ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৬ মে ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আবারও নাম জপতে হচ্ছে সেলিম ওসমানের। হ্যাঁ, নারাণগঞ্জের ‘ন্যায় নীতির মা-বাপ’ ‘পুরুষোত্তম’ সেলিম ওসমান। সাংসদের ‘গুণাগুণ’ সম্পর্কে সারা বাংলা অবগত। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এনে পি আর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছিলেন পরীক্ষিত এই ‘বীর।’ সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। একজন শিক্ষককে একজন নিরীহ মানুষকে এভাবে কেউ অপদস্ত করতে পারে? নজিরবিহীন ঘটনা প্রত্যক্ষ করে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল জাতি। সারা দেশের মানুষ সেলিম ওসমানকে ছিঃ ছিঃ করেছেন। পরবর্তীতে শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও একই কথা জানিয়ে দেয়। তাতে কী? সেলিমকে কেউ ছুঁতে পারেনি। বরং তার হুঙ্কার শুনতে হয়েছে। ইউটিউবে সার্চ দিলে ‘মিষ্টভাষী’ জননেতাকে এখনও পাওয়া যায় বৈককি! আহা, কী বলা তার! আহা কী চলা! অন্যদিকে শ্যামল কান্তি ‘চোর ডাকাত।’ ‘সাধু’ সেলিম ওসমান বুধবার তাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। এবার শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে অভিযোগÑ তিনি ঘুষখোর। আইন আদালতও যারপরনাই প্রস্তুত ছিল। মুহূর্তেই তাকে কারাগারে চালান করা হয়। নতুন এই নাট্যাংশ দেখে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হতাশ। রাজধানী ঢাকায়ও বইছে প্রতিবাদের ঝড়। প্রতিবাদকারীরা বলছেন, সেলিম ওসমানের কান-ই নেই। একজন শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করাতে বাধ্য করে তিনি মূলত নিজের কান খুইয়েছেন। দুই কান কাটা পড়েছে তার। কান উদ্ধার করতেই শ্যামল কান্তিকে হেনস্তা করা হচ্ছে। এটা কাউকে বলে দিতে হয় না। সবাই বোঝেন। ব্যথিত ক্ষুব্ধ মানুষ বলছেন, শ্যামল কান্তি বাংলাদেশের অতি সাধারণ অসহায় জনগণের প্রতিনিধি। একজন শিক্ষক তিনি। তার প্রতি সেলিম ওসমান যে অন্যায় করছেন তা বাংলাদেশের জন্য লজ্জ্বার। সামান্য এক সেলিমের জন্য দেশকে আর কত লজ্জ্বায় পড়তে হবে? জানতে চান তারা। ফেসবুকে সমালোচনার পাশাপাশি তারা রাজপথে নামার কর্মসূচীও ঘোষণা করেছেন। একটার পর একটা ঘটনার পরিকল্পনাবিদ সেলিম ওসমানকে গ্রেফতার ও সম্মানিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চলুক। জয় হোক সাধারণের। গরমের কথায় আসা যাক। এ কী গরম রে বাবা! টেকা যাচ্ছে না একদম। সারা দেশ উত্তপ্ত। বৃক্ষহীন ঢাকার অবস্থা আরও খারাপ। সকাল হতে না হতেই জানালা দিয়ে তীরের ফলার মতো ঘরে ঢুকে পড়ছে সূর্য। শরীরকে বিদ্ধ করছে। ভোরের সেই মিষ্টি আলো নেই। যেন চুলোর আগুন। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। কাজ হচ্ছে না কোন। এত গরম বাতাস! স্নান করার পানিও গরম। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শীতল হবেন? সে সুযোগ নেই। আর গা ধুয়ে বাইরে বের হলে তো আবার স্নান। ঘামে ভেজা শরীর। জামা শরীরের সঙ্গে লেপ্টেই থাকছে সারাক্ষণ। এভাবে একদিনে কতবার যে স্নান করতে হচ্ছে, কে গুণে রাখবে? সম্ভব? আবহাওয়ার অফিস প্রতিদিন গরমের হিসাব দিচ্ছে। সাধারণ মানুষও নানাভাবে এই গরমকে ব্যাখ্যা করছেন। গরম। কত গরম? বুঝিয়ে বলার চেষ্টা হচ্ছে। তবে শিল্পী শালিম হোসেন সাজুর বলাটা একটু ব্যতিক্রম বৈকি। গরম বোঝাতে তার করা একটি ক্যারিকেচার খুব জনপ্রিয় হয়েছে ফেসবুকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পাস করা শিল্পী ঢাকায় বেশ প্রতিষ্ঠিত এখন। স্যাটায়ারটা খুব ভাল করতে পারেন। ব্যাঙ্গাত্মক শিল্প ভাষায় সমাজের অসঙ্গতির কথা বলেন। কৌতুক করতে জুড়ি নেই। গরম নিয়েও দারুণ কৌতুক করেছেন। এ জন্য বেছে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যকে। ফটো ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, আগুন গরমে এমনকি কংক্রিটের ভাস্কর্য শিশার মতো গলে গলে পড়ছে। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্য নিয়ে তার এই উপস্থাপনা। দেখে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষও নিজের অজান্তে হেসে উঠছেন। আর শিল্পী করছেন সতর্ক। বলছেন, প্রকৃতির প্রতি এখনই সদয় না হলে ভবিষ্যতে বাস্তব হয়ে ধরা দিতে পারে তার এই ছবি! বৃহস্পতিবার ছিল ১১৮তম নজরুলজয়ন্তী। সেই নজরুল যিনি ঘোষণা করে বলেছিলেনÑ ‘আমি ত্রাস সঞ্চারি ভুবনে সহসা সঞ্চারি ভূমিকম্প।/ ধরি বাসুকির ফণা জাপটি,/ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা শাপটি!/ আমি দেব-শিশু, আমি চঞ্চল,/ আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্বমায়ের অঞ্চল...।’ কবির এমন বিদ্রোহ আজও বুকে ধারণ করে আছে বাঙালী। এখনও বিস্ময়কর আলো হয়ে পথ দেখিয়ে চলেছেন নজরুল। তাই বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উদ্যাপিত হয়েছে বিশেষ দিবস। এ উপলক্ষে মুখর ছিল রাজধানী ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গন। বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ছায়ানট দুদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের আয়োজন করে। কথন, গান, পাঠ, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় কবিকে। বাংলা একাডেমি বিকেলে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নজরুলবিষয়ক একক বক্তৃতার আয়োজন করে। একক বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। নজরুল একাডেমিও শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। এছাড়াও চ্যানেল আই কার্যালয়ের সামনে আয়োজন করা হয় নজরুল মেলার।
×