ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আটক পাঁচজন জঙ্গী নয়- দাবি স্বজনদের;###;RAB হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে শেষে তিনজনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর;###;মেলেনি অস্ত্র বিস্ফোরক

আত্মসমর্পণে সমাপ্ত ॥ নরসিংদীর জঙ্গী আস্তানায় ১৯ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ মে ২০১৭

আত্মসমর্পণে সমাপ্ত ॥ নরসিংদীর জঙ্গী আস্তানায় ১৯ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান

শংকর কুমার দে/মোস্তফা কামাল সরকার ॥ নরসিংদী সদরে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে অবস্থানরত পাঁচ তরুণের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে। পাঁচ তরুণকে র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জঙ্গী আস্তানার সন্দেহের বাড়িটিতে কোন অস্ত্র বা বিস্ফোরক পায়নি র্যাব। সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গীরা পালিয়ে এসে নরসিংদীর আস্তানায় আত্মগোপন করেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয় নরসিংদীতে। তবে আটক ৫ জন জঙ্গী নয় বলে স্বজনদের দাবি। দীর্ঘ প্রায় ১৯ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জঙ্গীবিরোধী অভিযানের রক্তপাতহীন অবস্থায় সমাপ্তি ঘটার মধ্য দিয়ে জনমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে এনেছে। RAB ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র্যাব সূত্র জানায়, নরসিংদীর গাবতলীর চিনিসপুর ইউনিয়নের উত্তর গাবতলী গোরস্তানের উত্তর পাশে এক প্রবাসীর মালিকানাধীন একতলা ওই বাড়ি শনিবার সন্ধ্যা থেকে ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার সন্ধ্যা থেকে বাড়িটি ঘেরাও করে রাখার পর রবিবার সকালে আত্মসমর্পণের আলোচনার জন্য স্বজনদের নিয়ে ভেতরে যায় র্যাব। এরপর সকাল সোয়া দশটা থেকে পৌনে এগারোটার মধ্যে একে একে পাঁচজনকে ওই বাড়ি থেকে বের করে আনতে দেখা যায় র্যাব সদস্যদের। পরে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব-১১ কার্যালয়ে। এই পাঁচ তরুণ হলেনÑ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার আগুয়ানদী গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবু জাফর, নরসিংদী সদর উপজেলার চরদিঘলদী গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে সালাহউদ্দিন, নরসিংদী সদরের চরভাসানিয়া পাঁচ আনিপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে বাসিকুল ইসলাম, গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার আবদুল মজিদের ছেলে মাসুদুর রহমান ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকার মশিউর। জঙ্গী আস্তানা কথিত বাড়ি তল্লাশি শেষে বেলা ১টার পর র্যাব সদস্যরা তালা দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। যেভাবে আত্মসমর্পণ রবিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে র্যাবের মুফতি মাহমুদ খান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ভেতরে অবস্থানকারীদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে এবং তারা আত্মসমর্পণে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। আমরা সবদিক দিয়েই চেষ্টা করছি, যাতে এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাটা থাকে। সবদিক থেকেই চেষ্টা করছি তাদের আত্মসমর্পণ করানোর জন্য। তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমরা এটা চেষ্টা করছি। অভিযান শেষে মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ওই এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় সার্বিক নিরাপত্তার বিবেচনায় তারা শনিবার রাতে অভিযান বন্ধ রাখেন। ওই সময়ে তারা ভেতরে অবস্থানরতদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আত্মসমর্পণের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। আমরা তাদের আত্মীয়স্বজনকে