ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের মতবিনিময়

দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ মে ২০১৭

দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগামী নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সামনের নির্বাচন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায়। তবে কিছু নেতাকর্মীর আচরণে বিপুল উন্নয়নের পরও জনগণ অসন্তুষ্ট হয়, যা ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই দলের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি-নেতাকে ছাড় দেবেন না দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়নের মধ্য দিয়ে দল থেকে সব ধরনের পরগাছা দূর করতে হবে। রবিবার ধানম-ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে সারাদেশ থেকে আগত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর দফতর ও উপ-দফতর সম্পাদকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। তারা (বিএনপি) যখন ক্ষমতায় ছিল তখন দফায় দফায় আমাদের পার্টি অফিসে হামলা, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তিনি বলেন, হঠাৎ কী কারণে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অভিযান, সেটা নিয়ে আমি শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে জানিয়েছেন, গোয়েন্দা সংস্থার নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব এ অভিযানের সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। অথচ তারাই গণতন্ত্রের নামাবলি পড়ে অতীতে ঘৃণ্য-জঘন্য অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেটা এ দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তারা (বিএনপি) যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাদের পার্টি অফিসে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। আমাদের সিআরআইয়ের (সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফর্মেশন) অফিস সিলগালা করে দিয়েছিল। তাদের সময় আওয়ামী লীগ অফিসে শুধু অভিযান চালানো হয়নি, দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল। অফিস লক্ষ্য করে বোমা হামলা হয়েছে। এসব কি তারা ভুলে গেছে? তখন কি গণতন্ত্র সঠিক ছিল? ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার ওপর সুপরিকল্পিতভাবে যে গ্রেনেড হামলা করেছিল, সেটা কোন্ গণতন্ত্র? আইভি রহমানসহ ২৩ জনের রক্ত ঝরল। এটা রক্তাক্ত গণতন্ত্র ছিল। দৃষ্টান্ত কারা স্থাপন করেছে? বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। গণতন্ত্রের নামে যে হত্যা-নির্যাতন করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে একুশে ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করতে দেয়া হয়নিণ্ড এটা কি গণতন্ত্র? বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে অতীতে ঘৃণ্য-জঘন্য অসংখ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সেটা এ দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। তিনি বলেন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়নের মধ্য দিয়ে দল থেকে সব ধরনের পরগাছা দূর করা হবে। তিনি বলেন, সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে নেত্রীর গাইডলাইন ফলো করবেন যাতে আগাছা, পরগাছা ঢুকতে না পারে। গণমাধ্যমের সামনে সতর্ক হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যমের কাছে আমাদের যেতে হয়, তারাও আসে। কিন্তু গণমাধ্যম স্পর্শকাতর বিষয়। তাদের সঙ্গে কৌশলী আচারণ করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমের সবাই আওয়ামী লীগ করে না। তাই আমরা যখন গণমাধ্যমে কথা বলব, তখন অত্যন্ত সতর্কভাবে বলব। গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এটা দলের স্বার্থে। আর গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের কাছে আসেন, দলের স্বার্থ রক্ষা করে তাদের তথ্য দিতে হবে। প্রেস রিলিজ দিতে হবে সতর্কভাবে। ঘরের কথা পরকে বলার সময় একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করছেন। আর আপনারা মানুষের সঙ্গে ভাল আচরণ ও ভাল কাজ করুন। তাহলে দেশের মানুষ আবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে। দেশের মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করলেই উন্নয়ন কর্মকা- অর্থবহ হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেশের আইসিটি বিপ্লবের রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আমাদের দেশেও চালু করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তারা ভিশন দেবে কিন্তু লেটেস্ট টেকনোলজি মানবে না, তা হতে পারে না। আর কী কারণে ইভিএম গ্রহণযোগ্য নয় তা বিএনপিকে স্পষ্ট করতে হবে। সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমেদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, অসীম কুমার উকিল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আবদুস সবুর, শামসুন্নাহার চাঁপা, এসএম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সভায় জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, মহানগর কমিটির দফতর এবং উপ-দফতর সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শেষে আওয়ামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ ইনফর্মেশন জেলা দফতর সম্পাদকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত নেতাদের সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের ওপর প্রশিক্ষণ দেন। এরপর প্রতিটি জেলায় একটি করে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়। শনিবার গণভবনে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আটটি বিভাগীয় জেলায় আটটি ল্যাপটপ বিতরণ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ল্যাপটপের অর্থায়ন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক তৎপরতা বৃদ্ধি করুন পরে বিকেলে একই স্থানে সারাদেশ থেকে আসা জেলা-মহানগর কমিটির প্রচার, তথ্য ও গবেষণা এবং উপ-প্রচার সম্পাদকদের সঙ্গে আরেকটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এবং প্রচার উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায়ও বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দলীয় পদ-পদবি প্রসাধনী বা শোপিস নয়। যাকে যে পদ দেয়া হবে তাকে সে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যেই জাতীয় কমিটির বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে দলের বাজেট প্রণয়ন করা হবে। তিনি এখন থেকেই নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কেন্দ্রভিত্তিক তৎপরতা শুরু করার নির্দেশ দেন।
×