ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামী ব্যাংক

ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে আহসানুল আলমকে সরিয়ে দেয়া হলো

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ মে ২০১৭

ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে আহসানুল আলমকে সরিয়ে দেয়া হলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সৈয়দ আহসানুল আলমকে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। মঙ্গলবার ব্যাংকের ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। তিনি বলেন, আমাদের ইসলামী ব্যাংকে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান আছেন। কিন্তু থাকবেন একজন। তিনি আল রাজি গ্রুপের প্রতিনিধি ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-রাজি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জানান, বলেন, অধ্যাপক আহসানুল আলম পারভেজ আর ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন না, ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর থাকবেন। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল আলম কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। বিকেলে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, ভাড়া করা এজিএম পার্টির লোক, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী শেয়ারহোল্ডার, শেয়ারহোল্ডার নন- এমন লোকজন ভাড়া করে এনে বার্ষিক সাধারণ সভায় কয়েক পরিচালকের বিরুদ্ধে ‘বিষোদ্গার করা হয়েছে’। এজিএমের নামে ‘নজিরবিহীন নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও কোম্পানি সেক্রেটারির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মবহির্ভূত অপব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কিছু করার শক্তি না থাকলে সম্মানিত পরিচালকদের পর্ষদে থাকা অর্থহীন। এর আগে গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সৈয়দ আহসানুল হকসহ অন্য পরিচালকদের পদত্যাগ করতে চাপ দেয়ার বিষয়টি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন আহসানুল হক। তারা এই হীন বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের নেপথ্য শক্তিকে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন ফেসবুকে। কোন পরিচালককে হুমকির মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হলে বহু সম্মানিত পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। আহসানুল হক অভিযোগ করেন, ইসলামী ব্যাংকে জামায়াত সমর্থকদের শক্তি সংহত হচ্ছে এবং তাতে সরকারের অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে। তবে চেয়ারম্যান আরাস্তু খান গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংক ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করে আহসানুল হকের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান যে কথা ফেসবুকে লিখেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। আরাস্তু খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ চাইলে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে তার ওপর কোন চাপ নেই। স্বাধীন পরিচালক হিসেবে যদি উনি (ভাইস চেয়ারম্যান) নিজে পদত্যাগ করেন সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। এটা আমার ব্যাপার নয়। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোন চাপ নেই। আরাস্তু খান বলেন, আমরা এখানে ভাল কিছু করতে এসেছি। সবাই কিন্তু অনেক সৎ। এমনকি তিনিও (ভাইস চেয়ারম্যান)। কিন্তু, আমি জানি না। তিনি কেন এগুলো করেছেন। সরকার, ব্যাংক, বোর্ড এবং এই ম্যানেজমেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কোন অধিকার তার নেই। বিকেলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাম্প্রতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত ব্যাংক সম্পর্কে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর সংবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বর্তমান পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। বার্ষিক সাধারণ সভায় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এ ব্যাংকের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন এবং এ পর্ষদের গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ব্যাংক উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের দিকে এগিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েক নেতার সংশ্লিষ্টতা থাকা ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকটি পরিবর্তন হয় গত জানুয়ারিতে। সাবেক অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ। সে সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে। মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান। এসময় শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান শায়খ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবুদ্দীন, ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৌদি আরবের আল-রাজি গ্রুপের ইউসিফ আব্দুল্লাহ আল-রাজী, পরিচালক ও আইডিবি প্রতিনিধি ড. আরিফ সুলেমানসহ ১৯ পরিচালকের মধ্যে ১৮ পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। তবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারের কিছুসংখ্যক উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছেন সভায়। এদিন অডিটরিয়ামের অর্ধেক আসনই খালি ছিল। সভায় ২০১৬ সালের আর্থিক বিবরণী এবং শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করা হয়। সভা শেষে সৌদি আরবভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ইসলামী ব্যাংক থেকে তাদের অধিকাংশ বিনিয়োগ তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। ঘোষণার পরেই ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে আইডিবি। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের মাধ্যমে আইডিবির শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে। দিনটিতে সেখানে ইসলামী ব্যাংকের ২৭৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মোট ৮ কোটি ৭২ লাখ শেয়ার হস্তান্তর হয়েছে। সভাশেষে আইডিবির প্রতিনিধি হিসেবে থাকা ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক আরিফ সুলেমান সাংবাদিকদের জানান, আইডিবির হাতে থাকা সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২ দশমিক ১ শতাংশ রেখে বাকিটা বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি আরিফ সুলেমান। এর আগে সরকারকে চিঠি দিয়ে আইডিবির হাতে থাকা ইসলামী ব্যাংকের ১২ কোটি শেয়ারের মধ্যে ৮ কোটি ৬৯ লাখের বেশি শেয়ার বেচে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সংস্থাটি। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাদের শেয়ার বিক্রির আবেদন অনুমোদন করে। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার তার শেয়ারের সিংহভাগ ছেড়ে দেন। ব্যাংকে তার ৪২ লাখ ২৬ হাজার ৩৩২টি শেয়ার ছিল। এর মধ্যে বাজারদরে ৪০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন তিনি। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদের ধারণকৃত ৫২ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আইডিবি এককভাবে সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছিল। নিয়মানুসারে কোন ব্যাংকে পরিচালক পদ রাখতে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হয়। এমতাবস্থায় আইডিবি একজন পরিচালকের প্রয়োজনীয় শেয়ার রেখে বাকি অংশ বাজারমূল্যে বিক্রি করেছে। এদিকে মঙ্গলবারে এক্সেল ডাইং এবং প্রিন্টিং লিমিটেড নামের ব্যাংকটির আরও এক উদ্যোক্তা পরিচালক আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্য ৩ কোটি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮১৪টি শেয়ার ব্লক বা পাবলিক মার্কেটে কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
×