ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য ও প্রযুক্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২০ মে ২০১৭

তথ্য ও প্রযুক্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি ॥ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি কল্যাণে বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। ১৯০৮ সালের দিকে ‘গুলিয়েলমো মার্কোনি’র রেডিও আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেলিযোগাযোগের যাত্রা শুরু হয়। এর পর থেকে নতুন নতুন আবিষ্কার আর তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা বিশ্ব টেলিযোগাযোগকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহুল অংশে। বিশ্ব আজ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পূর্বে যা মানুষের কল্পনাতীত ছিল আজ তা আমাদের হাতের নাগালে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে বিশ্ব আজ একটা বিশাল গ্রাম যা গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। এখন থেকে কয়েক দশক আগে যে কাজ আমরা কয়েক দিন ধরে করেও শেষ করতে কষ্ট হয়ে যেত আজ আমরা সেটা সেকেন্ডের ভেতর করে ফেলছি অনায়াসে। টেলিযোগাযোগ এবং প্রযুক্তিতে নানাবিধ উন্নয়নের ফলে আজকের ভার্চুয়াল জগত এতটা উৎকর্ষ যা মানুষের কল্পনাকেও হার মানাবে। আজ মানুষ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা পুরা বিশ্ব ঘরে বসে নিয়ন্ত্রণ করি। স্বপ্ন আজ মানুষের মহাবিশ্ব জয় করার। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে আজ টেলিযোগাযোগ এবং প্রযুক্তি ছাড়া নিজেদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায়। টেলিযোগাযোগ এবং প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ ॥ তথ্য ও প্রযুক্তি খাত বর্তমান সময়ে সব দেশের উন্নয়নের চালিকাশক্তি। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগের সূচনা ১৯৮৯ সালে ইন্টার এলিয়া (রহঃবৎ ধষরধ) সেলুলার মোবাইল সেবার মাধ্যমে। যদিও প্রযুক্তির শুরু সেই ১৯৬০ সালে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণাগারে কম্পিউটার যাত্রার মধ্য দিয়ে। তারপর ১৯৮০ সালের পর থেকে পার্সোনাল কম্পিউটার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির মূল বিপ্লব শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে স্বতন্ত্র তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব আরও ত্বরান্বিত হয়। ১৯৯৭ বেসিস ইধহমষধফবংয অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঝড়ভঃধিৎব ধহফ ওহভড়ৎসধঃরড়হ ঝবৎারপবং (ইঅঝওঝ)-এর প্রতিষ্ঠা যার উদ্দেশ্য ছিল সফটওয়্যার খাতকে এগিয়ে নেয়া। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাত। বেসিস ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে। আইসিটিবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে সফটওয়্যার খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। সফটওয়্যার ও টেকনোলজি প্রত্যেকের জীবনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন সময় এসেছে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সঙ্গে সফটওয়্যার খাতকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার ॥ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশেও বিনিয়োগ বাড়ছে এই খাতে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে এই তথ্যপ্রযুক্তিই। এ দেশে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির বড় এবং সম্ভাবনাময় বাজারকে কাজে লাগাতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পে সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগের পাশাপাশি আসছে বিপুল পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ। মোবাইল ও টেলিকম ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে বিদেশী কোম্পানিগুলো। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে তারা। অন্যদিকে হাইটেক পার্ক, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার, আইটি পার্ক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, আইটি ভিলেজ, সিলিকন সিটি স্থাপন খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বিনিয়োগের পাশাপাশি সুযোগ তৈরি হয়েছে কয়েক লাখ দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানের। এ ছাড়া আউটসোর্সিংয়ে সুনাম কুড়িয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে এ দেশের তরুণরা। তথ্যপ্রযুক্তি দেশের অর্থনীতিতে অপরিহার্য অংশ হয়ে পড়েছে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। দৈনন্দিন কর্মকা-ের সঙ্গে এখন জায়গা করে নিয়েছে এই মাধ্যম। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার, প্রতিবছর প্রায় এক শতাংশ হারে কৃষি জমি কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণসহ নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ‘কৃষি বিপ্লব’ বেগবান করতে সরকারের নজর এখন প্রযুক্তির দিকে। কৃষি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠা ‘শ্রমিক সঙ্কট’ মোকাবেলায় জোর দেয়া হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর। জমি চাষ থেকে ফসল মাড়াই- সমগ্র প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তি সহজলভ্য ও জনপ্রিয় করতে ৩০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ‘কৃষি কল সেন্টারের’ মাধ্যমে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ পরামর্শ দেয়ার মতো কাজ শুধু ১৬১২৩ নম্বরে ডায়ালের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি বাতায়ন করছে। সঙ্গে কৃষি কথা ডটকমে কৃষি বিজ্ঞানীরা কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা মেটাচ্ছেন সঙ্গে সঙ্গে। যেটা কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। বিশ্ব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ তেরি করছে নতুন নতুন সুবিধা সংবলিত ব্যবহারবান্ধব কৃষি উপকরণ, যা কৃষির উন্নতিতে আমাদের দিচ্ছে ব্যাপক সমৃদ্ধি। প্রযুক্তিসম্পন্ন পানি সেচ, সার, হাইব্রিড চাষ পদ্ধতিতে আজ বাংলাদেশ অনেক বেশি এগিয়ে। মৎস্য চাষে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন এবং সঙ্গে সঙ্গে পাট এবং বস্ত্রশিল্পেও আজ প্রযুক্তি নানাভাবে বাংলাদেশকে অবদান রেখে চলেছে। টেলিযোগাযোগের উন্নতির আগে কৃষক তার সমাধান যেখানে জানানোরই জায়গা পেতেন না, সেখানে সেই কৃষক মোবাইলের মাধ্যমেই নিমিষেই তার সকল সমস্যার সমাধান নিচ্ছেন টেলিযোগাযোগের উন্নতির ফলে। টেলিযোগাযোগ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে কৃষকের মুখে আজ হাসি আর বাংলাদেশ বিশ্বে দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, স্বাবলম্বী হচ্ছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উপকরণ চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এত বেশি এগিয়ে গেছে যে এখন অকাল মৃত্যুর হার অনেক বেশি কমে গেছে। ফলে আমাদের আর বিদেশী চিকিৎসার ওপর নির্ভর করতে হয় না। মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা, অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা যেটা টেলিযোগাযোগের উৎকর্ষ ছাড়া সম্ভব ছিল না, আজকে আমরা সেটা হাতের নাগালেই পাচ্ছি। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের জন্য নিয়োজিত ‘আমাদের ডাক্তার’ বা গঐবধষঃয এসব সেবা আমাদের ভোগান্তি এবং অকাল মৃত্যুর হাত থেকে অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। শফিকুল আলম রেজা
×