ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ মে ২০১৭

জঙ্গী দমনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। দেশটির আগামী প্রস্তাবিত বাজেটে জঙ্গীবিরোধী সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে এই অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আগামী বাজেটে বাংলাদেশকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বিভিন্ন দেশের জন্য ২০১৭-১৮ সালের বাজেট প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে এ্যান্টি-টেররিজম এসিসট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে। মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শক্তিশালী করতে তা কাজে লাগানো হবে। জঙ্গীবাদ উত্থানে বাধা দেয়া, শনাক্ত করা, তদন্ত ও মোকাবেলা করতে ওই অর্থ ব্যয় করা হবে। ওই বরাদ্দ দিয়ে জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়। তবে বাংলাদেশকে দেয়া আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কংগ্রেসের অনুমোদনের জন্য পাঠানো মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বাজেটে এই কাটছাঁটের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২১ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র দফতর তা কমিয়ে ২০১৭-১৮ সালের জন্য বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখার জন্য নতুন করে ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশে আর্থিক সহায়তা কমানোর কথা বলেছিলেন। তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছে মার্কিন প্রশাসন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও অন্যান্য অপরাধ সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মাধ্যমে বিচার ও প্রশাসনে আন্তর্জাতিক মানের মানবাধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে নতুন প্রস্তাবে। সমন্বিত কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালিয়ে অপরাধ ও জঙ্গীবাদ দমনের কথাও ওই প্রস্তাবে বলা হয়। স্বাস্থ্য খাতে ২০১৬-১৭ সালে বাংলাদেশ আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ট্রাম্প প্রশাসন এ খাতেও বড় রকমের কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছে। ২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশকে এই খাতে তিন কোটি ৬৭ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সহায়তা। প্রস্তাববনায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। ভারতে স্বাস্থ্য খাতে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ দুই কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এক কোটি ৭৬ লাখ ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে নেপাল। চতুর্থ স্থানে থাকা পাকিস্তানের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ এক কোটি ১২ লাখ ডলার। অপরদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য আর্থিক সহায়তা ও উন্নয়ন তহবিলে (ইসিডিএফ) ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ সালে এ খাতে কোন বরাদ্দ ছিল না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য ইসিডিএফ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ সেবা জনগণের মাঝে বিস্তৃত করা, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার মতো জঙ্গী সংগঠনের উত্থান রুখতে ইসিডিএফ খাতে বরাদ্দ সহায়তা করবে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এই বরাদ্দ জঙ্গীবাদের অগ্রমুখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ, বিশেষত মানবাধিকার কর্মীদের সহায়তা করবে বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তরুণ ও দরিদ্র্য জনগণের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গীবাদবিরোধী কাজেও তা সহায়তা করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারী প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ ও বাংলাদেশে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে এই আর্থিক বরাদ্দ সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এই বরাদ্দ সহায়তা করবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও মানবপাচার মোকাবেলায়ও ওই আর্থিক বরাদ্দ কাজ করবে। কৃষি উৎপাদন ও পুষ্টিগুণ বাড়াতে কার্যকর চাষাবাদ, নতুন প্রযুক্তি এবং ফসলের বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে। চলতি বছর অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আগামী বাজেট ২০১৭-১৮ কার্যকর হবে।
×