ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী হামলা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৪ মে ২০১৭

বিভীষিকাময় সন্ত্রাসী হামলা

ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে বিস্ফোরণে শিশুসহ ২৩ জন নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন মার্কিন পপতারকা আরিয়ানা গ্রান্ডে। বিস্ফোরণে অবশ্য তিনি আহত হননি। বিস্ফোরণপরবর্তী দৃশ্য ছিল বিভীষিকাময়। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। সোমবার সন্ধ্যায় ২৩ বছর বয়সী আরিয়ানা সঙ্গীত পরিবেশন শেষ করতেই এ বিস্ফোরণ ঘটে। টুইটারে আরিয়ানা লিখেছেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। অন্তরের গভীর থেকে আমি দুঃখিত। বলার কোন ভাষা নেই। ব্যবস্থাপক স্কুটার বরুন বলেন, ‘আমাদের সবার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। এ নৃশংস হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর মতো ভাষা আমাদের নেই। এ কাপুরুষোচিত হত্যাকা-ের শিকার শিশুদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই। যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’ হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান আরিয়ানার ব্যবস্থাপক। আরিয়ানা গ্রান্ডে টিভি অনুষ্ঠান ভিকটোরিয়াসে গান গেয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পান। ম্যানচেস্টারের পর লন্ডন, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি ও দক্ষিণ আমেরিকায়ও তার কনসার্টে অংশ নেয়ার কথা ছিল। বিস্ফোরণপরবর্তী পরিস্থিতিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা অত্যন্ত বিভীষিকাময় বলে মন্তব্য করেন। দর্শক এ্যান্ডি কনসার্টস্থলের সামনে খোলা জায়গায় স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বিস্ফোরণের ধাক্কায় তিনি মাটিতে পড়ে যান। পুরো দৃশ্যপটকে তিনি যুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে দেখি চারদিকে মানুষের শরীর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিশ থেকে ত্রিশটির মতো দেহ আমি গুনেছি। তারা জীবিত না মৃত তা বলতে পারব না। তবে তাদের দেখতে মৃতের মতো মনে হয়েছে। চারদিক রক্তাক্ত। এরপর আমার পরিবারকে খুঁজতে শুরু করি।’ লিডস থেকে আসা গেরি ওয়াকার বলেন, বিস্ফোরণের আঘাতে আমার পায়ে গর্ত হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীর পেটে জখম ও পা ভেঙ্গে গেছে। আন্না মারিয়া তার কিশোরী কন্যাকে নিয়ে কনসার্টে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ভবনটি কেঁপে ওঠে, চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। বন্দুকধারীরা হামলা করেছে ভেবে তারা মাটিতে শুয়ে পড়েন। নিরাপত্তাকর্মীরাও অন্যদের মতো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। সবাই কেবল নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ পুলিশ জানিয়েছে, এটাকে তারা সন্ত্রাসী হামলা ধরে নিয়েই কাজ করছে। একটি পরিত্যক্ত ঝোলা কিংবা আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরক ডিভাইসটিতে শ্র্যাপনেলেন মতো নাট ও বল্টু ছিল। কনসার্টে কত দর্শক ছিলেন তা কেউ বলতে পারছেন না। তবে সেখানে ২১ হাজার লোকের ধারণক্ষমতা আছে। বিস্ফোরণের পরপরই ম্যানচেস্টারের ভিক্টোরিয়া স্টেশন ও অদূরে রেল টার্মিনাল খালি ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোমবার রাত থেকে পুরো মঙ্গলবার ট্রেনযাত্রা বন্ধ থাকবে। কনসার্টে অন্তত একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে, যেটির সঙ্গে রেলস্টেশনের সংযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনা ২০১৫ সালের প্যারিস হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। বার ও রেস্তরাঁসহ ফুটবল স্টেডিয়াম ও কনসার্ট হলে তখন হামলা চালানো হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ ব্রিটেনের জন্য বড় হুমকি হয়ে আছে। ২২ মার্চ ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে পথচারীদের ভিড়ে গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিল এক ব্রিটিশ। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছিল। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে ওই সন্ত্রাসী পার্লামেন্টের সামনে দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে। এখনও কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। হামলাকারী ও তাদের উদ্দেশ্যও জানা যায়নি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মঙ্গলবার ইমার্জেন্সি কমিটি কোবরার জরুরী বৈঠক ডাকেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারা যুক্তরাজ্যের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক হতাহতদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইইউর ব্রেক্সিটবিষয়ক প্রধান আলোচক মিশেল বারনিয়ার বলেন, ‘হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি আমার পূর্ণ সংহতি রয়েছে।’ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড ফিলিপ বলেন, হামলার পর নাগরিকদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। এটাকে তিনি ঘৃণ্য অপরাধ বলে আখ্যা দেন। প্যারিসের মতো ভয়াবহ কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদ ফের আঘাত হেনেছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন বলে তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী পাওলো গেনটিলোনি বলেন, ব্রিটিশ জনগণ ও সরকারের সঙ্গে আমরা একতাবদ্ধ। আমরা হতাহতের পরিবারের পাশে আছি। এ ঘটনার নিন্দা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ জনগণের পাশে আমরা আছি। সন্ত্রাসবাদ কনসার্টে অংশ নেয়া তরুণদের ওপর আঘাত হেনেছে। আমরা এ ঘটনায় শোকাহত।’ রানীর কাছে পাঠানো এক বার্তায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শি বলেন, সঙ্কটের সময় চীন ব্রিটিশ জনগণের পাশেই আছে। গায়িকা জেনিফার লোপেজ বলেন, ‘হতাহতদের প্রতি আমার সমবেদনা, প্রার্থনা ও ভালবাসা রইল।’ পুলিশ বলছে, অন্য কোন তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এটাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই দেখা হবে।
×