ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ মে ২০১৭

খালেদার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার সকালে অর্ধশতাধিক পুলিশ সেখানে প্রবেশ করে সোয়া ২ ঘণ্টাব্যাপী পুরো কার্যালয়ে তল্লাশি চালায়। তবে তল্লাশি করে তারা কিছুই পায়নি। এদিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশী তল্লাশির প্রতিবাদে আজ রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সকাল ৭টার দিকে পুলিশ সেখানে জড়ো হতে থাকে। এ সময় ৮৬ নম্বর সড়কের দুই প্রান্ত আটকে দেয়া হয়। সকাল সোয়া ৭টায় গুলশান কার্যালয়ে প্রবশ করে তারা তল্লাশি শুরু করে। পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদ এ তল্লাশিতে নেতৃত্ব দেন। তবে দোতলায় খালেদা জিয়ার বসার কক্ষটি পুলিশ তল্লাশি করেনি। সকাল সাড়ে ৯টায় পুরো গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি শেষে পুলিশ ওই কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যায়। তবে কার্যালয় থেকে কাউকে আটক বা কোনকিছু জব্দ করা হয়নি। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আড়াই ঘণ্টা ওই এলাকায় সাধারণ কোন যানবাহন ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। গুলশান কার্যালয় থেকে পুলিশ চলে যাওয়ার পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে ৮৬নং সড়কে বসানো ব্যারিকেড তুলে নেয়া হয়। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা পুলিশের ডিসি মোস্তাক আহমেদ এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু না জানিয়ে চলে যান। তবে পুলিশের অন্য সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, আদালতের পরোয়ানা নিয়েই তারা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযান চলাকালে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আছে এই কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোন কিছু ও নাশকতা চালানোর মতো জিনিস আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার। সার্চ ওয়ারেন্ট অনুযায়ী তল্লাশি করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশির পর সেখানে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ ঘটনার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মনোবল ভাঙ্গতে এ তল্লাশি চালানো হয়েছে। রিজভী অভিযোগ করেন একটি অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির সাধারণ ডায়েরির (জিডি) রেশ ধরে ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট করিয়ে গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এটি খালেদা জিয়াকে অপমানিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার কঠিন ও পাতানো ষড়যন্ত্রের অংশ। হাওড়সহ নানা ঘটনায় সরকার যে বিপর্যস্ত সেদিক থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এটি করানো হয়েছে। তবে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কিছুই পায়নি। রিজভী বলেন, বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে এভাবে হঠাৎ করে কোন ধরনের নোটিস বা আগামনের কথা না জানিয়ে তল্লাশি চালানো গণতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। তাই আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের এই হানা সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। সারাদেশে খুন-গুম-হত্যা, সামাজিক অবক্ষয়সহ সরকারের নানা ব্যর্থতা আড়াল করতেই সরকার এই অভিযান চালিয়েছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির প্রতিবাদে রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে তিনি এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এ সময় রিজভী বলেন, এ তল্লাশি কাপুরুষোচিত, অন্যায় ও আওয়ামী লীগ সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এমন ঘটনার আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ঘৃণ্য এ ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করবে। একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে আজ কোন রাজনীতি নাই। যে রাজনীতি আছে সেটা অপরাজনীতি। তার দৃষ্টান্ত খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি। এই হীনমন্যতা, এই ছোট মনের রাজনীতি, এই যে স্পর্শকাতরতা, এই যে প্রতিহিংসার রাজনীতি, এই রাজনীতির আমরা অবসান চাই। খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে দিনাজপুরের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতেই খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকার কোনভাবেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করবে না। তাই কোন কারণ ছাড়াই খালেদা জিয়ার অফিসে পুলিশের তল্লাশি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি অভিযান চলাকালে পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ক’দিন আগে খালেদা জিয়ার এ কার্যালয়ে এক ট্রাক বই আনার খবর তারা পেয়েছেন। সেই বইকে ঘিরে তাদের সন্দেহ হয়েছে। তল্লাশি অভিযানের পর গুলশান থানার ওসি আবু বকর বলেন, যে তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়, সে রকম কিছু পাওয়া যায়নি। তবে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে কর্মরত এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, যে এক ট্রাক বই প্রবেশের কথা পুলিশ বলছে সেগুলো ছিল ‘ভিশন-২০৩০’ এর বই। তিনি বলেন, প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে পুলিশ কার্যালয়ে প্রবেশ করে। ভেতরে প্রবেশ করেই তারা ওই কার্যালয়ের চারকর্মীর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। আর যাওয়ার সময় পুলিশ প্রধান ফটকের ভাঙ্গা তালাটি নিয়ে যায়। খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অভিযানের সময় বিএনপির কোন নেতা সেখানে ছিলেন না। পরে পুলিশী তল্লাশির কথা শুনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ভিড় করে। তবে প্রথমে সেখানে যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল। এরপর আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ প্রমুখ। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গুলশান কার্যালয়ে জড়ো হওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ে পুলিশী তল্লাশির প্রতিবাদে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ৯৬ নম্বর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দেয়। মিছিলে অংশ নেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ। বিক্ষোভ মিছিলে এ ছাড়াও অংশ নেন যুবদলের নেতা সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। মিছিল শেষে যুবদলের পক্ষ থেকে আজ রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। এরপর গুলশান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কক্ষে পুলিশের তছনছ করার দৃশ্য দেখায়। এ সময় দেখা যায় নিচতলা ও দোতলায় দুটি সিসি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কক্ষে কাগজপত্র, ফাইলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের হৃৎকম্পন শুরু হয়েছে- দুদু : ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের হৃৎকম্পন শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে সরকার তত নার্ভাস হয়ে পড়ছে। তাই পুলিশকে ব্যবহার করে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ তল্লাশি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলু ও খায়রুল কবির খোকনের মুক্তির দাবিতে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামক একটি সংগঠন আয়োজিত এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুদু বলেন, বিএনপির ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের অবস্থ খুবই খারাপ। এতই খারাপ হয়েছে যে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাদের হৃৎকম্পন শুরু হয়েছে। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যতই চেষ্টা করুন ক্ষমতায় বেশি দিন থাকতে পারবেন না। আগামী দিনে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, দলীয় সরকার বলে কিছুই থাকবে না। তখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আপনারা কোন প্রার্থীই খুঁজে পাবেন না। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ।
×