ভেতরে নিয়ে গিয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়। আটক ৫ জনকে র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আটক পাঁচ তরুণের বিষয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, পাঁচজনের নাম পেয়েছি, আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়ির ভেতর থেকে পাঁচজনকে বের করে আনা হয়। এর মধ্যে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে একজন, ১০টা ৫ মিনিটে দ্বিতীয় জন, ১০টা ৯ মিনিটে তৃতীয় জন, ১০টা ১৭ মিনিটে চতুর্থ জন ও ১০টা ২৭ মিনিটে পঞ্চম জনকে বের করে আনা হয়। এরা হলেনÑ মাসুদুর রহমান, সালাউদ্দিন, আবু জাফর, নাসিকুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পরপর পাঁচ যুবককে ওই বাড়ি থেকে বের করে মাইক্রোবাসে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় র্যাব। তালা মেরে দেয়া হয়েছে জঙ্গী আস্তানাটি নরসিংদীর গাবতলীতে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটি তালা মেরে রেখে ঘটনাস্থল ছেড়েছেন র্যাব সদস্যরা। রবিবার দুপুরে তল্লাশি শেষে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ার পর বাড়িটি তালা মেরে দেয় র্যাব। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গী আস্তানাটিতে তিনটি ঘর। ঘরে ছড়ানো-ছিটানো ইসলামী বই ছাড়াও রান্নাঘরে তৈজসপত্র রয়েছে। রান্নাঘরে রান্নার হাঁড়ি-পাতিলগুলো আকারে বেশ বড়। এছাড়া, ঘরের প্রবেশমুখের বাইরের দরজায় অনেক জোড়া জুতা-স্যান্ডেল ছড়ানো- ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। ঘরের মধ্যে দেখা গেছে, মেসের মতো সিঙ্গেল চৌকি ও পড়ার টেবিল। মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচয়ে ভাড়া নেয়া হয় সালাউদ্দিন নামের ওই মাদ্রাসার কামিল শ্রেণীর একজন ছাত্র পরিচয় দিয়ে চলতি মাসের ৩ তারিখ মঈন উদ্দিনের বাড়িটি ভাড়া নেয়। মঈন উদ্দিনের বাড়ির কাছে নরসিংদী জামেয়া কাশেমিয়া মাদ্রাসা। এরপর ওই বাড়িতে সালাউদ্দিন চার-পাঁচজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। র্যাবের দাবি, সম্প্রতি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিচয়ে বাড়িটি ভাড়া নেয় জঙ্গী সন্দেহভাজন সালাহউদ্দিন। বাড়িটিতে সেসহ আরও ৫-৬ জন রয়েছে। বাড়িটির মালিক লিবিয়া প্রবাসী মাঈনউদ্দিন। তবে তার পরিবার সেখানে থাকেন না। এই ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার বিকেল চারটায় নরসিংদী শহরতলির বাইরে গাবতলী এলাকায় জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে নির্মাণাধীন একটি দ্বিতল বাড়ি ঘিরে ফেলে র্যাব-১১-এর একটি দল। যা বলেন র্যাব কর্মকর্তা র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আতিয়া মহলে যে জঙ্গীরা ছিল তাদের সঙ্গে এখানে যারা ছিল তাদের কিছু সম্পৃক্ততার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত এই পাঁচজনের মধ্যে কয়েকজন সেই জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকিটা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বলা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ওই বাড়ির তিনটি কক্ষ তল্লাশি করে বাহ্যিকভাবে কোন অস্ত্র বা বিস্ফোরক পায়নি আমাদের বোমা নিষ্ক্রিয়করী দল। আমরা আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করব। তাদের মধ্যে সিলেটের আতিয়া মহল থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন জঙ্গী রয়েছে বলে র্যাবের দাবি। বাড়ির মালিক নরসিংদী শহর থেকে কিছু দূরে জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার কাছে ওই বাড়ির মালিক মাইনুদ্দিন থাকেন কুয়েতে। বাসাটি দেখাশোনা করেন জাকারিয়া নামে তার এক প্রতিবেশী। জাকারিয়া জানান, গত ৩ মে ওই বাসা ভাড়া নেন তিন অবিবাহিত পুরুষ। আর স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, ওই বাসার তরুণ বাসিন্দারা মূলত টিউশনি করতেন। তাদের আচরণে সন্দেহজনক কিছু আছে বলে তাদের মনে হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস শনিবার রাতে নরসিংদীর গাবতলীর উত্তরপাড়ায় সন্দেহভাজন জঙ্গী আস্তানা থেকে আবু জাফর মিয়া নামের এক ছাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেছেন। