ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ছায়ানটে নজরুল জন্মোৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ মে ২০১৭

ছায়ানটে নজরুল জন্মোৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জ্যৈষ্ঠের প্রচ- গরমের রেশ তখনও কাটেনি। অসহিষ্ণু দাবদাহ উপেক্ষা করে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় নজরুলপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উদ্দেশ্য একটাই নজরুল সঙ্গীত উপভোগ করা। পুরো ভবনটিকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ফুল আর প্রদীপ দিয়ে। জন্মোৎসবের কোন অংশটি যেন বাদ পড়েনি এদিন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছায়ানট আয়োজিত দুইদিনব্যাপী নজরুল উৎসবের প্রথম দিনে ছিল কথন, গান, পাঠ, আবৃত্তি ও নৃত্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত কণ্ঠে ছায়ানটের শিশু শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি’। এরপর স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহসভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। এরপর একক বক্তৃতা দেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। পরে ‘আজি রক্তনিশী ভোরে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে ছায়ানটের শিল্পীরা। এরপর একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, শাহীন সামাদ, নাসিমা শাহিন ফ্যান্সি, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ডালিয়া নওশিন। ‘বধূ তোমার আমার’ শীর্ষক পাঠ করেন অর্পিতা সরকার। এছাড়া একক আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী সুমন চৌধুরী, ইয়াসমিন মুশতারি, ইয়াকুব আলী খান প্রমুখ। সব শেষে ছায়ানটের শিশুদের সম্মেলক কণ্ঠে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের পরিবেশনা। আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের সমাপনী দিন। প্রথম দিনের মতো অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার ও আর্কাইভ’ উদ্বোধন ‘আমি মানুষের জন্য চিন্তা করি এবং আমার লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করব যা আমি ব্লুপ্রিন্টে উল্লেখ করেছি, আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই আমি, আমার সংস্কৃতি ও জাতীয়তার একটি অংশ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ, আর এ দেশের জন্য কিছু করা আমার নৈতিক দায়িত্ব, যদিও এনজিও প্রতিষ্ঠা করা অতি সামান্য পদক্ষেপ’। গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ২০১৬ সালের ১ জুলাই জঙ্গী হামলার ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের এমনই স্বপ্ন ছিল। মৃত্যুর পর খুঁজে পাওয়া অবিন্তার ডায়েরিতে তার এ স্বপ্নের কথাগুলো লেখা ছিল। তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছে ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’। অবিন্তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রন্থাগার ভবনে বুধবার দুপুরে উদ্বোধন করা হয় ‘অবিন্তা সাইবার সেন্টার ও আর্কাইভ’। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও সদস্যদের ব্যবহারের জন্য এ কেন্দ্রটির পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন। কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসের চেয়ারম্যান নীলু রওশন মুর্শেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন অবিন্তার মা রুবা আহমেদ। সেন্টার উদ্বোধনের সময় উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অবিন্তা আজ আমাদের মাঝে নেই। বেঁচে থাকলে সে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কিছু করে যেতে পারত। আমরা চাইব আর যেন এভাবে আর কারও জীবন দিতে না হয়। তার স্বপ্ন ছিল অতি সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার। তার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন যে কার করে যাচ্ছে তার জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ও সৃষ্টিশীলতায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে রয়েছে। এখানের চারুকলার শিক্ষার্থী ও অনুষদ সদস্যরা কয়েক দশক ধরেই তাদের সেরা সব কাজ দিয়ে আসছে। আর এ ডিজটাল সুবিধার ফলে এখন তারা পরবর্তী স্তরে যাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আমরা এ সহায়তার জন্য অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অবিন্তা আমাদের সঙ্গে আমেরিকায় থাকলেও ওর মন পড়ে থাকত বাংলাদেশে। আজ সে আমাদের মাঝে নেই, ওর স্বপ্নগুলো আমাদের মাঝে আছে। ওর স্বপ্নগুলোই ওকে বাঁচিয়ে রাখবে। নীলু রওশন মুর্শেদ বলেন, দেশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সমাজে স্থান দিতে চেয়েছিল অবিন্তা এবং পাশাপাশি বয়স্কদের পুনর্বাসন করতে। এর ফলে শিশু ও বয়স্করা একে অপরের দেখাশোনা করবে। তার নামে এ ফাউন্ডেশন তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে চলেছে নিরন্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও সদস্যদের ভাল কাজকে সহায়তা করার পাশাপাশি, তাদের কাজের মাধ্যমে অবিন্তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই ফাউন্ডেশনটি এ উদ্যোগ নিয়েছে। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। উল্লেখ্য, চারশ পঞ্চাশ বর্গফুটের এ সেন্টারটিতে দুটি প্রিন্টারসহ তেরটি কম্পিউটার, একটি ফটোকপি মেশিন এবং ইন্টারনেট সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়াও উন্নত এ আর্ট সেন্টারটিতে রয়েছে বিশেষভাবে তৈরি কাচের টেবিল ও চেয়ার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জানালার আচ্ছাদন। নজরুল একাডেমির দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে নজরুল চর্চা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন লেখক ও বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মিন্টু রহমান। অনুষ্ঠানে নজরুল-চর্চা ও একাডেমির অগ্রযাত্রায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসংগ্রামী, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক আবদুল গফুরকে নজরুল একাডেমি সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। নজরুলের সৃষ্টিকর্ম ও তার জীবন দর্শনবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি ও সাবেক কূটনীতিক ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন কবি, শিক্ষাবিদ, লোকবিজ্ঞানী ও একাডেমির সভাপতি ড. আশরাফ সিদ্দিকী। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী ও একাডেমির শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী তানজিনা করিম স্বরলিপি, করিম শাহাবুদ্দিন, মইদুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তালাশ, বদিউজ্জামান বাদল, সালামত হোসেন চৌধুরী, রেবেকা সুলতানা প্রমুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই একাডেমির শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার হেরিনু পল্লী জননী’ গানটি। এ ছাড়াও একাডেমির শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘প্রজাপতি ও প্রজাপতি’ ও ‘শুকনো পাতার নূপুর পায়ে’ গান দুটি। শিল্পকলায় ঘুড়ি প্রদর্শনী ঐতিহ্যবাহী ঢাকাবাসীর সংগঠন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে আয়োজিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি জাতীয় চিত্রশালায় ৬নং গ্যালারিতে (৪র্থ তলায়) এশিয়ান এ দেশের ঘুড়ি প্রদর্শনী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পৌনে চারটায় ঘুড়ি র‌্যালি ও সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।
×