ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

‘সিসেম স্ট্রিট’-এ নতুন মাপেট জুলিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ মে ২০১৭

‘সিসেম স্ট্রিট’-এ নতুন মাপেট জুলিয়া

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই অটিজম শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। আর এটাও জানা আছে তোমাদের অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বলা হয় অটিস্টিক চাইল্ড। ওরা কিন্তু আর দশটা বাচ্চার মতোই সাধারণ। ওদেরও আছে নিজস্ব ভাবনা, কল্পনার জগত, চাওয়া-পাওয়া। ওদের মাঝেও সুপ্ত রয়েছে মেধা আর যোগ্যতা। যা বিকশিত হতে পারে সুযোগ পেলেই। প্রয়োজন শুধু সহমর্মিতা আর ওদের জন্য স্বাভাবিক চলার পথ তৈরি করে দেয়া। আমরা সবাই যদি ওদের স্বাভাবিকভাবে মেনে নেই। এড়িয়ে না চলি তাহলে ওরাও পারে বড় কিছু অর্জন করতে নিজস্ব মেধায় যা আমাদের জন্য হবে গৌরবের। এই অটিজম নিয়ে শিশুতোষ টিভি সিরিয়াল ‘সিসেম স্ট্রিট’ শো আজ সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করে এই শোর বিভিন্ন চরিত্র এ ছাড়াও শিশুদের নানা প্রিয় চরিত্রও আছে এই শোতে। সব মিলিয়ে এই শোটি আজ সাধারণ মানুষের কাছেও খুব প্রিয়। সিসেম স্ট্রিট যে কেবল টিভি শো তাই নয় এটি অনলাইনে ডিজিটাল বই ও ছাপা পুস্তকাকারেও প্রকাশিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষকে অটিজম নিয়ে ধারণা দেয়া ও বিভ্রান্তি দূর করা। ব্যাপক জনপ্রিয় এই শোতে গত এক দশকে এই প্রথম যোগ হলো নতুন চরিত্র বা মাপেট জুলিয়া। নতুন যোগ হয়েই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সে। ৪ বছর বয়সী লাল চুল আর সবুজ চোখের মাপেট জুলিয়া ছুঁয়ে গেছে দর্শকের হৃদয়। আর এই শোটির মূল উদ্দেশ্য সাধনেও সে সফল। এ নিয়ে কথা বলতে যেয়ে ‘সিসেম স্ট্রিট’ ওয়ার্কশপের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট শেরি ওয়েস্টিন জানান, ‘আমরা শোতে জুলিয়া চরিত্রটি সংযুক্ত করার পর দর্শকের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এর মধ্যে এক অটিস্টিক কন্যা শিশুর মা বলেন, জুলিয়াকে দেখে আমার মেয়ে বলে ওঠে আমিও তাহলে অন্যদের মতোই। আমাকে দিয়েও বড় কিছু করা সম্ভব। তাই না মা?’ উল্লেখ্য, জুলিয়া চরিত্রটি প্রথম দর্শকদের সামনে আসে এ বছর ১০ এপ্রিল। শোতে নতুন মাপেট জুলিয়াকে যোগ করার পেছনে শো-পরিচালকদের উদ্দেশ্য ছিল আরও বেশি মানুষকে আকৃষ্ট করা। যেসব পরিবারে অটিজম আক্রান্ত শিশু আছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া যে এটি কোন অস্বাভাবিক বা এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় নয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সমাজ বা পরিবারের জন্য কোন বোঝাও নয়। এ বার্তাটি পৌঁছে দিতে তাদের বেশ কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তারা কথা বলেছেন ২৫০টির মতো অটিজম নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তাদের এই ব্যাপক উদ্যোগের কারণ ছিল যেহেতু অটিজমকে এখনও সমাজে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয় তাই এ সংক্রান্ত ধারণা পাল্টে সহজভাবে বিষয়টি উপস্থাপন। এই শোতে উপস্থিত থাকা অন্য চরিত্রগুলো হচ্ছে এলমো, এলান মুরাওয়াকা, এব্বি ক্যাডাবি এবং বিগ বার্ড। এখানে জুলিয়াকে উপস্থাপন করা হয়েছে এমনভাবে, লাল চুল আর সবুজ চোখ নিয়ে সে ভালবাসে ফুল কুঁড়াতে ও ছবি আঁকতে। কিন্তু তার মানসিক গঠন স্বাভাবিক না হওয়ায় সে সঙ্গে সঙ্গে কোন কথার অর্থ বুঝতে পারে না আর প্রায়শই সে কথা বলার সময় তার বন্ধু এলমো আর এবিব-এর উচ্চারিত শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি করে। বিখ্যাত পাপেটর স্টেসি গর্ডন যিনি এই চরিত্রটি পরিচালনা করেন তার ভাষায়, ‘আমরা আশা করছি জুলিয়া তার অটিজম নিয়ে দর্শকদের হৃদয় কেড়ে নেবে।’ ছোট্ট বন্ধুরা, আমরা সবাই সেটি চাই। জুলিয়া যদি অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে পারে, যদি পারে এ পৃথিবী তাদের জন্য আরেকটু সহজ বাসযোগ্য করে তুলতে। সেই সঙ্গে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে তাহলে আমরা সবাই আনন্দিত হব। তোমরা সবাই একটা কথা মনে রেখ, অনেকেই কিন্তু অটিজম বিষয়ক সমস্যাকে অতিক্রম করে পৃথিবীতে অনেক বড় বড় কাজ করে গেছেন, করছেন। তাদের নাম আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ঠিক তেমনি তোমার যে প্রতিবেশী বা সহপাঠী বন্ধুটি এ সমস্যায় ভুগছে তার দ্বারাও হতে পারে অনেক বড় কিছু যা নিয়ে তুমিও গর্ব করতে পারবে একদিন। প্রয়োজন শুধু সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তুমি কি তা করবে না?
×