খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। সমাধিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এছাড়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করে যুবলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, জাসাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাসদ মার্কসবাদী, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার, নজরুল ইনস্টিটিউট, শিশু একাডেমি, নজরুল একাডেমি। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে খিলখিল কাজী সারা বিশ্বে নজরুলের রচনা ছড়িয়ে দিতে তার রচনাবলীর যথাযথ অনুবাদের দাবি জানিয়ে বলেন, দাদু অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে শিখিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা কি তাকে সত্যি অনুধাবণ করতে পেরেছি? চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠে আমরা কি তার উত্তরসূরি হতে পেরেছি?’ ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো কবি নজরুলও বাঙালীর নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে মিশে আছেন। তিনি প্রাত্যহিক জীবনে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের নিরন্তর প্রেরণার উৎস। রুহুল কবির রিজভী বলেন, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নজরুলের শব্দমালা আমাদের প্রেরণার উৎস। সমাধিসৌধের পাশে আলোচনা পর্বের আয়োজন ছিল। এতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। নজরুলজয়ন্তীর নানা আয়োজন নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে ছিল বহুমাত্রিক আয়োজন। কোথাও পঠিত হয়েছে কবির সৃষ্টির অমর কবিতা, কোথাও বা পরিবেশিত হয়েছে নজরুলসঙ্গীত কিংবা নজরুলের গানের সুরে নাচ, আবার কোথাও বা অনুষ্ঠিত হয়েছে নজরুলের সৃষ্টি ও দর্শননির্ভর আলোচনা। সান্ধ্যকালীন আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট নৃত্য-গীত কবিতায় উদ্্যাপন করেছে জাতীয় কবির জন্মদিন। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে এ আয়োজনে মুখ্য আলোচক ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামী। আলোচনা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন খিলখিল কাজী, সুমন চৌধুরী, শহীদ কবির পলাশ, বিজন মিস্ত্রি, রেবেকা সুলতানা, লীনা তাপসী খান, ফাতেমা তুজ জোহরা ও শারমিন সাথী ইসলাম। নজরুলের আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ ও মাহিদুল ইসলাম। বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘আজ নজরুল চর্চার বিশেষ প্রয়োজন’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। একক বক্তৃতায় এম এম আকাশ বলেন, নজরুলের নিজস্ব ধর্ম প্রচলিত ট্র্যাডিশানাল ইসলাম বা হিন্দু ধর্ম ছিল না। তা ছিল মূলত মানবধর্ম এবং বিশেষভাবে শোষিত-নির্যাতিত-উৎপীড়িত মানুষের ধর্ম। বাইরের প্রকাশ বা রূপ দেখে অনেক গোঁড়া মুসলমান যেমন নজরুলকে ইসলামের খাঁচায় পুরে বিচার করতে চেয়েছিলেন, তেমনি আবার তার হিন্দু ধর্মের রূপকগুলো অবাধে ব্যবহারের কারণে তাকে ‘কাফির’ বলতেও অনেকে কুণ্ঠিত হননি। তিনি বলেন, আমাদের বুঝতে হবে তিনি ছিলেন হিন্দু-মুসলমানের নিজ নিজ সংস্কৃতির যা কিছু মহৎ এবং ভাল তার পারস্পরিক স্বীকৃতি ও এক ধরনের মিলনের প্রতীক। আজকে বাংলাদেশে ধর্মের নামে যে বাড়াবাড়ি আমরা দেখি সেখানে নজরুলের জীবনচর্চা ও লেখনী এক ভারসাম্য স্থাপনকারী মহৌষধরূপে কাজ করতে পারে বলে মনে হয়। তাই নজরুলচর্চার প্রয়োজন আজ আরও বেড়েছে। সচেতনভাবে আমাদের এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু নজরুলজয়ন্তী অনুষ্ঠান করে ক্ষান্তি দিলে হবে না। