ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ৫২৩২ কোটি টাকা

নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ৬ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ মে ২০১৭

নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ ৬ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত পরিমাণের অর্থ সংরক্ষণের (প্রভিশন) আবশ্যকতা রয়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায়। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক মুনাফাও নিতে পারে না। মার্চ’ ১৭ শেষে রাষ্ট্রীয় খাতের ৩ ব্যাংক এবং বেসরকারী খাতের ৩ ব্যাংক প্রয়োজনীয় অর্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৯৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কয়েকটি ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে পাঁচ হাজার ২৩২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিংয়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ’১৭ শেষে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বর’১৬ প্রান্তিকে ছিল চার হাজার ৬৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত তিন মাসে বেসিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি কমেছে এক হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, মার্চ’১৭ প্রান্তিকে সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩২৭ কোটি টাকা বেড়ে দুই হাজার ১০৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৯৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২৮৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছিল, তা আবার খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তারা অনেকটা স্বভাবজাত খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ব্যাংকগুলোও তাদের ঝুঁকির বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থসংরক্ষণ করতে পারেনি। যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় অর্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি, তাদের আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ’১৭ শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৩৫ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থায় বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশই খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের বেসিক ব্যাংকে ৫৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৫৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সোনালী ব্যাংকে ৩২ দশমিক ৭৮ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকে ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকে ২৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং জনতা ব্যাংকে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ খেলাপি ঋণ। সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণীকৃত ঋণ ও অন্যান্য সাধারণ ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে অর্থ সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক ব্যবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে অর্থ সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৪১ হাজার ৯২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ সময়ে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে ৩৬ হাজার ৬৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সে হিসাবে ডিসেম্বর’১৬ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকগুলো প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগে তথা ডিসেম্বর’১৬ শেষে ঘাটতি ছিল পাঁচ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, ডাউডফুল বা সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা খারাপ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক ব্যবস্থায় ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ২৭০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে খেলাপি ঋণের ৮২ শতাংশই মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের, যা আদায়ের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে সন্দেহজনক ঋণ চার হাজার ৯৭২ কোটি টাকা এবং নিম্নমানের আট হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
×