ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে ইহুদী রাষ্ট্রটির সরাসরি আলোচনা চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্পের ইসরাইল সফর শুরু

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৩ মে ২০১৭

ট্রাম্পের ইসরাইল সফর শুরু

ট্রাম্পের সফরনামা এরপর ট্রাম্প ব্রাসেলস, ভ্যাটিকান ও সিসিলি যাবেন। ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তার এ সফরকে ম্লান করে দিয়েছে। বিশেষ করে এফবিআইয়ের পরিচালক থেকে জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার পর রুশ যোগসাজশ নিয়ে অস্থিরতা চলছে। * সোমবার-মঙ্গলবার, ২২-২৩ মে: বুধবার পশ্চিম তীর পরিদর্শনের আগে তেলআবিব ও জেরুজালেম সফর। * বুধবার, ২৪ মে: রোম ও ব্রাসেলস, পোপ ফ্রান্সিসের পর বেলজিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। * বৃহস্পতিবার, ২৫ মে: ব্রাসেলসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন। * শুক্রবার, ২৬ মে: জি-৭ সদস্যদের সিসিলিতে বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্য সফরে ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান মিত্র সৌদি আরবে মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা শেষে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী ভূখ- পরিদর্শন করছেন। দু’দিনের যাত্রাবিরতিতে তার ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্যকে তিনি মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধান চূড়ান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে চুক্তির রূপরেখা কেমন হবে; তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনায় বসার সিদ্ধান্তকে তিনি বেশি অগ্রাধিকার দিবেন। তিনি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস ও গোষ্ঠীগত সংঘাত উসকে দিচ্ছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। খবর আল জাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের। পূর্বসূরি বারাক ওবামার চেয়ে ট্রাম্পকে ইসরাইলের প্রতি বেশি পক্ষপাতঘেঁষা বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনের প্রতি নরম অবস্থান নিয়েছেন তিনি। তবে ট্রাম্পের মতে, ইসরাইলের সম্প্রসারণ শান্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাবে। ১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে গড়ে তোলা ১৪০টি ইসরাইলী বসতিতে ছয় লাখেরও বেশি ইহুদী বসবাস করে আসছে। ফিলিস্তিনীরা যেটাকে তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের অংশ বলে মনে করছে। ইসরাইলী দাবি সত্ত্বেও এসব বসতি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্প মিশ্র সঙ্কেত পাঠিয়েছেন। নির্বাচনের আগে তিনি তেলআবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে ফিলিস্তিনীরা ক্ষুব্ধ ও ইসরাইলীরা খুশি। পরবর্তীতে তার সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেন, ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। ইসরাইল জেরুজালেমকে একতরফাভাবে তার রাজধানী বলে মনে করে। ফিলিস্তিনীরা অবশ্য জেরুজালেমের পূর্বাংশকে তাদের রাজধানী দাবি করছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে ইসরাইলী সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি, দূতাবাস তেলআবিবে রাখাতেই সবার সমর্থন। তবে ট্রাম্পের সফরের আগে ওয়াশিংটনের বক্তব্যে ইসরাইলে কিছু আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিলে শান্তি প্রক্রিয়া বিঘিœত ঘটবে Ñ টিলারসনের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া ইহুদীদের পবিত্র জায়গা হিসেবে পরিচিত পশ্চিম দেয়ালকে পশ্চিম তীরের অংশ ও এটা ইসরাইলের অঞ্চল নয় বলে মন্তব্য করলে যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইসরাইলীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে হোয়াইট হাউস জানায়, ওই কর্মকর্তার মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতিনিধিত্ব করে না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইসরাইল অতি উৎসাহের সঙ্গে তাকে স্বাগত জানায়। অধিকৃত ভূখ-ে নতুন বসতি স্থাপনের নতুন যুগ শুরু হবে বলে ধরে নিয়েছে দেশটি। জেরুজালেমের উত্তরাঞ্চলে বাইত এলের বাসিন্দা বাইবাল বিশেষজ্ঞ হেগি বিন আজি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এখন একটি নতুন যুগ শুরু হবে। ইসরাইল সরকারের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, ওবামার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় এখানে নতুন বাসস্থানের সঙ্কট রয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রত্যাশা বেড়েছে। তিনি আশা করেন, এখন বসতি সম্প্রসারণ কর্মসূচী জোরালোভাবে শুরু করা হবে। সাবেক ফিলিস্তিনী আলোচক মোহাম্মদ ইশতিয়াহ বলেন, শান্তি স্থাপনের প্রধান বাধা হচ্ছে অধিকৃত ফিলিস্তিনী ভূখ-ে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপন। ট্রাম্প অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করতে পারেন কিনা, মূল পরীক্ষাটা আসলে এখানেই। যদি তিনি নেতানিয়াহুকে বসতি স্থাপন বন্ধ করতে পারেন, তবে সেটা নতুন কিছু হবে। আর সেটা করতে না পারলে, তার সবকিছুই বৃথা। ওবামা প্রশাসনের সাবেক মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমন্বয়ক ফিলিপ গর্ডন তেলআবিবে বার্ষিক নিরাপত্তা সংলাপে বলেন, জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নিলে তা হবে বড় ধরনের ভুল। এতে প্রকৃতপক্ষেই ঝুঁকি রয়েছে। পরিস্থিতি সম্ভাব্য সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে। কেবল জেরুজালেমে না, সব মুসলিম দেশের রাজধানীতেই সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এতে সৌদি ও উপসাগরীয়সহ বেশকিছু মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরাইলের কৌশলগত সহযোগিতার দেনদরবার বাধাগ্রস্ত হবে। ইরানী আধিপত্য বিস্তার রোধে এসব দেশ এখন ইসরাইলের সঙ্গে কৌশলগতভাবে এককাট্টা। এতে ইসরাইল ও জর্ডানের অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও বাধাগ্রস্ত করবে। দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে গেলে ইসরাইলীরা খুশি হবে।
×