ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ার পথে যশোরের ৭ যুবক ৪ বছর নিখোঁজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ মে ২০১৭

মালয়েশিয়ার পথে যশোরের ৭ যুবক ৪ বছর নিখোঁজ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ পানি পথে মালয়েশিয়ায় দীর্ঘ চার বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছেন একই গ্রামের পাঁচজনসহ মোট সাতজন। ২০১৩ সালের জুন মাসের ১ তারিখে তারা একসঙ্গে টেকনাফ থেকে পানি পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। ট্রলারে ওঠার সময় তাদের একজন বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন আমরা এই মাত্র ট্রলারে উঠেছি, এখনই রওনা দেব। তারপর কেটে গেছে টানা ৪ বছর কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পায়নি পরিবারগুলো। এই টানা সময় ধরে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোতে চলছে চাপা কান্নার রোল। তারা স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। জানা যায়, ২০১৩ সালের জুন মাসের ১ তারিখে মুক্তদাহ গ্রামের পাঁচ যুবকসহ মোট সাতজন মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা দেন। তারা হলেনÑ মুক্তদাহ গ্রামের কৃষক মতিয়ার রহমানের ছেলে অমিত হাসান মুকুল, একই গ্রামের মৃত আত্তাব হোসেনের ছেলে শফিকুল ইসলাম, মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে ফুলজার হোসেন, মৃত ছবেদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, হায়দার আলীর ছেলে আজিজুর রহমান, একই উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে রমজান আলী (৪৫) ও দূর্গাবরকাটি গ্রামের উমসান আলীর ছেলে লিটন হোসেন আদৌও তারা বেঁচে আছেন নাকি কোন চক্রের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণে মারা গেছেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কোন সূত্র। নিখোঁজদের স্বজনরা জানান, তারা অত্যন্ত গোপনে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে আদম ব্যাপারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৩ সালের ১ জুন বাড়ি থেকে একযোগে বের হয়েছিলেন। কিন্তু তখনও পরিবারের সদস্যরা জানতেন না তারা বিদেশের উদ্দেশে বাড়ি ত্যাগ করছেন। জুন মাসের ১২ তারিখে অমিত হাসান মুকুল তার বাড়িতে ফোন করে জানান, আমরা সকলেই পানি পথে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি। ট্রলারে উঠেছি, এখনই রওনা দেব। ১২ তারিখের ওই কথাই তাদের পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা। এরপর দেখতে দেখতে ৪টি বছর পার হতে যাচ্ছে কিন্তু একজনেরও কোন সন্ধান জানেন না তাদের পরিবারের সদস্যরা। ১৫ জুলাই ২০১৩ সালে মুকুলের পিতা কৃষক আতিয়ার রহমান জানতে পারেন মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই রাজু আহমেদ ওরফে ফজলুর রহমান তাদের ফুঁসলিয়ে পানি পথে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। রাজু ওরফে ফজলুর রহমান সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা। মুকুলের বাবা তার কাছে গিয়ে ঘটনা জানতে পারেন। আদম ব্যাপারী রাজু তাকে জানিয়েছিল কোন সমস্যা নেই, তারা মালয়েশিয়া পৌঁছে তোমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। কিন্তু দিন শেষে রাত আবার দিন শুরু এভাবে তিন মাস পার হয়ে যায়। কিন্তু কোন পরিবারেই আসেনি ফোন। একপর্যায়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে মুক্তদাহ গ্রামের ঘরজামাই আদম ব্যাপারী রাজুর কাছে যান। সেখানে চাপ সৃষ্টির একপর্যায়ে রাজু তার সহযোগী চট্টগ্রামের টেকনাফের অপর আদম ব্যাপারী রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়। সেদিন ছিল ৬ জুন ২০১৩। টেকনাফের দালাল রাশিদুল তাদের জানান, কোন সমস্যা নেই তারা দু’একের মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছে যাবে, সে সময় আপনাদের আরও টাকা দিতে হবে। এর কয়েক দিন পরই ঘরজামাই দালাল রাজু তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রাতের আঁধারে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে টেকনাফ ও মুক্তদাহ গ্রামের দালালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পায় পরিবারগুলো। আজ পর্যন্ত তাদের স্বজন এমনকি কোন দালালের সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে মুকুলের বাবা আতিয়ার রহমান জানান, আমরা ঘটনার প্রথম দিকে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক ছোটাছুটি করেছি কিন্তু আদম ব্যাপারীদের কোন সন্ধান পাইনি। আমাদের গ্রামের পাঁচজন, রুস্তমপুর গ্রামের একজন, দূর্গাবরকাটি গ্রামের একজন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের খুঁজে পেতে সরকারের সহযোগতিা কামনা করেছেন।
×