ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত দেশ

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২৪ মে ২০১৭

তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত দেশ

গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে সারাদেশে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার থেকে সহজে পরিত্রাণ পাচ্ছে না দেশবাসী। দেশের ওপর বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ জনগণের জীবনযাত্রায় যে অসহনীয় দুর্ভোগের মাত্রা যোগ করেছে সেই তাপপ্রবাহ আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকার কথা বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে শুরু হয় আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব। কালবৈশাখীর দাপটে সারাদেশ বজ্রহুঙ্কারে কেঁপে ওঠে। তারপর শান্ত, স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয় বৃষ্টির ধারা। বৈশাখের প্রচ- রুদ্ররোষ কাটতে না কাটতেই জ্যৈষ্ঠের আগমনে প্রকৃতিতে তাপপ্রবাহের যে প্রখরতা মেটাই এখন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাপমাত্রা খুব বেশি বলা যাবে না। গত কয়েকদিনের গড় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তারপরও অসহ্য গরমে গণমানুষের জীবনযাত্রা প্রায় থমকে যাওয়ার মতো। বৃষ্টির কোন পূর্বাভাস নেইÑ আগামী কয়েকদিনেও ঠা-া হাওয়া কিংবা বারিধারার সম্ভাবনা খুব কম। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হচ্ছে, ভারতের মধ্য অঞ্চলের প্রচ- তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু নিম্নচাপ। যার কারণে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য দেখা যায়, যা বাতাসের আর্দ্রতাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। বাতাসের এই আর্দ্রতাই তাপপ্রবাহের সঙ্গে মিলে অসহনীয় গরম তৈরি করে। মৃদু তাপপ্রবাহের সঙ্গে এই ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি গরমের অনুভবকে যে মাত্রায় নিয়ে যায় তা সহ্য করা আসলেই কঠিন। অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, অল্প শ্রমে ক্লান্ত হওয়া, পানির পিপাসায় সারা শরীরে অবসাদ নেমে আসাসহ হরেক রকমের সমস্যার আবর্তে পড়তে হয় এই উষ্ণ পরিস্থিতিতে। তাপমাত্রা খুব বেশি না বাড়লেও গরমের এই তীব্রতা জনজীবনকে আরও কিছুদিন ভোগাতে পারে। তবে আবহাওয়াবিদরা এই সম্ভাবনাও দিয়েছেন, যে কোন সময় বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ু ঢোকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, যা ইতোমধ্যে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হলে পরিবেশ, পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। মৃদু এবং মাঝারি তাপপ্রবাহের আশঙ্কা থাকলেও ভারি তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত কম। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা উঠলে তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হয়। মৌসুমী বায়ু ঢুকে গেলে অত্যধিক তাপমাত্রার আশঙ্কাও কমে যায়। এবারের উষ্ণ পরিস্থিতি সেদিকে যেতে পারে বলে আবহাওয়া বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন। গরমের কারণে এই অসহনীয় অবস্থা নানান রোগের জন্ম দিতে পারে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়, এমনকি হিট স্ট্রোকের প্রকোপে পড়তে পারে অসচেতন জনগণ। গরমে মশার দৌরাত্ম্য বাড়ে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা, ডাব, বেশি করে পানি জাতীয় ফলমূল খাওয়া এবং যথাসম্ভব খরতাপকে এড়িয়ে চলা। বছরের বিশেষ বিশেষ সময়ে উচ্চ তাপমাত্রার অসহনীয় পরিবেশের সঙ্গে পরিচয় থাকলেও প্রতিবারই এই রুদ্র প্রকৃতিকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। খরতাপে উত্তপ্ত মানুষ এক পশলা বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গোনে। বাংলার শ্যামল প্রকৃতির এই পরিবেশে আমরা সিক্ত হই, সজীব হই তারই প্রত্যাশায় দেশবাসী।
×