ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২১ মে ২০১৭

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান মাধ্যম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র শিল্পের প্রকাশ ও বিকাশে যেমনি অনুকূল পরিবেশ, কলা-কুশলি, কাহিনীকার ও শিল্পীর ভূমিকাই মুখ্য। তেমনি মুখ্য এর সঠিক ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতাও। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া চলচ্চিত্র শিল্প তো বটেই, কোন শিল্পই আগাতে পারে না। জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র মানুষের মনে দীর্ঘকাল দাগ কেটে থাকে। কারণ, দর্শকশ্রোতারা তার মধ্যে কখনও কখনও নিজের ব্যক্তি ও পারিপার্শ্বিক জীবনের উপাদান খুঁজে পায়। প্রেক্ষাগৃহে বড় পর্দায় ছবি দেখতে গিয়ে দর্শক শ্রোতারা যদি আবেগাপ্লুতই না হবে, যদি তাদের মনে ভাবনার উদ্বেগ না করবে কাহিনী সংলাপ অভিনয় নৈপুণ্যে, তাহলে সে ছবি নির্মাণের সার্থকতা কি? জীবন এবং সময়ের বাস্তব কাহিনী কল্পনার রঙে মিশিয়ে দর্শকদের সামনে আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে নির্মাতা, অভিনয় শিল্পীদের কাজ। ভাবতে ভাল লাগে সেই সব চলচ্চিত্রের কথা যা আলোড়ন জাগাত। ছবি দেখে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হবার পর সংলাপ, গান, অভিনয় শৈলী ইত্যাদি নিয়ে বন্ধু-পরিচিত মহলে কি যে আলোচনা ও সমালোচনা হতো। একটা সময় ছিল কাহিনী সংলাপ, সে সব ছবি দর্শক মনে ভীষণ প্রভাব ফেলত বলেই তা নিয়ে এত হৈ চৈ, প্রশংসা চলত। একটা সময় ছিল কাহিনী সংলাপ, গান রচনার জন্য অনেক ভাবতে হতো, অনেক চিন্তা করতে হতো, অনেক কিছু জানতে, বুঝতে হতো। কারণ, প্রত্যাশিত চলচ্চিত্রটিকে কতটা আকর্ষণীয়, হৃদয়গ্রাহী করা যায়, কতটা দর্শকদের অভিনন্দন কুড়ানো যায় তা নিয়ে। যারা অভিনয় করতেন তারাও মনপ্রাণ উজাড় করে সর্বস্ব ঢেলে দিতেন চরিত্র চিত্রণে। কিন্তু অতীতের বিবেচনায় বর্তমানকে কেমন যেন মেলানো যায় না। কেমন যেন আন্তরিকতার অভাব। ভাল কাহিনী, ভাল শিল্পী, কলাকুশলী উঠে আসছে না। শুধু বাণিজ্যিক লাভের হিসাবটাই মুখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে, শিল্পের আবেগ অনুভূতির জায়গাটি যেন ম্লান। শিল্পমান উত্তীর্ণ ছাড়া কি চলচ্চিত্র বাঁচে? আবেদন সৃষ্টি করে? শুধু সস্তা সংলাপ যৌনতানির্ভর চলচ্চিত্র কি দর্শকদের, রুচিশীল বোদ্ধা দর্শকদের টানতে পারে? বোধহয় পারে না, পারে না বলেই একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ। মানুষ হলমুখী হয় না আর। দর্শককে টানছে না। তাছাড়া হিন্দী আর ইংরেজী ছবির বাণিজ্যিক ও বিনোদনের অবাধ প্রতিযোগিতায় বাংলা চলচ্চিত্র সত্যি কুুলিয়ে উঠতে পারছে না। টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে। চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যে যে বাজেট, যে কাহিনী কুশলতা, অভিনয় নৈপুণ্য, যে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার আর উপস্থাপনের কৌশলতা সত্যি বিস্মিত করে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের কথা না হয় বাদই থাকল। আমাদের বাংলাদেশের সিনেমা হল, সিনেমার মান-গুণ, উপস্থাপন কৌশল, লোকেশন, স্পষ্ট এসব কি দর্শক আকর্ষণের জন্য সত্যি যথোপযোগী? এটা স্বীকার্য যে, ভাল ছবির জন্য ভাল কাহিনী পাওয়া দুষ্কর, নেই যথেষ্ট এজেন্ট, নেই পর্যাপ্ত অনুদান। তা ছাড়া অন্য সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। তবু আমরা হতাশ না হয়ে আশাবাদী হই এ জন্যে যে মাসে মাসে যখন দেখি ভাল, শিল্পমান উত্তীর্ণ ছবি তৈরি হচ্ছে এবং তা আমাদের মনোযোগও আকর্ষণ করছে। চলচ্চিত্রে আমাদের গৌরবগাথা ফুটে উঠলে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মও উজ্জীবিত হবে, তারাও জানতে পারবে আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদানের ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পে যারা অবদান রেখে চলেছেন তাদেরকেই মূল্যায়ন করার সুযোগ মেলে। যারা তাদের প্রতিভা পরিশ্রমনৈপুণ্য মেধা দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অনন্য ভূমিকা রাখার গৌরব অর্জন করেছে এমন সব শিল্পীর ২৫ ক্ষেত্রে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এবারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যুগ্মভাবে বাপজানের বায়োস্কোপ ও অনিল বাগচির একদিন। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র যুগ্মভাবে একাত্তরের গণহত্যা ও বধ্যভূমি। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা যুগ্মভাবে শাকিব খান ও মাহফুজ আর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জয়া আহসানসহ অন্যদের পুরস্কার সম্মাননা দেয়া হবে। আর যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন দু’জন শিল্পী তাদের কীর্তি ও গুণে। চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশে কলাকুশলীসহ সবাইকে অভিনন্দন। সেই সঙ্গে ভাল চলচ্চিত্রের জন্য পর্যাপ্ত অনুদান ও প্রদর্শনী করমুক্ত করার প্রত্যাশা থাকছে।
×