ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রেণি ॥ একাদশ-দ্বাদশ

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৩ মে ২০১৭

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

অধ্যায় আট বাংলাদেশের দুর্যোগ ১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে কী বোঝায়? উত্তর : প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলতে আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কোনো দুর্যোগকে বোঝায়, যেখানে মানুষের কোনো হাত থাকে না। প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনা বা বিপর্যয় যখন কোনো জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তোলে তখন তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে। যেমন-বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন, সুনামি প্রভৃতি। ২। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জলবায়ুতে কী ধরনের প্রভাব পড়ে? উত্তর : প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জলবায়ুতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিজ্ঞানীদের মতে, মূলত ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা উষ্ণায়নের কারণে সারা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বেড়েছে। এর ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে উষ্ণম-লীয়দেশে শুষ্ক মৌসুমে খরা, টর্নেডো, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটবে। শীত মৌসুমে হঠাৎ শৈত্য ও উষ্ণ প্রবাহ, কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি, ভূমিক্ষয় ও উপকূল অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে। তাই বলা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জলবায়ুতে উপরোক্ত প্রভাব পড়ে। ৩। দুর্যোগ বলতে কী বুঝায়? উত্তর : দুর্যোগ হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট ঘটনা-যা সমাজের স্বাভাবিকতায় বিঘœ ঘটায় এবং জীবন, সম্পদ ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ক্ষতিগ্রস্ত সমাজের পক্ষে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে এ ক্ষতি মোকাবেলা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তাই বলা যায় দুর্যোগ হলো এমন এক বিপর্যয় যা মানুষের জীবন সম্পদ ইত্যাদির ওপর আঘাত হানে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে। ৪। গ্রিনহাউস গ্যাস বলতে কী বুঝ? উত্তর : বায়ুর মূল উপাদান হলো নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। এছাড়াও বায়ুতে নগণ্য পরিমাণে কার্বন-ড্রাই-অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড আছে। আরও আছে জলীয় বাষ্প ও ওজোন গ্যাস। বায়ুম-লের এই গৌন গ্যাসগুলোকেই গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এসব গ্যাস ছাড়াও মানুষ্যসৃষ্ট সিএফসি এইচসি এফসি হ্যালন ইত্যাদি গ্রিনহাউসুু গ্যাস। ৫। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বলতে কী বুঝায়? উত্তর : ব্যাপক হারে গাছপালা নিধন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, কলকারখানা, যানবাহনের ধোঁয়ার ফলে বায়ুম-লে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কার্বন ড্রাই অক্সাইড বৃদ্ধির ফলে পরিবেশে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাকে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বলে। গ্রিনহাউস মূলত কতগুলো গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত একটি আচ্ছাদন। গ্রিনহাউস গ্যাসকে তাপবৃদ্ধিকারক গ্যাসও বলে। ৬। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে কী বুঝ? উত্তর : গ্রিন হাউস গ্যাস পৃথিবীকে ঘিরে চাদরের মতো একটি আচ্ছাদন তৈরি করেছে। ফলে সূর্যের তাপ ওই চাদর শোষণ করে এংে তা পৃথিবীপৃষ্ঠে ছড়িয়ে দেয়। এভাবেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ প্রক্রিয়াটিকেই বলা হয় বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এই উষ্ণায়নের ফলে বায়ুম-ল ও পৃথিবী ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বাড়ছে। ৭। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ কী? ব্যাখ্যা কর। উত্তর : বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া। গ্রিন হাউস গ্যাসের মধ্যে অন্যতম হলো কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড। গত এক শতাব্দীতে বায়ুম-লে, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। একইভাবে নাইট্রাস অক্সাইড বেড়েছে শতকরা ১৯ ভাগ ও মিথেন শতকরা ১০০ ভাগ বেড়েছেÑযা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। ৮। মহাসমুদ্রকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় কেন? উত্তর : বিশ্বের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে মহাসমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মহাসমুদ্রকে পৃথিবীর ফুসফুস বলে। মহাসমুদ্র উত্তপ্ত পৃথিবীকে ঠা-া রাখে। আমাদের দেশেও এক সময় অসংখ্য নদী-নদী, খাল বিল ও হাওড়-বাওড় ছিল, যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। এখন এসব নদী শুকিয়ে গেছে বা ভরাট করা হযেছে। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার কারণে দিন দিন পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উত্তপ্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীকে শীতল রাখতে সাহায্য করে বলে মহাসমুদ্রকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। ৯। বন উজাড়করণই পরিবেশ দূষণের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ। ব্যাখ্যা কর। উত্তর : পরিবেশ দূষণের পেছনে বড় কারণ হলো বন উজাড়করণ। সবুজ উদ্ভিদ বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আমাদের জন্য অক্সিজেন ত্যাগ করে। কিন্তু ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন বা বন উজাড়করণের ফলে বায়ুম-ল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তেমনি অন্যদিকে অক্সিজেন হ্রাস পাওয়ার ফলে মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর বেঁচে থাকা হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়ে। সুতরাং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে তেমনি পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বন উজাড়করণ।
×