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বাঁচান। আমরা নিরপরাধ। আমরা আওয়ামী লীগের কর্মী। আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। প্লিজ আমাদের বাঁচান। আমরা সাধারণ ছাত্র। প্লিজ, আমাদের উদ্ধার করুন। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।’ আবু জাফর মিয়া নরসিংদী সরকারী কলেজের ছাত্র। নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে তিনি শনিবার রাতে আরেকটি পোস্টে লেখেন, ‘সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্যারদের উদ্দেশ করে বলছি, আমরা নিরপরাধ। আমরা কখনও শিবির, জঙ্গীবাদ সম্পর্কে ভাল করে জানিও না। প্লিজ, আপনারা আমাদের সার্চ করুন। দেখুন কিছু পান কি না। আমরা নিরপরাধ। বাইরে থেকে আমাদের ছিটকিনি লাগানো। প্লিজ, ছিটকিনি খুলে আমাদের উদ্ধার করুন। স্বজনদের দাবি, জঙ্গী নয় শনিবার সন্ধ্যায় র্যাব ওই বাড়ি ঘেরাও করার পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাতেই সেখানে উপস্থিত হতে শুরু করেন স্বজনরা। নরসিংদীর গাবতলী জমিয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র মাসুদুর রহমানের বাবা আব্দুল মজিদ ও বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মাসুম ঘটনাস্থলে পৌঁছান রাত ১১টার দিকে। মাসুদের বাবা মজিদ বলেছেন, মাসুদ আগে গাজীপুরের পোড়াবাড়ির একটি মাদ্রাসায় পড়ত। বছর দুই আগে সে গাবতলীর এ মাদ্রাসায় আসে। মাসুদ দাখিল পরীক্ষার্থী। সে সালাহউদ্দিনের কাছে প্রাইভেট পড়তে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। সে জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। অপরাধী হলে প্রচলিত আইনে তার বিচার করেন। মাসুদ তার বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে বলেছেন, শনিবার বিকেল ৪টায় এখানে প্রাইভেট পড়তে আসছিলাম। সাড়ে ৪টার দিকে দরজায় আওয়াজ শুনি। গিয়া দেখি বাইরে দিয়া লাগানো। জানালা দিয়া বাইরে তাকাইয়া দেখি চারদিকে পুলিশ ঘেরাও কইরা রাখছে। আমি মনে করছি হয়ত বাইরে কোন ঘটনা ঘটছে এজন্য পুলিশ দরজা লাগাইছে। আমি এরপরও দেড় ঘণ্টার মতো পড়ছি। কিন্তু মাগরিব পার হইয়া গেলে দেখি আস্তে আস্তে বাড়ির সামনে আরও পুলিশ জড়ো হচ্ছে। বাইরে থেকে ফোন দিতেছে এখানে নাকি জঙ্গী পাওয়া গেছে। আমরা জানিও না। ফোন দেয়ার পর জানতে পারলাম। পরে সবাইকে ফোন দিলাম। মাসুদ সে সময় বলেছেন, জঙ্গীবাদের সঙ্গে তার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই এবং আত্মসমর্পণ করতেও তার কোন আপত্তি নেই। নরসিংদীর শেখেরচর পৌলানপুর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, তার ছেলে সালাউদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করার পর এলাকায় ফিরে ওই বাসায় থেকে টিউশনি করার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ও প্রতি সপ্তাহেই বাড়িতে যায়। ও জঙ্গী না। আমার ভাতিজার কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি সকালে এখানে আসছি। শনিবার রাতে যখন বাড়িটি ঘেরাও করা হয় তখন আবু জাফর ফোনে তার স্বজনদের কাছে নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে বলেন, আমাদের বের হতে দেন। আমাদের বের করেন। আমরা যদি চুল পরিমাণও অপরাধী হই যে কোন শাস্তি আমরা মেনে নেব। আমাদের যদি সন্দেহ হয় তাহলে উনারা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে আসুক। আবু জাফর নিজেকে নরসিংদীর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের এক নেতার ভাগ্নে পরিচয় দেন। নিজেকে আড়াইহাজারের সরকারদলীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুকে নিজের আত্মীয় বলেও দাবি করেন আবু জাফর। ঘটনার