ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আদায় উন্নয়নের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ মে ২০১৭

রাজস্ব আদায় উন্নয়নের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে নতুন ভ্যাট আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ঝামেলামুক্ত ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এ আইন নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যেতে রাজস্ব আদায় উন্নয়নের অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে। মঙ্গলবার ঢাকা পূর্ব কাস্টম এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনারেটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২’ বিষয়ে সচেতনতাবিষয়ক এক কর্মশালায় এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। কর্মশালায় ঢাকা পূর্ব কাস্টম এক্সাইজ ভ্যাট কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অব্দুর রউফ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক পূর্ব) ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ মইনুল হাসান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুর রউফ বলেন, ভ্যাট আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অক্সিজেন। আমার সন্তানকে নিরাপদে রাখতে, তার স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে আমাদের ভ্যাট দিতে হবে। সরকারের নিজের কোন টাকা নেই, জনগণের টাকায়ই সরকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে। আমি ভ্যাট না দিলে এ উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি নাগরিককে ভ্যাটের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মোহাম্মদ মইনুল হাসান বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নত দেশের সারিতে নিয়ে যেতে রাজস্ব অক্সিজেন হিসেবে কাজ করবে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে, যা এ বছরের পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হবে। আইনটির সব কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, দেশকে ভালবাসতে হলে আমাদের সবাইকে ভ্যাট দিতে হবে। কারণ পদ্মা সেতুসহ দেশের মেগা প্রজেক্টগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে রাজস্বর ওপর ভিত্তি করে। ড. একেএম নুরুজ্জামান বলেন, ভ্যাট দিলে এ সুবিধা সবাই পাবে। একজন ব্যক্তি ভ্যাট দেবে দেশ গঠনের জন্য, দেশের উন্নয়নের জন্য। আমরা স্বচ্ছ, সুন্দর কর ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের মধ্যম আয় ও উন্নত রাষ্ট্রে যেতে হলে রাজস্ব ভা-ারে রাজস্ব বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট আইনে রাখা হয়েছে একগুচ্ছ সুবিধা। এখানে সবাই ১৫ শতাংশ কর দেবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য রয়েছে সুবিধা, ভ্যাট আইনে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার রাখা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বার্ষিক টার্নওভার ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ টার্নওভার ট্যাক্স প্রদান করলেই হবে। অনাবাসিক ব্যক্তির জন্য থাকছে মূসক এজেন্ট সুবিধা। উপকরণ কর রেয়াতের পরিধি নতুন আইনে অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর হবে, আমরা একে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু ২০১২ সালের ভ্যাট আইন এত পরে কেন কার্যকর হচ্ছে এটা ভাবার বিষয়। আমরা এনবিআরের কাছে ৭ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে ২৭টি আলোচনা হলেও এটি আজও ফলপ্রসূ হয়নি। তিনি বলেন, আমরা অভিন্ন কর কাঠামো চাই না। এটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্পের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। নতুন ভ্যাট আইন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তাদেরও ভোগাবে। আমরা ঝামেলামুক্ত হয়ে সরকারকে ভ্যাট দিতে চাই। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। ডেপুটি ভ্যাট কমিশনার নাহিদ সওশোদ মুকুল বলেন, ভ্যাট অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলে নিকটস্থ ভ্যাট অফিসের সেবা গ্রহণ করা যাবে। ব্যবসায়ীরা চাইলে অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করতে পারবে। ডেপুটি ভ্যাট কমিশনার তাছমিনা হোসেন বলেন, অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন করতে একজন ব্যবসায়ীর সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগবে। ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। তাদের সহযোগিতার জন্য ভ্যাট নিবন্ধন সার্ভিস সেন্টার, ভ্রাম্যমাণ মোবাইল ভ্যানসহ যে কোন প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সহযোগিতা করবেন।
×