ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুলের অপ্রচলিত গান রেকর্ড করব ॥ কল্পনা আনাম

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৫ মে ২০১৭

নজরুলের অপ্রচলিত গান রেকর্ড করব ॥ কল্পনা আনাম

সঙ্গীতশিল্পী কল্পনা আনাম। নজরুল সঙ্গীতের অমিয় ধারায় নিজেকে শিক্ত করার পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার সঙ্গীতলব্ধ জ্ঞান। নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পীর তিনটি একক এ্যালবামআগামীকাল প্রকাশ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা হয়। নতুন এ্যালবাম সম্পর্কে বলুন। কল্পনা আনাম : এখন পর্যন্ত বাজারে আমার এই সিরিজের ‘এসেছি তবে দ্বারে’, ‘জানি পাবো না তোমায়’, ‘উষা এলো চুপি চুপি’ এ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। এবারে এই সিরিজের ৪র্থ ৫ম ও ৬ষ্ঠ উদ্যোগ হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে আসছে আমার আরও তিনটি এ্যালবাম। এগুলো হচ্ছে- ‘কেন কাঁদে পরান’, ‘নমো নমো বাংলাদেশ মম‘ ও ‘ফিরিয়া যদি সে আসে’। আমার গাওয়া অপ্রচলিত গানগুলো সবার কাছে পৌঁছাতে এ্যালবামগুলোর সব গান অনলাইন িি.িশধষঢ়ড়হধধহধস.পড়স-এ দিয়েছি। নজরুলের গানের সিরিজ করার কারণ কী? কল্পনা আনাম : আমি বরাবরই নজরুলের রাগাশ্রয়ী গানের প্রতি আকৃষ্ট হই। কিন্তু ইদানীং নজরুলের অসাধারণ কিছু অপ্রচলিত গানের আদি রেকর্ড ইউটিউব বা অন্যান্য মাধ্যমে সহজেই আমাদের হাতে আসছে। এছাড়াও নজরুল যখন সুস্থ ছিলেন সেই সময়কার অর্থাৎ সে বিশ দশকের শেষদিকের বা তিরিশ দশকের বেশ কিছু আদি স্বরলিপিও নানা সূত্র থেকে পাচ্ছি। আর তার থেকেই আমি উদ্বুদ্ধ হই নজরুলের এই অচেনা বা নতুন খুঁজে পাওয়া গানগুলো রেকর্ড করার। আমার বরাবরই মনে হয়েছে, নজরুলের যে বিশাল সৃষ্টিকর্ম, তার থেকে কেবল মাত্র ১০০-১৫০ প্রচলিত, জনপ্রিয় গানের মধ্যেই যেন আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি। সেই আবর্ত থেকে বের হয়ে আসাটা যেন এখন সময়ের দাবি। সেই চিন্তা থেকেই আমি গত বছর থেকেই সিরিজ আকারে ১০টি করে এসব নতুন করে খুঁজে পাওয়া, স্বল্প প্রচলিত, অপ্রচলিত গানের এ্যালবাম প্রকাশ করে আসছি। নজরুল ও তার সৃষ্টিকর্মকে শুদ্ধ ও সঠিকভাবে সবার কাছাকাছি পৌঁছে দিতে চাই। নজরুলের গানের প্রতি আকৃষ্ট হলেন কেন? কল্পনা আনাম : আমার বাবা-মার উৎসাহেই মূলত, আমি ছোটবেলা থেকে নজরুলের গান চর্চা করছি এবং আমার পরম সৌভাগ্য যে শ্রদ্ধেয় সুধীন দাসের কাছে ছোটবেলায় আমার সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়, যিনি পরবর্তীকালে শুদ্ধ বাণী ও সুরে নজরুলের গান প্রচার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও পরবর্তীকালে ছায়ানট ও ছায়ানটের বাইরে অনেকের কাছেই আমার গান শেখার সৌভাগ্য হয় যেমন, সঙ্গীতশিল্পী অঞ্জলি রায়, নীলিমা দাস, সোহরাব হোসেন, সেলিনা হোসেন এবং আরও অনেকে। রাগ সঙ্গীতেও শিক্ষা গ্রহণ করি শিল্পী আজাদ রহমান, অসিত দে এবং ওস্তাদ সগিরুদ্দিন খাঁর কাছে। আর অবশ্যই শাকিলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার সুবাদে আমার সঙ্গীতের শিক্ষা বা সঙ্গীত সম্পর্কে বোধ, আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। নতুন এ্যালবাম নিয়ে আপনি কেমন আশাবাদী? কল্পনা আনাম : আমি এই এ্যালবামগুলোতে এমন কিছু গানও নির্বাচন করেছি যার সুর সম্পর্কে নানা ধরনের বিভ্রান্তি আছে। অবশ্যই সেগুলোর খাঁটি তথ্য সংগ্রহ করে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই আমি গানগুলো রেকর্ড করবার উদ্যোগ নিয়েছি। আর আজকাল নজরুলের গানের আদি রেকর্ড বা স্বরলিপি সংক্রান্ত এতসব প্রামাণ্য তথ্য নানাভাবে পাওয়া যাচ্ছে যে এখন এই গানগুলো গাইবার ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে বেশি বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। শুদ্ধভাবে নজরুলের গান প্রচার সম্পর্কে কিছু বলুন। কল্পনা আনাম : আমরা মূলত ছায়ানটের শিক্ষক ও কর্মী হিসেবে শিক্ষার্থীদের নজরুলের নানা অঙ্গের নানা স্টাইলের গানের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আজকাল টেকনোলজির যুগে ইউটিউব ঘাটলেই একই গান বহু শিল্পীর কণ্ঠে বহু সুরে পাওয়া যায় কিন্তু তার মধ্যে কোন সুরটি শুদ্ধ/সঠিক সেই ব্যাপারে তারা বিভ্রান্ত বোধ করে। মূলত, এই বিভ্রান্তি দূর করতেই আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আদি সুরের গান তাদের কণ্ঠে তুলে দিয়ে আসছি। আমরা সেসব অঞ্চলের সঙ্গীত শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং এসব আদি সুর ও স্বরলিপি ও নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচী নিয়ে এগোচ্ছি। নজরুলের গান নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? কল্পনা আনাম : আপাতত নজরুলের যে গানগুলোর কোন রেকর্ড পাওয়া যায় না বা রেকর্ড করা হয়নি সেগুলো রেকর্ড করবো। সেই সঙ্গে আরও বেশকিছু গান এখন পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো নজরুলের বাণী হলেও অন্য সুরকারদের সুরে রেকর্ড করে জনপ্রিয় হয়েছিল বলে নজরুলের নিজের করা সুরটি হারিয়ে গিয়েছিল। সেই গানগুলোর নজরুলের সুরারোপিত সুর, স্বরলিপি ও বাতিলকৃত আদি রেকর্ডগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে। আমার ইচ্ছে আছে, সেই রকম কিছু গান আগামীতে রেকর্ড করার। গৌতম পাণ্ডে
×