ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ষোড়শ সংশোধনীর আপীল শুনানিতে ৩ এ্যামিকাস কিউরির অভিমত

সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলই যথাযথ ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ মে ২০১৭

সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলই যথাযথ ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অনুসারে কোন বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে এবং তাকে অপসারণের জন্য সংসদে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে তখন কী হবে বলে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)। এই শূন্যতা তাকে ভাবিয়ে তুলছে বলেও জানান তিনি। সুপ্রীমকোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার এমন প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। এদিন এই মামলায় আপীল বিভাগ নিযুক্ত ১২ জন এ্যামিকাস কিউরির (আদালতকে সাহায্যকারী) মধ্যে তিনজন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এই তিনজনের মতে বিচারক অপসারণে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলই যথাযথ ব্যবস্থা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের সাত বিচারপতির আপীল বেঞ্চে ষোড়শ সংশোধনী মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। পরে আগামী রবিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন আপীল বিভাগ। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত আপীল শুনানির সপ্তম দিনে বৃহস্পতিবার এ মামলার এ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। সকাল নয়টা পাঁচে আদালত বসলে এ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। টানা দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় বক্তব্য উপস্থাপনের পর আরেক এ্যামিকাস কিউরি, প্রবীণ আইনজীবী টিএইচ খান নিজের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে আদালতের কাছে অনুরোধ জানান তাকে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেয়ার জন্য। আদালত সঙ্গে সঙ্গে তাকে সে সুযোগ দিলে টিএইচ খানের পক্ষে তার ছেলে আফজাল এইচ খান লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অল্প সময়ে টিএইচ খান তার বক্তব্য শেষ করলে আবারও লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ। এরপর বেলা ১১টায় বিরতিতে যায় সুপ্রীমকোর্ট। বেলা সাড়ে ১১টায় বিরতির পর আবার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বক্তব্য দেন। সবশেষে ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানির শুরুর দিকে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যের এক পর্যায়ে তার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বিচারক অপসারণের ক্ষেত্রে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্কট নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সবচেয়ে পবিত্র আইন (সংবিধান) সংরক্ষণ করি। দেখা গেল সেখানে এমন কিছু সন্নিবেশিত হলো, যাতে শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তখন কী হবে? তখন জুডিসিয়ারি কী করবে? পার্লামেন্টে টু থার্ড মেজরিটি (দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) না থাকলে ওই পরিস্থিতিতে কোন বিচারকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে তখন কী হবে? আমাকে এ বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে।’ ষোড়শ সংশোধনী যে সংসদে পাস হয়েছে সে সংসদ যে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনকেই অবৈধ বলে বক্তব্য দিয়েছেন প্রবীণ আইনজীবী ও অবসপ্রাপ্ত বিচারপতি টিএইচ খান, তিনি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। যে জিয়াউর রহমানের আমলে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি প্রবর্তন হয়, তার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন টিএইচ খান। আদালতে বাবার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করার পর আফজাল এইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনি যে সাবমিশন দিয়েছেন সেটি হলো, হাইকোর্টের যে রায় সেটা বহাল রাখার জন্য। ওই রায়ে বলা হয়েছে ষোড়শ সংশোধনী ভয়েড এবং আল্ট্রাভায়ার্স অর্থাৎ সংবিধানের সংঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটাকে বাতিল করে দেয়াটাই শ্রেয়।’ ষোড়শ সংশোধনীর অন্তর্নিহিত কিছু বিষয় আছে উল্লেখ তার পরিণতি কি হতে পারে, ভবিষ্যতে কি হতে পারে, বর্তমানে কি হতে পারে তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন টিএইচ খান। সেখানে বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়টি সেটেলড না করে ষোড়শ সংশোধনী আলোচনা ঠিক না। এটাকে প্রাসঙ্গিকভাবে দেখতে হবে। একটি বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী যেটাকে বলা হচ্ছে এবং এটি পাস করেছে যে সংসদ, সেই সংসদ যেভাবে নির্বাচিত হয়েছে সে নির্বাচনটাই বৈধ না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলে আসছে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি তারা বাতিল করেনি। করেছে আদালত। ত্রয়োদশ সংশোধনী আসলেই আদালত বাতিল করেছিল? আর যদি ত্রয়োদশ সংশোধনী থেকে থাকে, এখনও বহাল থাকে তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর যে রায় দিয়েছেন ষোলো মাস পরে তখন তার (সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক) শপথ ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবসরে যাওয়ার ষোলো মাস আগে তিনি যখন শর্ট অর্ডার দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দশম এবং একাদশ নির্বাচন হওয়া উচিত বলে বলেছিলেন। সেটা মূল রায়ে ছিল না। ওই রায়ের কোন বৈধতা নেই। কারণ ওই রায়টা যখন দিয়েছেন, তখন তিনি বিচারক ছিলেন না। বিচারক হিসেবে তিনি রায় দেননি।’ টিএইচ খান আরও বলেন, ‘ওই রায়ে যে দুজন বিচারপতি স্বাক্ষর করেছেন তারাও এ কাজটি ঠিক করেননি এবং ওই স্বাক্ষরটাও গ্রহণযোগ্য না। বাকি চারজন যারা ছিল তাদের মধ্যে বর্তমান প্রধান বিচারপতি আলাদা রায় দিয়েছেন এবং বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এবং বিচারপতি ইমান আলী আলাদা রায় দিয়েছেন। উনারা ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ আইন বলে উনাদের রায়ে উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন হলো ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বাতিল করল?’ এরপর টিএইচ খান পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘মজার বিষয় হলো পঞ্চদশ সংশোধনী যেদিন পাস হয়েছে, তারপরে কিন্তু রায় প্রকাশ হয়েছে। রায় প্রকাশের আগেই সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে পাস করেছে। অথচ সরকার বলেছে, এটা আদালত বাতিল করেছে আমরা করিনি।’ সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাইলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করে সেখানে একটা নমিনাল বডি না করে সেখানে একটা ফাংশনাল বডি করে ক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিত বলে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন টিএইচ খান। টিএইচ খানের বক্তব্য শেষ হলে আবার শুনানি শুরু করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। শুনানিতে তিনি বিচারপতিদের নিয়ে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের করা মন্তব্য তুলে ধরেন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন উদ্বৃত করে আদালতে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘তোরে জজ বানাইছে কেডা’ পত্রিকায় এরকম দেখেছি। যারা সংসদে দাঁড়িয়ে এরকম কথা বলে তাদের হাতে এটা (বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা) ছেড়ে দেবেন? তখন কি জুডিসিয়ারির স্বাধীনতা থাকবে? সুপ্রীমকোর্টের জজ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সদস্যরা আলোচনা করেছে। কিন্তু স্পিকার টু শব্দ করেনি।’ শুনানিতে তিনি আরও বলেন, ‘বলছি না আপনাদেরও (বিচারপতিদের) ত্রুটি নেই, দোষে-গুণে মানুষ। যে রায়ের (ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়) কথা বলছি, সেখানে দুটি শব্দ বাদ দিয়ে দেবেন আশা করছি।’ বিচারপতিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে ক্লাসের হচ্ছেন আপনারা। শিক্ষাদীক্ষায় সম্মানে আপনারা ক্লাসে। আপনাদের সম্মান থাকবে না? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে না? তারা (সাংসদরা) আপনাদের নিয়ে এরকম মন্তব্য করে?’ ব্যারিস্টার রোকন বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসের ব্যক্তিদের কারা অপসারণ করে? পুলিশকে কারা করে? সেক্রেটারিদের কারা করে? আপনি? সংসদ? কেউ না। তাদের উপরিস্থরা রিমুভ করে। অর্থাৎ সহকারী সচিবদের তদন্ত করে যুগ্ম সচিবরা। পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। মিলিটারিদের তাদের ডিসিপ্লিনারিতে আছে। তাহলে আপনাদেরটা কেন পার্লামেন্টে যাবে। সচিব, পুলিশ এটা তো সংসদে যাচ্ছে না। তাহলে এটা কেন?’ রোকন উদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল না থাকলে এখানে অরাজকতা হবে। আর এটা (ষোড়শ সংশোধনী) যদি হয়ে যায় তাহলে হাইকোর্টের জজদের তো আপনি (প্রধান বিচারপতি) কিছু বলতে পারবেন না। ওনারা যদি ১১টায় আসে তখনও কিছুই বলতে পারবেন না। অথবা খাস কামরায় কোন ব্যক্তির সঙ্গে যখন কথা বলবেন, তখন সংসদ কি দেখবে? এটা সংসদ জানবেও না। তাকে (সংসদকে) কে জানাবে? এরপর শুনানিতে সবশেষে অসমাপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কোন বিচারকের বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ উত্থাপন হয় তাহলে জুডিসিয়ারি তদন্ত হবে এবং সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে। এখানে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব সমস্ত আইনকানুন রয়েছে, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপ বা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে যে সমস্ত রুলস দেখা যাচ্ছে, সব জায়গায় এখন জুডিসিয়ারি যে কম্পিটেন্ট এবং তাদের যে এ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং তাদের যদি কোন ডিসিপ্লিনারি এ্যাকশন প্রয়োজন হয় ওইটা তারা নিজেরাই করবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানেও সে রকম একটা পদ্ধতি চালু আছে যা সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। সুতরাং তারাই এটা বিবেচনা করবে। পার্লামেন্টারি রিমুভাল কোন দেশেই কার্যকর হতে পারছে না। ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াতেও। সেখানে আরও বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয় এ নিয়ে। সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘সারা দুনিয়াজুড়ে আমরা যে অবস্থা দেখছি, তাতে বিচারকদের অসদাচারণের কোন ঘটনা যদি ঘটে তাহলে সেটা জুডিসিয়ারি ঠিক করবে। সেটাই হবে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের যে সমস্ত অভিজ্ঞতা আছে সেগুলা আমি তুলে ধরেছি। এখন এটা বিবেচনার বিষয় আদালতের।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। এখন মতামত দেবেন আদালত। বেশিরভাগ দেশই সংসদ থেকে ফিরে এসেছে। তারা জুডিসিয়াল কাউন্সিলের ওপরই দায়িত্ব দিয়েছে। যদি কোন জাজ ভুল করে তার বিচার জুডিসিয়ারিই করবে।’ ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের সময় আপনারা এটি সংসদের হাতে কেন দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে এম আমীর উল ইসলাম বলেন, ‘তখন তো আমরা জুডিসিয়ারি গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের প্রধান বিচারপতি কে হবেন সেটাও বঙ্গবন্ধু ফেরার পর ১০ জানুয়ারি, ১১ জানুয়ারি আমরা প্রধান বিচারপতি খুঁজছি। কাউকে তো শপথ নিতে হবে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে সায়েমকে নিয়ে আসলাম। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি তো সামরিক শাসকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন। সময়ের কারণে সে সময়ে আমরা জুডিসিয়ারি গড়তে পারিনি। তখন আপতত সংসদের হাতে দিয়েছি। কেননা তখন সংসদ ছাড়া আর কিছু গড়ে ওঠেনি।’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময় চতুর্থ সংশোধনী হলে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যাস্ত হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়। এর বিরুদ্ধে কয়েকজন আইনজীবী আদালতে গেলে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্টে ওই রায় আসে। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৮ মে পেপারবুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপীল শুনানি শুরু হয়। ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায় আদালতে পড়ে শোনান। এরপর ওইদিনই আদালতে চারজন এ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। এই চারজন হলেনÑ সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।
×