কালিদাস রায়, নাটোর ॥ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে বৈশাখী মেলার নামে প্রকাশ্যে চলছে জুয়া খেলা । এছাড়া প্রতি রাতেই সার্কাসের নামে প্রদর্শন করা হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, গত ১০ দিন ধরে সেখানে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় লোভে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
অপরদিকে, মেলার আয়োজকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা । জুয়ার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে অনেকেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। এলাকায় বাড়ছে চুরি ছিনতাই সহ নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপ।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নামে বনপাড়া বাইপাসে আয়োজন করা হয়েছে আনন্দ মেলার। সকাল থেকে মাইকে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রচারনা চালানো হচ্ছে হাউজি ও সার্কাসের। কিন্তু রাতে সেখানে অবাধে চলছে হাউজি সহ ডাব্বু, ফর ,চরকি সহ নানা ধরণের জুয়া খেলা। এই খেলায় অংশ গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকেই হয়ে পড়েছেন নিঃস্ব।
সরোজমিনে বনপাড়া বাইপাস মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বাইপাস মোড়ের পুর্ব পাশে খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা জমি টিন দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সার্কাস ও হাউজি খেলার প্যান্ডেল। এছাড়া বাঁশের বেড়া দিয়ে আলাদাভাবে ব্যবস্থা করা হয়েছে ডাব্বু ফর চড়কি সহ নানা ধরেণর জুয়া খেলার। ভীড় করে কেউ খেলেছেন কেউ দেখছেন। অপরদিকে সার্কাসের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, রাত গভীর হলে সার্কাস প্যান্ডেলের চেহারা পাল্টে যায়। সেখানে এমন অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হয় যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী জানান, ৮/১০ দিন ধরে বনপাড়া বাইপাসে মাইকিং করে নানা ধরণের জুয়া খেলা চলছে। এসব জুয়া খেলে অনেকেই সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন ।
অপরদিকে, অশ্লীল নৃত্য চলায় যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বনপাড়া পৌরমেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, আমরা জেনেছি হাইকোর্টের নির্দেশনা নিয়ে এসে এখানে হাউজি ও সার্কাস চলছে। তবে কোন জুয়া খেলার কথা আমার জানা নেই।
মেলার বিষয়ে জানতে আয়োজক ফারুক আহমেদ হোল্ডিং-১৫, জনতা হাউস, শহীদ মিনার , মীরপুর ঢাকার পক্ষে বনপাড়ায় মেলা পরিচালনায় দায়িত্বরত মানিক মোল্লার মোবাইলে (০১৭৫৮-৪৬০০০৩) একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
অপরদিকে, বড়াইগ্রাম উপজেলা কমান্ডের কমান্ডার ছামসুল হক জানান, দুঃস্থ, অসহায় ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের কলানার্থে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় ফার“ক আহমেদের সাথে চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা বৈশাখী মেলা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, তিনি মেলা চলার কোন অনুমোদন দেন নি। মেলার আয়োজকরা কোন আবেদন করেন নি। তবে হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং একেএম জহিরুল ইসলামের আদালতের রুল নিশি বলে সকল প্রকার ইনডোর গেমস এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিষয়টির আইনগত দিক বিশ্লেষন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। তবে অল্পদিনেই এটি বন্ধ হয়ে যাবে।
