ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে র‌্যাঙ্কিং ছয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ২৫ মে ২০১৭

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে র‌্যাঙ্কিং ছয়ে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে উঠে এলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বৃত্তটাও পূরণ হলো। বিদেশের মাটিতে সবগুলো টেস্ট প্লেয়িং দলের বিপক্ষে জয়ের অনন্য গৌরব অর্জন করল টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে শক্তিধর নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারানোর মধ্য দিয়ে দারুণ এ সাফল্যের স্বাদ পেল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। কেবল তাই নয়, দুর্দান্ত এ জয়ে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে শ্রীলঙ্কার সমান ৯৩ রেটিং পয়েন্ট (+২) অর্জন করল ম্যাশ-বাহিনী। তবে রেটিংয়ে ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে লঙ্কানদের পেছনে হটিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ষষ্ঠ স্থানে (+১) উঠে এল টাইগাররা। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) আনুষ্ঠানিক নতুন আপডেটের পরই এটি চূড়ান্ত ভাবে দৃশ্যমান হবে। ডাবলিনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭০ রানের ‘ফাইটিং’ স্কোর গড়ে কিউইরা। জবাবে তামিম ইকবাল (৬ চার ১ ছক্কায় ৮০ বলে ৬৫), সাব্বির রহমানের (৯ চারে ৮৩ বলে ৬৫) জোড়া হাফ সেঞ্চুরি এবং মুশফিকুর রহীম (৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪৫ বলে অপরাজিত ৪৫) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে অপরাজিত ৪৬) দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ভর করে ৪৮.২ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সামনে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ রয়েছে, তবে তার আগে নিজেদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের এই জয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগারদের বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টি ছিল বিদেশের মাটিতে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর গত ১৮ বছরে টেস্ট খেলা প্রায় সব দেশের বিপক্ষেই বিদেশে জিতেছে টাইগাররা। একে একে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে হয় নিরপেক্ষ ভেন্যু, নয়তো প্রতিপক্ষের মাঠে। বিদেশে অধরা ছিল কেবল এই কিউইরা। এবার সেই বৃত্তটা পূরণ হলো। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া আগের ৮ জয়ের সব ক’টিই ছিল নিজেদের মাটিতে। টস জিতে বোলিং নেয়া বাংলাদেশ শুরুটা ভালোই করেছিল। এদিনও বল হাতে জ্বলে ওঠেন তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারেই লুক রনকিকে ফিরিয়ে দেন তিনি। টাইগাররা অবশ্য তার আগেই উইকেটের দেখা পেতে পারত। তবে নাসির হোসেন সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেয়ায় সেটি হয়নি। সেনাপতি মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম দুটি বলে কোন রান নিতে পানেননি কিউই প্রতিপক্ষ অধিনায়ক টম লাথাম। তৃতীয় বলটি কব্জির মোচড়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা নাসিরের হাতে পড়েছিল বলটা। তবে সহজ ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ দলে ফেরা আলোচিত এ ক্রিকেটার। মুস্তাফিজের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে পরিণত হন রনকি (২)। এরপর লাথাম ও নিল ব্রুম মিলে দারুণ এক জুটি বেঁধে প্রতিরোধ শুরু করেন। ৫১ বলে ৮ চারে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন কিউই লাথাম। এই সময়ে অবশ্য তার সহজ আরেকটি ক্যাচ ছেড়ে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। অন্যপ্রান্তে ব্রুমও টাইগার বোলারদের বিপক্ষে রানের ফুলঝুরি ছোটান। এই জুটি থেকে আসে ১৩৩ রান। অবশেষে নাসির হোসের বলে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্রুম। কিউইদের সংগ্রহ তখন ১৫৬ রান। ৭৬ বলে ৬৩ রান করেন ব্রুম। এরপরই শুরুর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন নাসির। সর্বোচ্চ ৮৪ রান করা লাথামকে পরিষ্কার বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন তিনি। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিটা ভাংলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় বাংলাদেশ। কোরি এ্যান্ডারসনকে সঙ্গে নিয়ে রস টেলর রানের চাকা সচল করতে চাইলেও বাধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব-মাশরাফি। দলীয় ২০৮ রানে সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন এ্যান্ডারসন। ৩২ বলে ২৪ রান করেন তিনি। এরপর জিমি নিশামকে (৬) তুলে নেন মাশরাফি। খানিক বাদে মিচেল স্যান্টনারকে (০) বোল্ড করেন সাকিব। অপরপ্রান্তে ছন্দ ধরে রাখেন মাশরাফিও। কলিন মুনরোকে (১) ফিরিয়ে কিউইদের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটা ভেঙ্গে দেন টাইগার অধিনায়ক। এরপর ম্যাট হেনরিকে (৫) তুলে নেন রুবেল। তবে ধসের মাঝেও রস টেইলর ছিলেন অবিচল। শেষ পর্যন্ত কিউইদের সংগ্রহ ২৭০Ñএ পৌঁছে দেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। ৫৬ বলে ৬০ রানে অপরাজিত টেইলর। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড ইনিংস ২৭০/৮ (৫০ ওভার; লাথাম ৮৪, রনকি ২, ব্রুম ৬৩, টেইলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, নিশাম ৬, স্যান্টনার ০, মুনরো ১, হেনরি ৫, প্যাটেল ৭*; মাশরাফি ২/৫২, মুস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, নাসির ২/৪৭, সাকিব ২/৪১, মোসাদ্দেক ০/১৪) বাংলাদেশ ইনিংস ২৭১/৫ (৪৮.২ ওভার; তামিম ৬৫, সৌম্য ০, সাব্বির ৬৫, মোসাদ্দেক ১০, মুশফিক ৪৫*, সাকিব ১৯, মাহমুদুল্লাহ ৪৬*, জিতেন প্যাটেল ২/৫৫, বেনেট ১/৪৭, স্যান্টনার ১/৫৩) ফল ॥ বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ মুশফিকুর রহীম (বাংলাদেশ) সিরিজসেরা ॥ টম লাথাম (নিউজিল্যান্ড)
×