ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৬ মে ২০১৭

বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী হামলা

জঙ্গী বা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যতই শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, তাদের হীন কর্মকা- তথাপি থেমে থাকছে না। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও সন্ত্রাসীরা অবলীলায় হামলা চালিয়ে, এমনকি আত্মঘাতী হয়েও মানুষ হত্যা করছে। কখন কোথায় আক্রমণ হতে পারে, তার পূর্বাভাস মেলে না বলেই ঘাতকরা অবলীলায় সন্ত্রাস চালু রাখতে পেরেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমনি, তেমনি ব্রিটেনও এই সন্ত্রাস থেকে মুক্ত নয়। প্যারিসে ভয়াবহ কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসবাদ ইউরোপের জন্য যেমনি, তেমনি ব্রিটেনের জন্যও বড় হুমকি হয়ে আছে। ব্রিটেনের ম্যানচেষ্টারে একটি ইনডোর স্টেডিয়ামে মার্কিন পপ তারকা আরিয়ানা গ্রান্ডের কনসার্টে সন্ত্রাসী হামলা তথা বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫৯ জন। সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে কনসার্ট শেষ হওয়ার পরপরই এ বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনায় ব্রিটিশদের মতো বিশ্ববাসীও হতবাক এবং বিস্মিত। এই বিস্ফোরণকে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার বিবেচনা করছে। বিস্ফোরণপরবর্তী দৃশ্য ছিল বিভীষিকাময়। একটি পরিত্যক্ত ঝোলা কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে বিস্ফোরণ ঘটে বলে পুলিশের ধারণা। বিস্ফোরণের সঙ্গে সালমান রমাদান আবেদী নামে লিবীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক জড়িত ছিল। সেও ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে, যেহেতু হামলাটি ছিল আত্মঘাতী। হামলাকারী একজনই ছিল। ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ইনডোর স্টেডিয়াম ম্যানচেষ্টার এ্যারেনা কনসার্ট ভেন্যু হিসেবেও জনপ্রিয়। একসঙ্গে প্রায় একুশ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময় কত দর্শক ছিলেন তার হিসাব পাওয়া যায়নি। পুলিশের বিবেচ্য হচ্ছে, হামলাকারী নিজ সিদ্ধান্তে এই হামলা চালিয়েছে, নাকি কোন নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করেছে তা খতিয়ে দেখা। তবে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট তথা আইএস। অবশ্য যে দেশে যে কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী হামলা হলে আইএস তা সংঘটিত করার দাবি জানিয়ে আসছে। ম্যানচেষ্টারের এই ঘটনা ২০১৫ সালের প্যারিসে হামলার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেখানকার মতো ব্রিটেনও জঙ্গীবাদের হুমকির মুখে রয়েছে। গত বাইশে মার্চ ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারীদের ভিড়ে গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিল এক ব্রিটিশ সন্ত্রাসবাদী। এতে পাঁচজন মারা যায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে ওই সন্ত্রাসী পার্লামেন্টের সামনে দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করেছিল। এই হামলার দায় অবশ্য আইএস বা অন্য কেউ স্বীকার করেনি। হামলাকারী ও তাদের উদ্দেশ্য আজও জানা যায়নি। এর আগে ব্রিটেনে পাতাল রেলে বোমা হামলা হয়েছে। এটা তো বাস্তব যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বহু ঘাঁটি রয়েছে ব্রিটেনে। খোদ বাংলাদেশের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই যুদ্ধাপরাধী একাত্তরের পর থেকে ব্রিটেনে বসবাস করছে। সেখানে তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায়ও লিপ্ত রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার তাদের ফেরত পাঠাতে গড়িমসি করছে। ব্রিটেন থেকে বহু অধিবাসী সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ এসব ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মনে হয় না। আর দু’সপ্তাহ পর আগামী ৮ জুন ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এই হামলার ঘটনা দেশটিতে আতঙ্ক তৈরি করেছে। মূলত সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলেই জঙ্গী রোধ সম্ভব হচ্ছে। ব্রিটেনকেও ভাবতে হবে, কিভাবে সন্ত্রাস নিরোধ করা যায়। নতুবা এর মাত্রা বাড়বে।
×