ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ মে ২০১৭

ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে ॥  অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এই হার কত কমছে তা চূড়ান্ত করা হবে চলতি মাসের শেষ সপ্তায়। তবে ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। রবিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে বিকেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থাকছে না এটা নিশ্চিত। তবে কত কমছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা আইডিবি প্রশ্ন না তোলায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান দ্বন্দ্ব নিয়ে এখনই কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ঋণের সুদ কমাতে উদ্যোক্তারা সঞ্চয়পত্র ও আমানতের সুদ হার কমানোর কথা বলছেন। তবে আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হচ্ছে না। বাজেট ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা হতে পারে। এদিকে, ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান লিখিত বক্তব্যে বাজেট প্রস্তাবনা দেন অর্থমন্ত্রীকে। ওই প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, বেসরকারী বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা এবং বেসরকারী বিনিয়োগ ২২ ভাগ থেকে ২৯ ভাগ এ বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে শিল্পায়ন সহজীকরণে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত ৮ বছরে বিশেষত জ্বালানি ও বিদ্যুতখাতে বড় ধরনের ভূমিকা নিয়েছে, তবে ঢাকা চেম্বার মনে করে, ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করার জন্য অবকাঠামোখাত উন্নয়নে বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়ন পূর্বশর্ত, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ব্যবসার পরিপূর্ণ সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডালিটি-এর আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ‘ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মনিটরিং এ্যাডভাইজরি অথরিটি (নিডমা) নামে একটি প্লাটফর্ম গঠন করা প্রয়োজন। ঢাকা চেম্বারের এই প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য দেশের সকল বন্দরসমূহে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ খালাস প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণ করা হবে। তিনি বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাকে বাড়ানোর লক্ষ্যে রেমিটেন্স পাঠানোর সকল ধরনের চার্জ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে। অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে কর প্রদানকারীর সংখ্যা ১৬ লাখ এবং ২৮ লাখ মানুষের টিন রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে সরকার সেভিং সার্টিফিকেটের সুদের হার কমানোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে, তবে তা বিদ্যমান বাজারদরের চেয়ে কম হবে না। তিনি ঢাকা চেম্বার কর্তৃক ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মনিটরিং এ্যাডভাইজরি অথরিটি গঠনের প্রস্তাব কে স্বাগত জানান। ঢাকা চেম্বারের আরও যেসব প্রস্তাব বাজেট বিনিয়োগবান্ধব করার জন্য ঢাকা চেম্বার যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তা হলো-শিল্পখাতে কর্মসংস্থান ১৮ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, নতুন আরও ১২ দশমিক ৯ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ এবং এসএমই খাতের উন্নয়ন, রফতানিমুখী বাজার সম্প্রসারণে রফতানি বহুমুখীকরণ, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো, পুরাতন অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করা, করের আওতা বাড়ানো এবং কর-অবকাঠামো ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। আয়কর আইন ও বিধি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে-বর্তমান ব্যক্তি শ্রেণীর করসীমা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো এবং সর্বাধিক কর অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ ভাগ কর আরোপ করা। কর্পোরেট কর পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে হ্রাস করে ২৫ ভাগ, নন পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৩০, মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ৩৫ এবং ব্রোকারেজ হাউসের ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে হ্রাস করে ৩২ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে সরকার সর্বস্তরে ও খুচরা পর্যায়ে ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু এতে করে কোনভাবে যেন দ্রব্যসামগ্রীর দাম না বাড়ে, সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদিও রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছে ভ্যাট আরোপের ফলে কোন পণ্য সামগ্রীর দাম আর বাড়বে না। সরকার নিজ খরচে ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) ব্যবসায়ীদের প্রদান করার বিষয়টি আবার ভাবতে পারে। কারণ এর লজিস্টিক সুবিধা এখনও সর্বত্র সহজলভ্য নয়। ভ্যাট সংগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহে মোবাইল ইলেক্ট্রনিক সিস্টেম উন্নয়ন করা প্রয়োজন যাতে এর ব্যবহারটা সহজ এবং দ্রুততর হতে পারে। ভ্যাট আইনটি নতুন ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতির আওতায় হওয়া উচিত, যাতে করে ভ্যাট সংগ্রহকারী মোবাইলের মাধ্যমে ভ্যাট পেমেন্ট রিসিভ করবে এবং এ পদ্ধতি সকল স্থানে ভ্যাট সংগ্রহের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করতে পারে। ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহী করার লক্ষ্যে ট্যাক্স কার্ডের মতো ভ্যাট স্মার্ট কার্ড প্রদানের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আর যে ব্যবসায়ীর টার্নওভার ২ কোটি ২০ লাখ তাকে ভ্যাট স্মার্ট কার্ড প্রদানের প্রস্তাব করছি। মূল্য সংযোজন কর আরোপের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রত্যেক পণ্যে যোগ না করার জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে। এতে করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক টার্নওভার শূন্য থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নো ভ্যাট এবং ৮০ লাখ টাকায় নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা হলো-বর্তমানে নদী পথের উন্নয়নের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন, রেলপথের উন্নয়নে বর্তমান রেলওয়েতে বাজেট বরাদ্দ ৯ হাজার ১১৫ কোটি থেকে বাড়ানো উচিত। পিপিপির আওতায় প্রাইভেট সেক্টরকে উন্নয়ন কাজে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন, ঢাকা চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক করিডর দ্রুত নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ট্রিপস সুবিধা কাজে লাগিয়ে ওষুধ রফতানি বাড়ানো, পাটের বহুমুখীকরণ, চামড়া শিল্পের উন্নয়ন, এসএমইখাত উন্নয়ন, পোশাক খাতের উন্নয়ন, ইলেকট্রনিক এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স এসেম্বলীর ৫ ভাগ আর্থিক প্রণোদনা ও ডিউটি ফ্রি মেশিনারিজ আমদানির সুযোগ এবং বিদ্যুতের ওপর কর রেয়াত সুবিধা প্রদানের কথা বলেছে ডিসিসিআই। অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই উর্ধতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, এফসিএ, ডিসিসিআই পরিচালক হুমায়ুন রশিদ, মোঃ আলাউদ্দিন মালিক, রিয়াদ হোসেন, সেলিম আকতার খান বক্তব্য রাখেন।
×