সময়ে ওই বাড়িতে কী করছিলেন সে সম্পর্কে বলেন, তিনি নরসিংদী সরকারী কলেজ থেকে গণিতে মাস্টার্স করছেন। রবিবার পরীক্ষা থাকায় ওই বাড়িতে গেছেন পড়াশোনার জন্য। আবু জাফর এবার মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। আবু জাফরের ছোট ভাই আবদুল্লাহ বলেন, র্যাব পুলিশ চাইলে আমরা ভেতরে গিয়ে তাদের নিয়ে আসতে পারি। তাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জাফর দ্বিতীয়। রাতে ফোনে তিনি ওই বাসায় আটকা পড়ার কথা জানান। ফোন পেয়ে আমরা এখানে আসছি। আমার ভাই জঙ্গী না। রবিবার সকালে ওই বাড়ির সামনে কথা হয় বাসিকুল ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম, আবু জাফরের ছোট ভাই আবদুল্লাহ ও সালাউদ্দিনের বাবা আবদুর রহমানের সঙ্গে। একই রকম কথা বলেন তারাও। বাসিকুল ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম জানান, তার তিন ছেলের মধ্যে বাসিকুল সবার ছোট। নরসিংদী সরকারী কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করার পর জাফরের সঙ্গে ওই বাসায় থেকে চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে আসছিল সে। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরা বেগম বলেন, ওই বাসায় মেস করে থেকে কয়েকজন তরুণ টিউশনি করত বলে তারা জানেন। তারা জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত বলে তার কখনও মনে হয়নি। পরিবারও অনেক সময় জানে না র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আটক পাঁচ তরুণরা জঙ্গী নয়-পরিবারের এমন দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে অনেক সময় পরিবারও জানতে পারে না যে তারা জঙ্গীবাদে জড়িত। এ রকম ঘটনা আরও ঘটেছে। গুলশানের হলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন অভিযানে যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারও কিন্তু বিশ্বাস করতে পারে নাই। পরিবারের চিন্তার বাইরেই ছিল তার সন্তান জঙ্গীবাদে জড়িয়ে গেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তারা এই অভিযান চালিয়েছেন। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিটা জানা যাবে। বাড়ির মালিকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, চলতি মাসের ৩ তারিখ ওই বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছিল। তবে যারা ভাড়া নিয়েছিল তারা ছাড়াও আরও কয়েকজনের যাতায়াত ছিল সেখানে। তারা ভাড়া নেয়ার সময় কিছু কাগজপত্র দিয়েছিল। তারা তখন বলেছিল ৪-৫ জন থাকবে। কারা কারা থাকবে তাও সুনির্দিষ্ট করে বলেছিল। কিন্তু তারা যখন আত্মসমর্পণ করেছে, তখন দেখলাম আরও কিছু নতুন ফেস এখানে যুক্ত হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। বাসা ভাড়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়গুলোও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। বাড়ি ভাড়ার সময়ে যে ডকুমেন্টগুলি দিয়েছে সেগুলো সবাই দেয়। কিন্তু দেখা গেছে পরবর্তীতে সেগুলো মেলে না। এখানেও আমরা দেখেছি, যাদের আসার কথা ছিল তারা নাই। আমরা নতুন মুখ দেখছেন বলে র্যাব কর্মকর্তার দাবি। অভিযান শেষে র্যাবের মিডিয়া উইং মুফতি মাহামুদ বলেন, যুবকদের আত্মসমর্পণ করানোই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। অভিযান সম্পর্কে তিনি বলেন আতিয়া মহলের জঙ্গীদের সঙ্গে এখানকার আটকদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নেয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত শনিবার সন্দেহভাজন জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এরপর র্যাব ও পুলিশ আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখে বাড়িটি। বাড়ির ভেতর চার-পাঁচজন থাকতে পারে বলে ধারণা করে র্যাব। বাড়িটির ৫০০ গজ এলাকাজুড়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। রবিবার বেলা ১২টায় স্বজনদের সহযোগিতায় জঙ্গী সন্দেহের ৫ তরুণকে আত্মসমর্পণ করায় র্যাব।
×