ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল চিকিৎসার অভিযোগে-

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২১ মে ২০১৭

ভুল চিকিৎসার অভিযোগে-

মানুষ মাত্রেরই ভুল হতে পারে। ডাক্তারদের ভুল হলে রোগীর বিপদ ঘটতে পারে। ভুল ভুলই, সেটি ইচ্ছাকৃত নয়। তবে কোন কাজে ভুল হয়েছে কিনা সেটি আগে নিশ্চিত হওয়া চাই। ভুলের কারণে কোন ক্ষতি হয়ে গেলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে। সে উপায়টিকে কাজে না লাগিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলের অভিযোগ তুলে কেউ সত্যি সত্যি বিরাট ভুল করে বসবেনÑ সেটাও প্রত্যাশিত নয়। ডাক্তারের কথিত ভুলের অভিযোগ তুলে রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল বৃহস্পতিবার, সেটিকে কোন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সমর্থন করতে পারেন না। ভুল চিকিৎসার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছেÑ অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও রোগীকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরদিকে চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকগণ। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি থানা-পুলিশে গড়িয়েছে। হাসপাতালের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপরদিকে ভাংচুর ও মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা। ফলে স্বাভাবিকভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই যে কারও মনে প্রশ্ন জাগবেÑ এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শত শত রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি কি বিবেচকের কাজ হয়েছে! এর জন্য আবার হাসপাতালে হামলাকারীদের দায়ী না করে উপায় থাকে না। হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় ভুল বা অবহেলার অভিযোগের ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বরাবর অভিযোগ করার বিধি রয়েছে। বিএমডিসি স্বাধীন অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। আইনের পথই উত্তম পথ। যে কোন মৃত্যুই দুঃখজনক। মৃত ছাত্রীর জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ এবং তার সহপাঠী বন্ধু, শিক্ষক ও স্বজনদের প্রতি নিশ্চয়ই সবার সহমর্মিতা সমবেদনা থাকবে। কিন্তু হাসপাতালে লঙ্কাকাণ্ড বাধানোর পক্ষে কী যুক্তি রয়েছে? একজন দায়িত্বশীল চিকিৎসক যা বলেছেন সেটি আমলে নেয়া দরকার। তিনি বলেছেন, ‘যেখানে রোগীটির মূল চিকিৎসাই শুরু হয়নি, সেখানে চিকিৎসা ভুল হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।’ মৃত রোগীর ক্ষেত্রে কেবল নয়, যে কোন রোগীর চিকিৎসার বেলায় চিকিৎসকের ভুলভ্রান্তি হওয়া অবাস্তব কিছু নয়। কিন্তু এ কথা বিশ্বাস করা অসম্ভব যে রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল সিনিয়র চিকিৎসকরা কোন গাফিলতি করবেন। রোগীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠবে এমন চিকিৎসাব্যবস্থা কারও“পক্ষে প্রদানও অসম্ভব। কোন চিকিৎসকই চান না তার রোগী মৃত্যুবরণ করুক। বরং রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। আমরা আশা করব, হামলাকারী শিক্ষার্থীরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং এ ধরনের ভুল এড়িয়ে চলার ব্যাপারে আগামীতে অন্যরাও সচেতন হবেন। চিকিৎসকদের কাছে আমরা সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বই প্রত্যাশা করি। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, হাসপাতালের রোগীদের যথাযথ চিকিৎসার বিষয়টি বিবেচনা করে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেবেন।
×