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, নজরুলের জীবন ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয়-সামাজিক-রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সাধারণ মানুষের উত্থানকে সমর্থন করেছেন, জয়গান গেয়েছেন। সর্বমানবিক মঙ্গলের কবি নজরুলকে আমরা আজও প্রাসঙ্গিকরূপে অনুভব করি আমাদের সাহিত্যে ও জীবনে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আবৃত্তি সংগঠন হরবোলা আয়োজন করে নজরুল-আবৃত্তি সন্ধ্যা। হরবোলার পরিচালক মজুমদার বিপ্লবের নির্দেশনায় সংগঠনের নতুন এবং পুরনো শিল্পীদের কণ্ঠে প্রথমেই শোনা যায় ‘বাংলাদেশ’ কবিতাটি। এর পর একে আবৃত্তি করা হয় ‘উদার ভারত’, ‘জাতের বজ্জাতি’, ‘ক্ষুদিরামের মা’, ‘বীরাঙ্গনা’, ‘রাজা-প্রজা’, ‘কুলিমজুর’, ‘আমার কৈফিয়ত’, ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’, ‘মানুষ’, ‘গানের আড়াল’, ‘সাম্যবাদী’, ‘নারী’, ‘ক্ষমা করো হযরত’, ‘হে রুদ্র আদেশ দাও’ ও ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। ক্রমান্বয়ে কবিতা উপস্থাপন করেন ঝুমি রহমান, রুকাইয়া জহির, রাজিয়া কবির, শুক্লাদাশ গুপ্তা, জহির রায়হান, স্বপ্নীল স্বপন, জোবায়দা লাবনী, রুশনান মূর্তজা এবং মজুমদার বিপ্লব। শিশু একাডেমির আয়োজনে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেনÑ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম। পরে শিল্পী ফেরদৌস আরার সঙ্গীত পরিবেশনা। এছাড়াও শিশু একাডেমির শিশুদের সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা। বিকেলে চ্যানেল আই চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক-চ্যানেল আই নজরুল মেলা। এতে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় শিল্পী শাহীন সামাদকে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ মেলায় পরিবেশিত হয় নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনায় নজরুলসঙ্গীত, নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য, আবৃত্তি, নজরুল রচনাবলী থেকে পাঠসহ আরও অনেক কিছু। কবির জন্মদিন উদ্্যাপন উপলক্ষে সন্ধ্যায় শিশু একাডেমি আলোচনাসভা পাশাপাশির বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরার সঙ্গীত পরিবেশার আয়োজন করেন। এছাড়াও পরিবেশিত হয় শিশু একাডেমির শিশুদের সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য। চট্টগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রামে শোভাযাত্রা, আলোচনাসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মসূচী ছিল। প্রশাসনিকভাবেও যথাযোগ্য আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালিত হয়। নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ রুহুল আমিন। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার মোঃ সাহাবউদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, শিক্ষাবিদ হাসিনা জাকারিয়া, সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাইন হোসেন প্রমুখ। এর আগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোঃ হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার নেয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। সে অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ মিনিটের জন্য নজরুলের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী। ডিসি হিলে সম্মিলিত নজরুলজয়ন্তী উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে পরিবেশিত হয় সংগঠনভিত্তিক দলীয় সঙ্গীত, নৃত্য এবং আবৃত্তি। বিকেলে এ মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করে ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ ও কুসুম ললিতকলা একাডেমি। নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যথাযোগ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় জাতীয় কবির প্রতি। নজরুল জন্মজয়ন্তী ও সংগঠনের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘শ্রুতি অঙ্গন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত হয় নজরুল সঙ্গীতানুষ্ঠান ও গুণীজন সংবর্ধনা। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক আবুল হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাট্যজন আহমদ ইকবাল হায়দার। চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক বেনু কুমার দের সভাপতিত্বে সম্মাননা প্রদান করা হয় বিশিষ্টজনদের। সংবর্ধিতরা হলেনÑ নজরুল সঙ্গীত শিল্পী মৃণাল ভট্টাচার্য, জয়ন্তী লালা, মোঃ আবু তাহের, অরুণিমা ইসলাম, তাপস কুমার বড়ুয়া, মোঃ হেলাল উদ্দিন ও খ্যাতিমান তবলাবাদক দেবু চৌধুরী।
×