ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চিনি চাল ভোজ্যতেলে নতুন ভ্যাট-ট্যাক্স নয়;###;শুল্কারোপ হচ্ছে না আমদানি ছোলা ডাল মসলায়

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকছে বাজেটে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ মে ২০১৭

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকছে বাজেটে

এম শাহজাহান ॥ চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন করে এসব পণ্যে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা থেকে বিরত থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমদানিকৃত ডাল, ছোলা ও মসলা জাতীয় পণ্যে কোন শুল্কারোপ করা হবে না। রোজা সামনে রেখে ইতোমধ্যে চিনি ও ছোলার দাম বেড়ে গেছে। আর গত কয়েক মাস ধরেই অস্থির চালের বাজার। এবার রোজা শুরুর দুদিনের মধ্যেই আগামী ১ জুন বাজেট ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেওয়াজ অনুযায়ী বাজেট ঘোষণার পরপরই কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। তবে এবার ভোগ্যপণ্যের দাম যাতে আর না বাড়তে পারে সে লক্ষ্যে বাজেটে নতুন উদ্যোগের কথা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। নতুন ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার নির্ধারণ করা হলেও ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আইন সংশোধন করা হচ্ছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ভ্যাট হার নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইনটি সংশোধন না করে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হলে ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে শুধু ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ভোক্তাদের ওপরও বাড়তি চাপ তৈরি করবে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এ বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ভ্যাট হার কিছুটা নামিয়ে আনা হয়েছে। জানা গেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় চলতি বাজেটে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আমদানিকৃত চালের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। চালের ওপর যেন আর কোন শুল্কারোপ না করা হয় সে জন্যও বাজেট প্রস্তাবনায়ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে দেশী শিল্প রক্ষায় আমদানিকৃত চিনির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূূরক শুল্ক আরোপ করা আছে। তবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যাতে এসব পণ্যের দাম আর না বাড়ে সে লক্ষ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ এবং রসুনসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি বা রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেটের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনকল্যাণ ও ভোক্তা স্বার্থ নিশ্চিত করা। তাই ভোক্তাদের স্বার্থে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজেটে কিছু নতুন উদ্যোগ থাকবে। এদিকে, রোজা শুরুর আগে এবার সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ শুরু করেছে। দেশের ৬৪ জেলা প্রশাসককে বাজার নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাজধানী ঢাকায়ও বাজার মনিটরিং করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে ট্যারিফ কমিশন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, টিসিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পণ্যের আমদানি, মূল্য ও মজুদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেসরকারী খাতে বিপুল ভোগ্যপণ্যের আমদানি হয়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম কমছে না। এছাড়া টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করলেও পণ্যের মান ও যোগান যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছে। রমজান মাসের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাটি আরও বেশি পণ্যের মজুদ বাড়াতে পারত। একই সঙ্গে ট্রাকের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারসহ ব্যবসায়-বাণিজ্যে সিন্ডিকেট চক্র অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। রমজান এলে এদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। বিশেষ করে গুটিকয়েক বড় কোম্পানির হাতে চলে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। দেশের ৫ থেকে সাতটি বড় কোম্পানি একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল এবং চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। এছাড়া পেঁয়াজ, ডাল এবং মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছে শ্যামবাজার ও মৌলভীবাজার ভিত্তিক কয়েকটি ট্রেডিং কোম্পানি। বিশ্ববাজার থেকে প্রতিদিন পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে দাম কমানো হয় না। বরং বিভিন্ন সময়ে মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। রমজান সামনে রেখে পণ্যের দাম বাড়াতে এ চক্রটির কারসাজি বন্ধ হচ্ছে না। এদিকে, ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে গত কয়েক বছর আগে ১৭ পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পণ্যগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও গত এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কারণ ছাড়াই খুচরা বাজারে ইতোমধ্যে ডজনখানেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছেÑ সয়াবিন তেল, পামতেল, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, চিনি, ধনিয়া, জিরা, আদা, হলুদ, রসুন, তেজপাতা ও খাদ্য লবণ। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেল, লবণ এবং চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বরাবরই বলে আসছেন, ভোক্তাবান্ধব সরকার ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করবে। আর রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই।
×