ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বোমারু মিজানদের হন্যে হয়ে খুঁজছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২২ মে ২০১৭

বোমারু মিজানদের হন্যে হয়ে খুঁজছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ দুর্ধর্ষ, আত্মঘাতী কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গীকে হন্যে হয়ে খোঁজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব জঙ্গী কোন গোপন আস্তানায় লুকিয়ে থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে কি-না তারও খোঁজখবর নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গী আস্তানা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া এবং প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গী ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গীরা। এসব জঙ্গীর মধ্যে রয়েছেÑ আনাস ওরফে আনিস, রনি, জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমারু মিজান ও সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন। কুমিল্লার কোটবাড়ি জঙ্গী আস্তানা থেকে গত মার্চ মাসে উধাও হয়ে গেছে জঙ্গী আনাস ওরফে আনিস ও রনি। এছাড়াও জঙ্গী বোমারু মিজান ও সালেহীনকে প্রায় তিন বছর আগে ত্রিশালের প্রিজনভ্যান থেকে জঙ্গীরা ছিনিয়ে নেয়ার পর এখনও হদিস মিলছে না। আত্মঘাতী, দুর্ধর্ষ এসব জঙ্গীকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি সূত্র জানায়, কুমিল্লা মহানগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলার ২৪নং ওয়ার্ডের কোটবাড়ি এলাকায় গন্ধমতি গ্রামে জঙ্গী আস্তানায় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ শুরু হয় গত ৩১ মার্চ। ওই জঙ্গী আস্তানার আশপাশের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর তিন দিন ধরে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরপর মাইকিং করা হয়। মাইকিংয়ে স্থানীয়দের উদ্দেশে অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সর্তক থাকতে বলা হয়। এ সময় সবাইকে ঘরে থাকতে অনুরোধ জানিয়ে সহযোগিতা চাওয়ার পর শুরু হয় জঙ্গী আস্তানায় অভিযান। কিন্তু অভিযান শুরুর আগেই কৌশলে কুমিল্লার জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যায় দুই জঙ্গী আনাস ওরফে আনিস ও রনি। জঙ্গীবিরোধী অভিযানের পর পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, কুমিল্লার কোটবাড়ির জঙ্গী আস্তনায় আনিস ও রনি নামের দুই জঙ্গী ছিল। এর মধ্যে আনাস ওরফে আনিসের বাড়ি নোয়াখালী। বয়স ১৯-২০ বছর। সে পাঁচ মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছে। আরেকজনের নাম রনি। সে নব্য জেএমবির সদস্য। তার বয়স ২২-২৩ বছর। বাড়ি রাজশাহী। সেও পাঁচ মাস আগে নিখোঁজ হয়েছে। আনিস জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ার দিন সকাল বেলায়ই চলে গেছে। আরেকজন রনি বিকেল পৌনে চারটায় যখন জঙ্গী আস্তানা হিসেবে বাড়িটি চিহ্নিত করা হয়, তার আগেই হয়ত পালিয়ে গেছে। সূত্র জানায়, জঙ্গীদের একটি কৌশল আছে। একজন বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আরেকজনকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে যায়। এর মধ্যে যদি সে ফিরে না আসে, তাহলে অন্যজন বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এ পন্থা ব্যবহার করে হয়ত দ্বিতীয়জন বেরিয়ে গেছে। যে কারণে আস্তানায় আমরা কাউকে পাইনি। তবে আমরা নিশ্চিত, তারা দুজনই এখানে ছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের জঙ্গী আস্তানা থেকে দুই জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতেই কোটবাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তারা মার্চের ১ তারিখে এ বাসা ভাড়া নেয়। তারা প্রথমে সীতাকু- এলাকায় বাসা ভাড়া নিতে চেয়েছিল কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তারা নিতে পারেনি। এজন্য ওই জেএমবিদের পরামর্শে তারা এখানে আসে। জঙ্গী আস্তানার ঘটনাস্থলে পাঁচ কেজি ওজনের দুটি বোমা পাওয়া যায়। তবে দুই জঙ্গী আনাস ওরফে আনিস ও রনি কোন্ জঙ্গী আস্তানায় আত্মগোপন করে আছে তার হদিস এখনও পাওয়া যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের মার্চে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন জঙ্গীকে। কয়েক ঘণ্টা পর এক জঙ্গী হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব হাসানকে টাঙ্গাইল পুলিশ আটক করে। পরদিন ভোরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব। অপর পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গী হচ্ছেÑ জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমারু মিজান ও সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন। পলাতক দুই জঙ্গীই বোমা বিশেষজ্ঞ। দুই জঙ্গী পালিয়ে যাওয়ার পর বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করাসহ তাদের বায়োডাটা পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই জঙ্গীকে ছিনিয়ে নেয়ার সময় জঙ্গী হামলায় প্রিজনভ্যানে কর্তব্যরত একজন পুলিশ নিহতসহ কয়েক পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, পলাতক জঙ্গী বোমারু মিজান জেএমবির প্রধান বোমা বিশেষজ্ঞ। সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ১৭ আগস্ট বোমা হামলাসহ কয়েকটি হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাদের মাধ্যমেই হ্যান্ডগ্রেনেড, বেল্ট বোমা, টিফিন ক্যারিয়ার বোমা, বই বোমা, জ্যামিতিক বোমাসহ নতুন ধরনের বিভিন্ন বোমার উদ্ভাবন ও ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্ধর্ষ এ দুই জঙ্গীসহ আত্মঘাতী চার জঙ্গী পালিয়ে থাকার ঘটনায় নতুন করে জঙ্গী সংগঠনকে সংগঠিত করাসহ নাশকতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সিলেটের আতিয়া মহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যেসব জঙ্গী নিহত হয়েছে তাদের পরিচয় উদ্ধার করা না যাওয়ায় শীর্ষ জঙ্গী মাঈনুল ইসলাম মুসা আছে কি-না তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
×