ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটের ঘেরাটোপে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৪ মে ২০১৭

সঙ্কটের ঘেরাটোপে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী

সঙ্কটের ঘূর্ণাবর্তে ভারত শাসিত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি সাঈদের সরকার। একদিকে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা, রাজপথে উত্তাল গণআন্দোলন, নিজ দলের অভ্যন্তরে বিদ্রোহের গুঞ্জন এবং দলের দুর্গ বলে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলে পিডিপি জনপ্রিয়তায় ধস, অন্যদিকে কেন্দ্র সরকারের একগুঁয়েমি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্ভাব্য যে কোন সংলাপে বসতে অস্বীকৃতিÑসবকিছু মিলে জম্মু ও কাশ্মীরকে একটা খাদের কিনারার দিকে নিয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা সেই খাদের কিনার থেকে রাজ্যটিকে উদ্ধার করতে পারবেন কিনা সেটা এক মস্তবড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অশান্ত কাশ্মীরে এমন বিক্ষোভের দাবানল আগে কখনও দেখা যায়নি। গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া সেই বিক্ষোভ দমনে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৯০ জন নিহত হয়। নিরীহ পথচারীসহ অসংখ্য তরুণ ছররা বুলেটে অন্ধ হয়ে যায়। বিপুলসংখ্যক গ্রেফতার হয়। এরপর শীত মৌসুমে বিক্ষোভ থামলেও আবার তা বিরামহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সেই সহিংস বিক্ষোভ হয়ত গত বছরের মতো ব্যাপক হবে না। তবে কাশ্মীরের তরুণ জনগোষ্ঠী থেকে শাসক দলের বিচ্ছিন্নতা প্রায় পূর্ণরূপ ধারণ করবে। অবশ্য রাজপথের বিক্ষোভকেই যে কেবল মোকাবেলা করতে হচ্ছে মেহবুবাকে তা নয়। বিক্ষোভের সঙ্গে প্রায় সমান্তরালভাবে জঙ্গী হামলাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। গত ১৪ এপ্রিল হিজবুল মুজাহিদীনের তিন জঙ্গীর গুলিতে কোয়ালিশন সরকারের প্রধান শরিক দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এক জেলা সভাপতি নিহত হয়। একই সপ্তাহে অন্য এক জেলায় ন্যাশনাল কনফারেন্সের এক নেতার ওপর হামলা করে জঙ্গীরা। ১ মে তিন হিজবুল জঙ্গী কুলপাম্প জেলায় পাঁচ পুলিশ ও দুই প্রাইভেট নিরাপত্তা প্রহরীকে গুলি করে হত্যা করে। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে পিডিপি-বিজেপি কোয়ালিশন সরকার কাশ্মীরের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে রাজ্যে ৪৮ জন সিভিলিয়ান, নিরাপত্তা বাহিনীর ১৩৪ জন সদস্য ও ২৭৫ জঙ্গীসহ মোট ৪৫৭ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে পিডিপির জনবিচ্ছিন্নতা এত তীব্র হয়েছে যে, হামলার টার্গেট হওয়ার আশঙ্কায় পিডিপির নেতাকর্মীরা এখন নিজ এলাকায় থাকতে সাহস পান না। তাদের কর্মকা- এখন রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবাও সে কথা স্বীকার করেন। দলের এই জনবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি আরেকটি ব্যাপারও আছে। তাহলো মেহবুবার দল পিডিপির অভ্যন্তরে অসন্তোষ এবং সম্ভাব্য বিদ্রোহের গুঞ্জন। অসন্তোষের কারণ রাজ্য পরিচালনায় ও উন্নয়ন কর্মকা-ে দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্ট করতে না পারা। দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকরা সরকার ও দল যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তাতে উত্তরোত্তর হতাশ ও মোহমুক্ত হচ্ছে। গত ৯ এপ্রিলের এক উপনির্বাচনে পিডিপি প্রার্থীর পরাজয় থেকেই দেখা যায় যে কাশ্মীর উপত্যকায় পিডিপির জনসমর্থনের ভিত কত দুর্বল হয়ে গেছে। আগামী উপনির্বাচনগুলোতে দলের অবস্থা আরও শোচনীয় আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তরুণ সমাজ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পিডিপির প্রতি আকর্ষিত হয়েছিল বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রশ্নে দলটির নমনীয় নীতি ও বিজেপিবিরোধী ভূমিকার জন্য। পরে সেই বিজেপির সঙ্গে কোয়ালিশন সরকার গঠন দলটির ইমেজ নষ্ট করে দেয়। দলীয় কর্মী সমর্থক ছাড়াও পার্টির সিনিয়র সহকর্মীদের তরফ থেকেও সামস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে মেহবুবাকে। এদের বক্তব্য হলো বিজেপির সঙ্গে কোয়ালিশন করে মেহবুবা দলকে ডুবিয়েছেন। সুতরাং দল বাঁচাতে তাকে কোয়ালিশন ছেড়ে দিয়ে জনগণের কাছে ফিরে যাওয়া উচিত। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল পিতার উত্তরসূরি হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন মেহবুবা এবং তারপর থেকে বেশকিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ তাতে মোকাবেলা করে আসতে হয়েছে। যেমন সরকার পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকা-ে দিল্লীর কাছ থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা তিনি পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ৮০ হাজার কোটি রূপীর বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। অথচ তার মধ্যে মাত্র ১৯ হাজার কোটি রূপী তিনি ছাড় করেছেন যা কিনা প্রতিশ্রুত অর্থের এক-চতুর্থাংশেরও কম। আরও একটা মস্ত ইস্যু হলো বিচ্ছিন্নতাকামীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে কেন্দ্রকে রাজি করানোর চেষ্টা। কিন্তু সে চেষ্টায় মেহবুবা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন কেন্দ্রের একগুঁয়েমির কারণে। কেন্দ্রের এক শর্তÑ আগে কাশ্মীর উপত্যাকায় শান্তি ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে হবে তারপর সংলাপ। সেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্র সরকার কাশ্মীরে আরও সৈন্য নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু অধিক সৈন্য নামালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পরিবর্তে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। সুতরাং মেহবুবা সরকারের সামনে সঙ্কট পরিত্রাণের কোন পথ নেই। তেমনি পথ নেই অশান্ত কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসার। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×