ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন অপরাজেয় বাংলার স্থপতি আবদুল্লাহ খালেদ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২১ মে ২০১৭

চলে গেলেন অপরাজেয় বাংলার স্থপতি আবদুল্লাহ খালেদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যের ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পী শনিবার রাত পৌনে বারোটার দিকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫। তিনি স্ত্রী উম্মে কুলসুম, দুই ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ মহি, সৈয়দ আবদুল্লাহ জহির ও মেয়ে সৈয়দ আবদুল্লাহ নাহিদসহ অসংখ্য স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ছোট ছেলে সৈয়দ আবদুল্লাহ জহির জনকণ্ঠকে জানান, শনিবার রাতে বাবা মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ডাঃ আরিফ আহসানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এখন পর্যন্ত বাবাকে কোথায় সমাধি দেয়া হবে কিংবা জানাজা সংক্রান্ত বিষয়ে কোন পারিবারিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে গত ১০ মে থেকে বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানান জহির। জহির জানান, শেষ সপ্তাহে নিজের শহর সিলেটে একটি সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বাবাকে সিলেটের রয়েল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে ২ মে তাকে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় বারডেম হাসপাতালে। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ মুক্তিযুদ্ধের অনন্য স্মারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থিত ‘অপরাজেয বাংলা’ ভাস্কর্যের ভাস্কর। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত ম্যুরাল ‘আবহমান বাংলা’ ও ১৯৯৫-৯৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান দফতরের সামনে টেরাকোটার ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘অঙ্কুর’, ‘অঙ্গীকার’, ‘ডলফিন’, এবং ‘মা ও শিশু’। শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১৪ সালে শিল্পকলা পদক এবং ২০১৭ সালে সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। আব্দুল্লাহ খালিদ সিলেট জেলা শহরে জন্মগ্রহণের পর ১৯৬৯ সালে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চিত্রাঙ্কন বিষযে স্নাতক এবং পরে ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রাঙ্কন ও ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে আব্দুল্লাহ খালিদ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে সেখানকার লেকচারার থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর উদ্যোগে কলা ভবনের সামনে নির্মিতব্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ‘অপরাজেয বাংলা’ ভাস্কর্য নির্মাণের দায়িত্ব পান। তিনি ১৯৭৩ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৯৭৯ সালে ১৬ ডিসেম্বর নির্মাণ শেষ করেন। এরপর স্থাপনাটির উদ্বোধন হয়।
×