ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাফাত ও সাদমানের মোবাইলের ফরেনসিক পরীক্ষার অনুমতি

সাফাতের ড্রাইভার ও বডিগার্ডের সামনে নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২২ মে ২০১৭

সাফাতের ড্রাইভার ও  বডিগার্ডের সামনে  নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী বনানীর হোটেলে ধর্ষণ মামলার আলোচিত আসামি নাঈমকে প্রধান আসামি সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও বডিগার্ড রহমতের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার ধরে তাদের পাশাপাশি বসিয়ে এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিকে দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ভিডিওচিত্র উদ্ধারের জন্য আসামি সাফাত ও সাদমানের জব্দকৃত পাঁচটি মোবাইল সেট ও তাদের ব্যবহৃত পাওয়ার ব্যাংক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। ডিবি পুলিশ জানায়, শনিবার গভীররাতে ধর্ষণ মামলার আলোচিত আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমের সঙ্গে প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের ড্রাইভার বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত ওরফে আজাদকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তাদের পাশাপাশি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় নাঈম স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সে একজনকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও দুই পক্ষের অনেক কথায় অমিল ছিল। নাঈমের সঙ্গে বিল্লালের হালকা তর্ক হয়। তাদের ধর্ষণের ভিডিও করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তারা এখনও ভিডিও’র বিষয়ে কিছু বলেনি। গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, আমরা একটি মারধরের ভিডিও পেয়েছিলাম। এছাড়া কোন ভিডিও পাইনি। এর আগে আদালতের নির্দেশে নাঈমকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রবিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিন ছিল তার। দুই আসামির পাঁচটি মোবাইল সেট ও পাওয়ার ব্যাংক সিআইডিতে ॥ ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ভিডিওচিত্র উদ্ধারের জন্য আসামি সাফাত ও সাদমানের জব্দ করা পাঁচটি মোবাইল সেট ও তাদের ব্যবহৃত একটি পাওয়ার ব্যাংক ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে আদালত। রবিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমির আবেদনে ঢাকার মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন এ আদেশ দেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আব্দুল মান্নান জানান, আবেদন করা ডিভাইসগুলো হচ্ছে, আসামি সাফাত ও সাদমানের কাছ থেকে জব্দ করা ইংল্যান্ডের তৈরি একটি ভার্চ হ্যান্ড সেট, ওয়ালটন এল-১০ মডেলের মোবাইল একটি, হুয়াওয়ের মোবাইল ফোন একটি, নোকিয়া মোবাইল ফোন একটি, আইফোন-এস একটি এবং একটি এইচ ডেল্টা ব্র্যান্ডের পাওয়ার ব্যাংক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ধর্ষণের সময় সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলীকে দিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। প্রধান আসামির গাড়িচালক বিল্লালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ॥ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিচ্ছেন। রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসানের আদালতে তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমা আদালতে বিল্লালকে উপস্থিত করে জবানবন্দী গ্রহণের আবেদন করেন। একই সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার দুই নম্বর আসামি নঈম আশরাফ ওরফে হালিমের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। পরে সিআইডির পরীক্ষাগারে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায়। গত বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। শনিবার সাফাতের বডিগার্ড রহমত আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বনানী থানার গাফিলতি ॥ রাজধানীর বনানীতে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ও দায়িত্বে গাফিলতির বিষয়টি গঠিত তদন্ত কমিটি আরও তিনদিন সময় নিয়েছে। রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন শেষে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ডিএমপির মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। সূত্রগুলো জানায়, এ পর্যন্ত তদন্তে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম ও অসঙ্গতি পেয়েছে কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিছু অনিয়ম ও অসঙ্গতি নজরে এসেছে। এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি পূর্ণাঙ্গভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাফিলতির প্রমাণ তদন্তে মিললে অবশ্যই শাস্তির সুপারিশ করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১২ মে এডিশনাল কমিশনার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন ও যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলের একটি কক্ষে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে সারারাত আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ এবং তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম। এই ঘটনায় সহযোগিতা করে রেগনাম গ্রুপ ও পিকাসো রেস্তরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন এবং তার দেহরক্ষী রহমত আলী। গত ৬ মে এই ঘটনায় রাজধানীর বনানী থানায় তাদের আসামি করে মামলা হয়। মামলার সব আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সাফাত ও সাদমান ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
×