ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী নারীরা সব থেকে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২২ মে ২০১৭

প্রতিবন্ধী নারীরা সব থেকে বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীরা সবচেয়ে বেশিমাত্রায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীরা এ নির্যাতনের অর্থ ও সম্ভাব্য তাৎপর্য সম্পর্কে উপলব্ধি করতে অক্ষম হওয়ায় তারা এ ধরনের ঘটনাগুলো অন্য কারো কাছেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে না। যোগাযোগের বা ভাব বিনিময়ের অসামর্থ্যরে কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারীরা দ্বিতীয় মাত্রায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আত্মীয় বা প্রতিবেশী দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন। এসব ঘটনায় পিতামাতা তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানের যৌন নির্যাতনের কথা জানলেও কোন ব্যবস্থা নিতে চায় না। সম্প্রতি, উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ) কর্তৃক ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাসরত একশ’ প্রতিবন্ধী নারীর সার্বজনীন অবস্থার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, রাজধানীর ৬৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী পারিবারিক নিজ পরিবারে শারীরিক, মানসিক ও বহুমুখী নির্যাতনের শিকার হন। সেই সঙ্গে, ৮৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী আইনী সহয়তা পায় না। উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডব্লিউডিডিএফ)-এর উদ্যোগে রবিবার সকাল ১০টায় ডেইলি স্টার ভবনের এ এফ মাহমুদ সেমিনার হলে ‘প্রতিবন্ধী নারীর সার্বজনীন অবস্থার ওপর পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন জাতীয় পর্যায়ে শেয়ারিং ও বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বসবাসরত প্রতিবন্ধী নারীর সার্বজনীন অবস্থার ওপর পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন ড. ডাব্লিউডিডিএফের গবেষক হারুনুর রশিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেবুন্নেছা আফরোজ (এমপি)। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, রাজধানীর ৭৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। বিদ্যালয়ে যারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের বাধার মুখোমুখি হয়েছেন। ৪৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীরা স্বাস্থ্য সেবা পান না। ৭৮ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ পাননি। ৬৭ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীরা নিজ পরিবারে শারীরিক, মানসিক ও বহুমুখী নির্যাতনের শিকার হন। ৮৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীরা আইনী সহয়তা পায়না, বাকি ১৬ শতাংশ এর মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ সাধারণ বিচার প্রার্থীর মতো সুযোগ পান। বিচার ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী নারীদের বাধা শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ বিভিন্ন প্রকার আইনে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীদের বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা আসে। এছাড়া, বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের স্বাক্ষ্য গ্রহণকালে ভাষাগত যোগাযোগ ও ভাব বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ইশারা ভাষার ব্যবহার করতে হবে সেই নির্দেশনা না থাকার কারণে বাক, শ্রবণ বা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীরা সুবিচার পায় না। তাছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীদের স্বাক্ষ্য অনেক সময় আদালত গ্রহণ করে না। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণের অবকাঠামো প্রতিবন্ধী বান্ধব না হওয়ার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী নারীরা আদালতে যেতে পানে না। প্রতিবন্ধী নারীরা প্রথম বাঁধার শিকার হন পুলিশ স্টেশন ও মেডিক্যাল রিপোর্ট পেতে। সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় প্যানেল আইনজীবীগণ বলেন বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারীদের ভাষা বোঝার জন্য বিচার চলাকালীন ইশারা ভাষার ব্যবহার, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কে কোন আইনী নির্দেশনা নেই। সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী/ নারীদের স্বাক্ষগ্রহণের পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা কোন আইনে নাই। নির্যাতিতা প্রতিবন্ধী নারীদের সরক্ষা ও বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ কোন আইনেই নির্দেশনা নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসচেতনতার কারণেও সুবিচার প্রাপ্তির অধিকার থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বঞ্চিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কামরুন্নাহার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, খুশি কবির, নির্বাহী পরিচালক, নিজেরা করি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. সানজিদা আক্তার, সহকারী অধ্যাপক, জেন্ডার এ্যান্ড ওমেন স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, রঞ্জন কর্মকার, নির্বাহী পরিচালক, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট। এছাড়াও সংলাপে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ এর প্যানেল আইনজীবীগণ ও আইনী সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের হাইকোর্ট ও জোজ কোর্টের আইনজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউডিডিএফের চেয়ারপার্সন শিরিন আক্তার। এছাড়াও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ প্রতিবন্ধী নারীর সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়সমূহ বিষদ আলোচনা করেন এবং বিচার ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী নারীদের উপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশা ব্যক্ত করেন।
×