ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নপত্র ফাঁসের জাল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২২ মে ২০১৭

প্রশ্নপত্র ফাঁসের জাল

মাত্র কয়েক দিন আগের ঘটনা। রাজধানীতে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের শিক্ষকসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা ফেসবুক হোয়াটসআপ, ভাইবার, টুইটার, ইমোসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা এইচএসসি পরীক্ষাসহ মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, নটর ডেম কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নিয়োগ পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। বলাবাহুল্য, প্রশ্ন জালের সুবিশাল নেটওয়ার্কের এটি একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ। এ ছাড়াও রয়েছে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র। এবার অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হলো। ফাঁসের খবর প্রচারিত হওয়ার পর শুক্রবার বিকেলের অংশের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও তার উত্তর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারী এক হিসেবে দেখা গেছে, ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ওই সময় থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকারী তথ্য অনুযায়ী ৮২ বার বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরি ও পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। ২০১৪ সালের জেএসসি, পিএসসি, এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ২০১৫ সালে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালেও পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের গণিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য পরিসংখ্যান বেসরকারী হিসেবে সংখ্যা আরও বাড়বে। এর মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত, বাতিল ও তদন্ত কমিটি হয়েছে মাত্র ৩০টি পরীক্ষায়। তদন্ত কমিটি হোতাদের চিহ্নিত করে প্রশ্ন ফঁাঁস রোধে বিভিন্ন সুপারিশ করলেও কোনটিরই বিশেষ বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রশ্নপত্রের জাল ছিন্ন করার কাজটি দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস সাম্প্রতিককালে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শুধু স্কুল-কলেজের পরীক্ষা তথা পাবলিক পরীক্ষাই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এটি এখন সমাজে এক ভয়াবহ আত্মঘাতী ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। আজকাল তথ্যপ্রযুক্তির কারণে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়ে পড়ছে। তাই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সমস্যার সমাধানও বের করা সম্ভব। প্রশ্নপত্র বিতরণে কৌশলগত ভিন্নতা আনলেও অবস্থার উন্নতি হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব কিছুকাল আগে বলেছিলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রেই প্রশ্ন ছাপার বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’পুলিশের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, দুই উদ্দেশ্যে শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করেন। তা হচ্ছে- পাসের হার বাড়ানো এবং অর্থ উপার্জন। পাসের হার বাড়ানোর কয়েকটি উদ্দেশ্য আছে। একটি হচ্ছে কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীকে সহায়তা, দ্বিতীয়টি স্কুলের পাসের হার বাড়ানো। সম্প্রতি যোগ হয়েছে কেন্দ্রের পাসের হার বাড়ানো। বিভিন্ন সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ঘটনা ধরা পড়েছে। সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই জাল যে কোন মূল্যে ছিন্ন করতেই হবে। দুটো উপায় রয়েছে। এক, এই আত্মঘাতী অপরাধকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। দুই, জালচক্রের শিকড় উপড়ে ফেলা। আর সময়ক্ষেপণ নয়, এখনই কাজ শুরু করা চাই।
×