ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিকফা বৈঠকে জিএসপি প্রসঙ্গ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ মে ২০১৭

টিকফা বৈঠকে জিএসপি প্রসঙ্গ

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) প্রাপ্তির দাবিটি আবার সামনে আনল বাংলাদেশ। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিলের তৃতীয় সভায় গার্মেন্ট পণ্যে জিএসপি সুবিধার দাবিটি তোলা হয়। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বালি সিদ্ধান্তের আলোকেই ওই সুবিধা চাইল বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের ১২২টি দেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি) নবায়ন করা হলেও সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল না। সার্ক জোটের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান এই তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশকে ফেরানো হয়নি। অথচ জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্র যে ১৬টি শর্ত দিয়েছিল, তার প্রায় সবই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তাহলে কেন এটা হলোÑ এ প্রশ্নই ঘুরেফিরে উচ্চারণ হচ্ছে। অবশ্য সে সময় জিএসপি রাজনৈতিক কারণে স্থগিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট। অপরপক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিমত ছিল বার্নিকাটের ঠিক উল্টো। তিনি এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। জিএসপির আওতায় বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি করতে পারত। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এই সুবিধার আওতায় তিন কোটি ৪৭ লাখ ডলারের তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেন, যাতে তারা শুল্ক ছাড় পান ২০ লাখ ডলারের মতো। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য ‘তৈরি পোশাক’ ওই সুবিধা পেত না। ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর ওই বছরের ২৭ জুন জিএসপি স্থগিত করে আমেরিকা। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের মোট রফতানি আয় ৫৫০ কোটির ৯০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। ফলে জিএসপি স্থগিত হলেও বাংলাদেশের রফতানি আয়ে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষক ও ব্যবসায়ীদের। আমরা মনে করি শ্রম-পরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিগত কয়েক বছরে লক্ষ্যযোগ্য উন্নয়ন ঘটানোর ফলে জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রায় শত বছর আগে ১৯১১ সালে আমেরিকার ট্রায়াঙ্গেল শার্ট তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল ১৪৬ জন শ্রমিক, আহতের সংখ্যাও ছিল অনেক। তাই রানা প্লাজা বা তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনার কারণ দেখিয়ে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের বিষয়টিও সে সময় অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাছাড়া বিভিন্ন সময় বিদেশী ক্রেতারা পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে অভিভূত হন বিদেশী ১০ কূটনীতিক। সুতরাং জিএসপি সুবিধা ফেরত না পাওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোন্ নীতি কাজ করছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবশ্য বুধবারের বৈঠকে বলা হয়েছে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং ‘শ্রম অধিকার ইস্যুতে জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছে। একই কথা বারবার দেশটি তুলছে, অথচ এর কোন দৃঢ় ভিত্তি নেই। তাই দেশবাসীর প্রত্যাশা অচিরে জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হোক। সেইসঙ্গে টেলিকমিউনিকেশন, আইটি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতসহ বড় বড় অবকাঠামো খাতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাটি জোরালোভাবে বিবেচনা করুকÑ এটাও প্রত্যাশা।
×