ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় যৌতুকের জন্য লোমহর্ষক নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ মে ২০১৭

নেত্রকোনায় যৌতুকের জন্য লোমহর্ষক নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জ, ২৪ মে ॥ যৌতুকলোভী স্বামী তার স্ত্রী সাকিয়া সুলতানাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে, শ্বাসরোধ করে এবং যৌনাঙ্গে পয়সা ঢুকিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। এ সময় বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসায় সে প্রাণে রক্ষা পায় । মঙ্গলবার রাতে মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলি গ্রামে এ পাশবিক ঘটনা ঘটে। বুধবার কয়েকটি নারী ও মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় সাকিয়া সুলতানাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর। জানা গেছে, মোহনগঞ্জ উপজেলার পেরিরচর গ্রামের ফয়জুদ্দিনের মেয়ে সাকিয়া সুলতানার সঙ্গে ২০০৬ সালে বড়তলি গ্রামের মৃত আলী উসমানের ছেলে জিয়াউর রহমানের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে তিনটি ছেলেসন্তান রয়েছে। সাকিয়ার ভাই শাকিল মিয়া জানান, বিয়ের কয়েক বছর পর জিয়া নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে সাকিয়ার কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। দরিদ্র বাবা-মা মেয়ের শান্তি-সুখের জন্য ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাকি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু জিয়া তা মেনে নেয়নি। বাকি দেড় লাখ টাকার জন্য সে সাকিয়ার ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার শুরু করে। এ নিয়ে সংসার ভাঙ্গার উপক্রম হলে কমপক্ষে পাঁচবার শালিসী বৈঠক হয়। শালিসীতে জিয়া আর অত্যাচার-নির্যাতন করবে না বলে অঙ্গীকার করে সাকিয়াকে ঘরে নিয়ে যায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে সে সাকিয়াকে ফের যৌতুকের টাকা দিতে চাপ দেয়। সাকিয়া এতে অপারগতা প্রকাশ করলে জিয়া প্রথমে তাকে বেদম পিটিয়ে এবং যৌনাঙ্গে পয়সা ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতেও মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় সর্বশেষ গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় চিৎকার শুনে সাকিয়ার ভাসুর নূরুল হকসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে বুধবার সাকিয়ার অভিভাবকরা ছুটে এলে জিয়া তাদেরও রামদা দিয়ে কোপাতে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা সাকিয়াকে প্রথমে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে বেসরকারী সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি, মোহনগঞ্জ উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সাকিয়াকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বিকেলে স্বজনরা তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে সে উপস্থিত সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।
×