ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৫ মে ২০১৭

ব্রিটেনে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে মঙ্গলবারের হামলার পর সারা দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। এতে ২২ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের একজন ছুরিসহ বাকিংহাম প্যালেসের কাছে ধৃত হন। অপর ধৃত ব্যক্তি সন্দেহভাজন হামলাকারী সালমান আবাদির প্রতিবেশী আদেল ফুরজানি বলে জানা গেছে। ইসলামিক স্টেট ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। তবে মঙ্গলবারের বোমা হামলার সঙ্গে জঙ্গী গ্রুপ আইএসের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হতে পারেননি ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। গার্ডিয়ান, বিবিসি ও ওয়াশিংটনপোস্ট অনলাইন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মাত্রা বেড়ে সর্বোচ্চ সঙ্কটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সামনে আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সুরক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। বিশেষভাবে কনসার্ট, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন গণ অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী থাকবে। সেনা সদস্যারা পুলিশের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন। ম্যানচেস্টার কনসার্টে বোমা বিস্ফোরণে শিশুসহ ২২ দর্শক নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার পর মঙ্গলবার এক জরুরী বৈঠকে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্দেহভাজন সালমান আবাদির একাই এ হামলা চালিয়েছে, নাকি সে আরও বড় নেটওয়ার্কের অংশ, তা নিয়ে তদন্তকারীরা সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মাত্রায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে জনগণকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে আর্মড পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরাও থাকবেন। সোমবারের বোমা হামলাকে একটি বড় নেটওয়ার্কেরই অংশ হিসেবে মনে করেন তিনি। যাতে আরও ব্যাপক হামলার ইঙ্গিত রয়েছে। টেরেসা মে বলেন, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, আমাদের যে ধরনের হুমকির মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে, সেদিক বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত যথার্থ ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। গত এক দশকে ব্রিটেনের মাটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাটি চালায় কনসার্ট হল থেকে অনতিদূরে বাস করা ২২ বছর বয়সী সালমান আবেদিন। এ ব্রিটিশ যুবক একটি তারুণ্যদীপ্ত আনন্দোচ্ছল পরিবেশকে নিমিষেই মৃত্যুপুরীতে রূপান্তর করে দেয়। কিন্তু সালমান কি একাই এ হামলা চালিয়েছে, নাকি আরও সহযোগী ছিল, ব্রিটিশ তদন্তকারী এ প্রশ্নের ত্বরিত জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। এমন অত্যাধুনিক ও বিভীষিকাময় হামলার ঘটনা গত কয়েক বছরেও ঘটেনি। মে বলেন, ভবিষ্যতে ব্যাপক হামলার আশঙ্কা আমরা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না। নিহত ২২ জনের বেশিরভাগই ছিল কিশোর-কিশোরী। কথিত ইসলামিক এস্টেট হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, আমদের এক সৈনিক এ হামলা চালিয়েছে। সোমবারের হামলা দেশটিতে নতুন করে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেন, ব্রিটেনের সড়কে প্রহরায় কয়েক শ’ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচ হাজার সেনা মোতায়েনের কথা যে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা সঠিক নয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ অসঙ্গত শঙ্কা অনুভব করবে, সেটা আমাদের চাওয়া না। তবে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা যথার্থ ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। যৌথ সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষণ কেন্দ্র হামলার হুমকির মাত্রা নির্ধারণ করেছে। পুলিশ, সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর ও সংস্থা মিলে গঠিত সন্ত্রাসবাদ বিশ্লেষণ কেন্দ্র এর আগে শুধু দুইবার দেশটিতে সর্বোচ্চ হামলার হুমকির সতর্কবাতা দিয়েছিল। মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রাওলি বলেন, তদন্ত দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে, ভাল অগ্রগতিও হয়েছে। নিহত সন্ত্রাসী কি একাই হামলা চালিয়েছে, নাকি সে বড় কোন নেটওয়ার্কের অংশ, তদন্তের মূল স্রোত সেদিকেই। আমরা তদন্তের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ স্তরে রয়েছি, যেটা আমাদের অনিশ্চয়তার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে আটলান্টিক মহাসাগরীয় যাত্রীবাহী বিমান তরলবোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হামলার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছিল। পরবর্তী বছর লন্ডন নাইট ক্লাবে বোমা হামলার চেষ্টা করায় এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে এরকম সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয়। বছরের পর বছর সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করার পর সোমবার রাতের ম্যানচেস্টার হত্যাকা- এটাই বলে দিচ্ছে, উগ্রপন্থীদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা থেকে ব্রিটেন নিরাপদ না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন সহায়তা ছাড়াই এ হামলা চালানো হয়েছে, সেটা অসম্ভব। লন্ডনভিত্তিক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ রাফায়েলো প্যান্টোকি বলেন, পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়া কিংবা ছুরিকাঘাত করা খুবই সহজ। কিন্তু বোমা বানানো ও সেটা সময়মতো বিস্ফোরণ ঘটানো কঠিন। এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই অন্য লোকজন জড়িত থাকতে পারে। প্যান্টোকি বলেন, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এখন বের করার চেষ্টা করছেন, হামলাকারীর সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, সে নিজেই কি বোমা বানিয়েছে, না অন্য কেউ তাকে বোমা বানিয়ে দিয়েছে, এসব প্রশ্নের জবাব। এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারী লিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তার ভাইকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সালমানের এক পারিবারিক বন্ধু জানায়, সে প্রায়ই লিবিয়ায় ভ্রমণে যেত। সেখানে সে সন্ত্রাসী হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকলে, তাতে আমরা অবাক হব না। লন্ডন ও স্কটল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগামীতে যে কোন উৎসব বা অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা পরিকল্পনা আমরা পর্যালোচনা করব। আগে যেসব ছোট-খাটো অনুষ্ঠানেও পুলিশ থাকত না, এখন থেকে সেখানেও থাকবে।
×