ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লোনাপানি বন্দী দুই গ্রাম

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২৬ মে ২০১৭

লোনাপানি বন্দী দুই গ্রাম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৫ মে ॥ লালবুড়ির গুদির খালের পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় নিজামপুর ও পুরান মহিপুর গ্রামের ৫০০ পরিবার লোনাপানিতে বন্দী হয়ে পড়েছে। খালের একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করা হয়েছে। পানি চলাচলের একমাত্র কালভার্টের সামনে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। লোনাপানি নামতে না পারায় আবাদি জমির ঘাসসহ খড়কুটো সব পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি পচে লালচে রং হয়ে গেছে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের হাঁস-মুরগি মরে গেছে। ব্যবহারের পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। এক-দেড় কিলোমিটার দূর থেকে রান্না, গোসলসহ ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করতে হয়। জমে থাকা লোনাপানি খেয়ে গবাদিপশুর ডায়রিয়া লেগে আছে। এমনিতেই নিজামপুর গ্রামসংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জলোচ্ছ্বাসে টানা তিনটি বছর আমন ফসল ফলাতে পারেননি এসব কৃষক। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের জন্য এলাকার মানুষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে দুষছেন। এখন আবার এক প্রভাবশালী মেম্বার একমাত্র খালটি দখল করে মাছের ঘের করায় পানি প্রবাহের পথ আটকে দেয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। বসবাসের অবস্থাও নেই। অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। মানুষের জীবন-জীবিকা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। গ্রামের পানি প্রবাহের একমাত্র খাল দখল করে মাছ করায় শত শত পরিবারে দুর্বিষহ অবস্থা নেমে এসেছে। কৃষকরা দেখান, এখন বিল শুকনো থাকার কথা। অথচ লোনাপানি আটকে সবকিছুতে পচন ধরেছে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান হাওলাদার জানান, একমাত্র খালটি দখল করে মাছ চাষ এবং কালভার্টের সামনে পানি নামার পথ মাটি ভরাট করে আটকে দেয়ায় তাদের এখন পানি বন্দীদশায় ফেলেছে। লোনা পানিতে সব সয়লাব। গবাদিপশুর কোন খাবার নেই। ব্যবহারের পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। অধিকাংশ কৃষকের হাঁস-মুরগি মারা গেছে। রান্নাসহ ব্যবহারের কোন পানি নেই। বাচ্চারা ওই পানিতে নামলে খুজলি-প্যাচড়া হয়। দায় ঠেকে আপাতত বাড়ি ছেড়েছেন। একই কষ্ট মাহবুব হাওলাদারের। এসবের প্রতিবাদ করায় এলাকার যুবক জাফরকে মঙ্গলবার সকালে দখলদার মেম্বার আবদুর রব মিয়ার ছেলে সেরাজ মারধর করেছে। এভাবে দুটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী থাকলেও কেন পানি চলাচলের পথ আটকে জনদুর্ভোগ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে মেম্বার আবদুর রব বলেন, আমি আটকাই নাই। চেয়ারম্যান আটকে রাখতে বলেছেন। চেয়ারম্যান আবদুস সালাম আকন জানান, জনস্বার্থ ক্ষুণœ করে কাউকে তিনি এমন কাজ করতে বলেননি। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজামপর গ্রামে গিয়ে কালভার্টের সামনের বাঁধ কেটে জলাবদ্ধতা নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল চন্দ্র দাস জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
×