ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৮৬ কোটি ডলারের বিপরীতে ছাড় হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার

ভারতের প্রথম এলওসির ১৫ প্রকল্পের ৭টির কাজ এখনও চলমান

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২১ মে ২০১৭

ভারতের প্রথম এলওসির ১৫ প্রকল্পের ৭টির কাজ এখনও চলমান

আনোয়ার রোজেন ॥ ভারতের দেয়া প্রথম রাষ্ট্রীয় ঋণের (এলওসি) আওতায় রেলওয়ের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পটি নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। ছয় বছরের বেশি সময়ে মন্ত্রণালয় এক শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। ৬৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ের এ রেলপথ নির্মাণে দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধু এ প্রকল্প নয়, ভারতের প্রথম এলওসির আওতায় ২০১০ সালে নেয়া ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান রয়েছে। প্রায় সাত বছরেও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের মধ্যে গত ১৫ মে পর্যন্ত ছাড় হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে প্রথম এলওসির অর্ধেকেরও বেশি পরিমাণ অর্থ এখনও ছাড় হয়নি। অন্যদিকে ২০১৫ সালে ঘোষণা দেয়া ভারতের দ্বিতীয় এলওসির আওতায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা, সেগুলোর প্রস্তুতিতেই চলে যাচ্ছে প্রায় তিন বছর। ২০০ কোটি ডলারের বিপরীতে নেয়া ১৪ প্রকল্পের মধ্যে মাত্র পাঁচটি কেবল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি। বাকি প্রকল্পগুলো এখনও রয়েছে প্রস্তুতি পর্যায়েই। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, প্রথম এলওসির আওতায় চলমান সাত প্রকল্পের ছয়টিই রেলওয়ের। অন্যটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হওয়ার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মোটা দাগে এগুলো হলো প্রকল্প চিহ্নিত করতে এক বছরের বেশি সময় ব্যয় হওয়া; জমি অধিগ্রহণ জটিলতা; রেলওয়ের প্রকল্পে যোগ্য ঠিকাদার না পাওয়া; ভারত থেকে ৭৫-৬৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা গ্রহণে বাধ্যবাধকতা; দরপত্র অনুমোদনে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের দীর্ঘ সময় নেয়া এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ভারতীয় পরামর্শক নিয়োগ করতে না পারা। এছাড়া রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে রেলওয়ের কর্মকর্তাদের অদক্ষতা। ভারতের প্রথম এলওসির আওতায় চলমান প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে খুলনা থেকে মংলাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (৩০ কোটি ৮১ লাখ ডলার), ঢাকা-টঙ্গী এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর স্টেশনে রেলওয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ দ্বৈত লাইন নির্মাণ (১২ কোটি ৩১ লাখ ডলার), আশুগঞ্জ-আখাউড়া সেকশনের তিনটি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ (৩০ লাখ ৬৩ হাজার ডলার), দ্বিতীয় ভৈরব এবং দ্বিতীয় তিতাস ব্রিজ নির্মাণ (১০ কোটি ২১ লাখ ডলার), ১২০টি যাত্রীবাহী বিজি কোচ সংগ্রহ (৭ কোটি ৯১ লাখ ডলার)। এছাড়া আরও রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) আধুনিকীকরণ প্রকল্প (২০ লাখ ৪৭ হাজার ডলার)। এসব প্রকল্পের কাজ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ের আশুগঞ্জ-আখাউড়া সেকশনের তিনটি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। খুলনা থেকে মংলাবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে সাত বছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ অর্থ। ইআরডি এশিয়া উইংয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, দুটি কারণে ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগছে। প্রথমত, প্রকল্প ঠিক করতেই এক অনেক সময় পার হয়ে গেছে। আবার ভারতীয় ঋণের অধিকাংশ প্রকল্প রেলওয়ের। এ খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা রয়েছে। প্রতি বছরই রেলওয়ের এডিপির বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়া হয়। অন্যদিকে এলওসির প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের অনুমোদন লাগে, যা সময়সাপেক্ষ। সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ভারত প্রথম দফায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়। ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ওই ঋণের ২০ কোটি ডলার পরে অনুদান হিসেবে ঘোষণা করেন, যা পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে। ২০১৫ সালের জুনে ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন করে ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন। এটি দ্বিতীয় এলওসি নামে পরিচিত। প্রতিশ্রুতির নয় মাস পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের সঙ্গে ঋণ চুক্তি হয়। তার দুই মাস পর অর্থাৎ ওই বছরের ২৭ মে ঋণ চুক্তি কার্যকর হয়। অবশ্য তার আগেই শুরু হয় প্রকল্প যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ইতিমধ্যেই ১৪টি প্রকল্পের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে আরও কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ইআরডির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫টি প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে বিআরটিসির দুটি, সড়ক বিভাগের একটি, আইসিটি বিভাগের হাইটেক পার্ক নির্মাণ সংক্রান্ত একটি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্প রয়েছে। ভারতীয় ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, একটু সময় বেশিই লাগছে। আমাদের প্রচেষ্টায় কোন ঘাটতি নেই। তবে আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছি তৃতীয় এলওসির ক্ষেত্রে। যাতে ভবিষ্যতে আর প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি না হয় সেজন্য এখন আগেই প্রকল্প চূড়ান্ত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরে তৃতীয় এলওসির ঘোষণা দেয় ভারত। এর আওতায় নতুন করে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত।
×