ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা জেলা থেকে কার্যক্রম শুরু

প্রাথমিকের ১৬ হাজার সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৪ মে ২০১৭

প্রাথমিকের ১৬ হাজার সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ১৬ হাজার শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার ঢাকা জেলার ৮৭ শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ১৬ হাজার শূন্য পদে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে পদের শূন্যতা পূরণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকা তৈরি করে পিএসসিতে পাঠাতে হয়। ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও, রাজবাড়ী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ফেনী, লক্ষীপুর ও ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তালিকা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, খুলনা, শরীয়তপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নড়াইল জেলার তালিকা মন্ত্রণালয়ে এসেছে। তবে পিএসসিতে পদোন্নতির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কারণ, সব জেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পর পদোন্নতি প্রদান করবে পিএসসি। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কাজও। এ অবস্থায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা এবং প্রশাসনিক কাজে গতি আনতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমে ১৪ জেলার তালিকা থেকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, মোট শূন্য পদের ৩৫ শতাংশ সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ হয়। আর ৬৫ শতাংশের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২১ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। আমরা ৬৫ শতাংশ দিতে পারব, যা সংখ্যায় ১৬ হাজার। প্রধান শিক্ষকের পদটি এখন দ্বিতীয় শ্রেণীর হওয়ায় ৬৫ শতাংশের পদোন্নতির জন্য আমরাই পিএসসিতে সুপারিশ পাঠাব। বাকি ৩৫ শতাংশ তারা (পিএসসি) পূরণ করবে। মন্ত্রƒী বলেন, ওই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে আপাতত যোগ্যদের মধ্য থেকে অস্থায়ীভাবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে স্কুলগুলো পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা দূর করতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এজন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের নিয়োগবিধি এবং আনুষঙ্গিক কারণ ও মামলা-মোকদ্দমার কারণে যেখানে শূন্য রয়েছে তা পূরণ করা যায়নি। এরই মধ্যে কিছু শূন্যতা পূরণ করা গেছে কিন্তু এটার আর শূন্যতা পূরণ করা যায়নি। কখনও নিয়োগবিধির প্রশ্ন, কখনও শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন ও মতানৈক্যের কারণে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতের ব্যাপারটাও এখন শেষ হয়নি। মামলার কারণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় একাডেমিক কার্যাক্রমে গতি নেই। মন্ত্রী বলেন, পিএসসিতে যাদের সুপারিশ করা হয়েছে পিএসসি থেকে তাদের ক্লিয়ার করতে আদালত বা মামলা বা নিয়োগবিধি না থাকার কারণে অনেকের চাকরির জীবনবায়ু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি তারা এ স্বাদ নিয়ে যাক। অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোর শিক্ষকদের যেদিন তালিকা পাওয়া যাবে সে দিনই চলতি দায়িত্ব দেয়া হবে। ২০১১ সালের একটি গেজেটের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, খোলা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলে সেখানে মেধা তালিকা না থাকলে বয়সভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের বিধান রয়েছে। আর একই বয়সের হলে সেক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া যায়। যেসব সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে, তারা পিএসসির সুপারিশেও যোগ্য হবেন বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে ২০১১ সালের সরকারী গেজেটকে ভিত্তি ধরে চলতি দায়িত্ব দিলে আইনী বাধা থাকবে না। তবে চলতি দায়িত্ব পেলে শিক্ষকরা বাড়তি আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।
×