ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আম দুধে জামাই আদর

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ মে ২০১৭

আম দুধে জামাই আদর

মধুমাসে জামাইষষ্ঠী বাংলার লোক সংস্কৃতির অংশ। এ উৎসবটি আদিকাল থেকে বাঙালী সমাজের ঘরে ঘরে লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বাঙালী রমণীরা বিশেষ করে শাশুড়ি মায়েরা ষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। এই ষষ্ঠী ব্রত উপলক্ষে জামাইকে দেওয়া সংবর্ধনাই মূলত জামাইষষ্ঠী। এক সময় এ প্রথাটি এ দেশের গ্রামে ও শহরের ঘরে-ঘরে খুব ঘটা করে পালিত হয়েছে। কালের বিবর্তনে তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। তবে জামাইষষ্ঠীর রেওয়াজটা সমাজ থেকে একবারে উঠে যায়নি। বারো মাসের ষষ্ঠী ব্রতের চেয়ে জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী ব্রতের ভিন্ন আবেদন রয়েছে। জ্যৈষ্ঠের আরাধনায় সন্তান-সন্তুতির মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠী ব্রত পালন করা হয়। এর সঙ্গে ধর্মের যোগসূত্র থাকলেও সামাজিক লোকাচারের গুরুত্ব বেশি। কোন কোন অঞ্চলে ষষ্ঠীকে দেবী বা লৌকিক দেবীও বলা হয়। মধুমাসে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে অর্চনার পর্ব দেশের কোথাও কোথাও ঘরে, উঠানে ও মন্দিরে আয়োজন করা হয়। আবার কোন অঞ্চলে বটের ডাল, ডুমুরের ডাল বা করমচার ডাল উঠানে পুঁতে বন বা অরণ্য তৈরি করে ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয়। এ কারণে অঞ্চল ভেদে জামাই ষষ্ঠীকে অরণ্যষষ্ঠীও বলা হয়। ষষ্ঠী পার্বন ধর্মীয় সংস্কারের চেয়ে সামাজিক লোকাচার হিসেবে বেশি পরিচিত। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে আম-জাম, কাঁঠালসহ নানা মৌসুমী ফলের ঘ্রাণে চারদিক যখন ম-ম করে, ঠিক সেই সময় জামাইষষ্ঠী উৎসব হওয়ায় ধর্মীয় গ-ি পেরিয়ে এর প্রভাব পড়ে গ্রামীণ জীবনে। তখন এ উৎসবটি পরিণত হয় সার্বজনীন উৎসবে। এ সময় শ্বশুরবাড়িতে জামাই আমন্ত্রিত হয়। গ্রামীণ জনপদে জামাই অত্যন্ত আদরের ধন। মেয়ের সুখ-শান্তির জন্য জামাই আদর প্রথাটা সামাজিক বন্ধন হিসেবে বাংলার ঘরে-ঘরে আজও অটুট রয়েছে। জামাই আদর বা সংবর্ধনার বড় উৎসব মধু মাসের জামাই ষষ্ঠী। জ্যৈষ্ঠ মাসে জামাইষষ্ঠীর মূল উপকরণ হচ্ছে ফল। ফল ছাড়া জামাই ষষ্ঠীর পর্ব থাকে অসমাপ্ত। এ পার্বণে যেমন বিভিন্ন গাছের ডাল প্রয়োজন হয়, তেমনি সনাতন পরিবারে মধু মাসের মৌসুমী ফল দরকার হয়। জামাইষষ্ঠীতে জামাই খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি আসে না। সে যতই পুরনো হোক বা নতুন হোক। শাশুড়ির জন্য টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি বা ঢাকাই জামদানি, জামা-কাপড়, পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, বাঙ্গি-তরমুজ ইত্যাদি থাকবে জামাইয়ের বাজার তালিকায়। Ñসুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×