ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহবাগে মানববন্ধন

পরিপক্ব হওয়ার পরই কেবল মৌসুমি ফল বাজারজাতের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২১ মে ২০১৭

পরিপক্ব হওয়ার পরই কেবল মৌসুমি ফল বাজারজাতের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে বিষমুক্ত রাসায়নিক মৌসুমি ফলের যোগান নিশ্চিত করতে পরিপক্ব হওয়ার পরই কেবল তা সংগ্রহ ও বাজারজাত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, পরিপক্ব হওয়ার পর বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করলে তাতে রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে তারা ৫ জুনের পরে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার পরিবেশ সংগঠন পবার এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান। সকাল সাড়ে ১০টায় শাহবাগের চারুকলা অনুষদের সামনে পবা ছাড়াও বাংলাদেশ স্কাউট ও গাইড ফেলোশিপ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, নাসফ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, পল্লীমা গ্রীন, ইয়ুথ সান এবং মডার্ণ ক্লাব আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। তারা বলেন, প্রকৃতিতে এখন চলছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে মধুমাসের আম, লিচু, জাম, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক সব ফল। মৌসুমি ফল মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু মধুমাসের নিরাপদ মৌসুমি ফলের প্রাপ্তি নিয়ে জনমনে শঙ্কা কাটছে না। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে মৌসুমি ফলের উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ করা হয়েছে। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অত্যধিক ও নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক ও জনগণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বিষ ও ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যপ্রদ মৌসুমি ফল নিশ্চিত করতে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। মানববন্ধন অনুষ্ঠানে পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সার্বিক কার্যক্রম হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনেরও বিষমুক্ত ফলের যোগান নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্য বছর সংস্থাগুলোর এই সময় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিলেও এ বছর এখন পর্যন্ত কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষ বিষ ও ভেজালমুক্ত নিরাপদ ফল প্রাপ্তির বিষয়ে শঙ্কিত। বিভিন্ন এলাকাভেদে বিভিন্ন জাতের আম তথা গোপালভোগ, হিমসাগর, লেংড়া, হাড়িভাঙ্গা, ফজলি, আম্রপলি ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময় পরিপক্ব হয়। পরিপক্ব হওয়ার পর সেই আমগুলো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হলে কোন রাসায়নিক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। গত বছর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে এ বিষয়টির তদারকি করে। তিনি আরও বলেন, শিশুসহ গর্ভবতী মা ও সর্বস্তরের জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেনÑ ফলমূল, খাদ্যে বিষ ও ভেজালের কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাবার উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর সমন্বিত ও কার্যকরী প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে তারা খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি উৎপাদন থেকে যোগানের প্রতিটি ধাপে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নিশ্চয়তাসহ খাদ্যে ক্ষতিকর সকল ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। এছাড়া নিরাপদ খাবার তৈরি, বিপণন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর যথাযথ ও সমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা, প্রতি জেলায় খাদ্য আদালত স্থাপন এবং জরুরীভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ, প্রতিটি জেলায় কৃষি আদালত গঠন, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলার আহ্বান জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজীজ, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান, বাংলাদেশ স্কাউট ও গাইড ফেলোশিপের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর রেজা, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণের সভাপতি হাবিবুর রহমান, পবার সহ-সম্পাদক মোঃ সেলিম, পবার সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
×