ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিন্নমত ঠেকাতে কৌঁসুলি নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ মে ২০১৭

ভিন্নমত ঠেকাতে কৌঁসুলি নিয়োগ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছেন, গত বছরের নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রচারশিবিরের কোন আঁতাত ছিল না। তিনি বলেন, আমি কেবল নিজের পক্ষেই সাফাই গাইতে পারি। এছাড়া করার কিছু নেই। সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফিনের রুশ আঁতাতের ওপর তদন্ত বন্ধ করতে এফবিআইয়ের বরখাস্ত পরিচালক জেমস কোমিকে চাপ দেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। নির্বাচনে রুশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশের তদন্তে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল রড জে. রোজেনস্টেন একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ দেয়ার পর ট্রাম্প এসব কথা বলেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিস ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। ট্রাম্প বলেন, এ উদ্যোগকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু এটা একতরফাভাবে ভিন্নমতকে দমন করার শামিল। নিশ্চিতভাবে আমি ও আমার প্রচারশিবিরে মধ্যে কোন রুশ আঁতাত ছিল না। এখানে কেবল আমি নিজের ও রুশদের সাফাই গাইতে পারি। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট জন ম্যানুয়েল সান্টোসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন, এখানে কোন যোগসাজশ ছিল না। কোমিকে ফিনের আঁতাতের ওপর তদন্ত বন্ধ করতে বলেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কখনও না, কখনই না। তবে এফবিআইয়ের বরখাস্ত পরিচালক কোমি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক বৈঠকের পরে তিনি নোট রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজেনস্টেন ক্যাপিটল হিলে সিনেটরদের আভাস দিয়েছেন, কোমিকে বরখাস্তে হোয়াইট হাউস প্রাথমিক যে কারণ দেখিয়েছে, তাতে ঘাপলা আছে। রোজেনস্টেন বলেন, কোমিকে বরখাস্ত করা হবে, এটা তিনি নোট দেয়ার আগেই জানতেন। একাধিক সিনেটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোমিকে বরখাস্ত, বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগের সিদ্ধান্ত কিংবা রুশ আঁতাত নিয়ে চলমান তদন্ত সম্পর্কে শতাধিক সিনেটরদের সঙ্গে তাঁর দেড় ঘণ্টার বিরল রুদ্ধদ্বার আলোচনায় বিস্তারিত কিছু বলেননি রোজেনস্টেন। তিনি সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলারকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে তদন্তের ভার দেন। সিনেটরদের তিনি জোর দিয়ে বলেন, নতুন বিশেষ কৌঁসুলি হবেন একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। সিনেটে সংখ্যালঘু দলের নেতা চার্লস শুমার বলেন, বৈঠকে যদি আমরা একটা বিষয়ে স্পষ্ট হয়েছি, এ ঘটনা তদন্তে মুলার ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন। শুমার বলেন, এটা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, এভাবে আমেরিকার জনগণের মধ্যেও সাহস সঞ্চার করা উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনেটর বলেন, ক্যাপিটল ভিজিটর’স সেন্টারের রুদ্ধদ্বার কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে অতি গোপনীয় তথ্য নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব, তারপরও রোজেনস্টেন অত্যধিক গোপনীয় বিষয়-আশয়ে আলোচনা থেকে দূরে থেকেছেন। তিনি জনগণের উদ্দেশে যা বলেছেন, আমরাও সেই একই কথা শুনেছি। রুশ তদন্ত নিয়ে মুলারের পরিসরের ব্যাপকতার কারণে রোজেনস্টেন কেবল কয়েকজন সিনেটরের প্রশ্নের জবাব দেন। তবে সিনেটরদের অনেকে আর বেশি জানতে না পেরে হতাশ হয়েছেন। সিনেটরদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি খুবই সতর্ক ছিলেন। তিনি কোমির বরখাস্তের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাননি। কারণ কাজ কি প্রক্রিয়ায় এগুবে সে বিষয়ে তিনি রবার্ট মুলারকে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছেন। গত মাসে রোজেনস্টেন সিনেটরদের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে বিচার বিভাগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি কোমিকে বরখাস্তের সুপারিশ করে চরম সমালোচনার মুখোমুখি হন। ৯ মে কোমিকে বরখাস্তের পর একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগে রোজেনস্টেনের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে রুশ যোগসাজশের তদন্তে তিনি নিরপেক্ষ থাকতে পারবেন না বলে অভিযোগ ওঠে ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের পক্ষ থেকে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেন, বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ আমেরিকাকে ভয়াবহভাবে আঘাত হেনে যাচ্ছে। যদিও বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে মুলারের নিয়োগ দুই পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে কোমিকে বরখাস্ত করে তদন্তকে মোটেও প্রভাবিত করতে চাননি বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তার মতে, এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে কোমি একটি বড় অংশ মানুষের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আমি অনেক ভেবেছি। সিদ্ধান্তটা দুই দল মিলে নেয়া উচিত ছিল বলে আপনি মনে করছেন। কারণ আপনি কেবল ডেমোক্র্যাট দলের স্বার্থ দেখছেন। বিপরীতে রিপাবলিকানদের আমলেই নিচ্ছেন না। এটাই হচ্ছে এ ঘটনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক। এর আগে বুধবার তিনি বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি তাঁর মতো এমন দুর্ব্যবহার কিংবা অন্যায়ের শিকার হননি। নতুন কৌঁসুলি নিয়োগকে হোয়াইট হাউস বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে। রোজেনস্টেন কৌঁসুলি নিয়োগে যখন সই করেন, তখন ট্রাম্প ছাড়া কেউ বিষয়টা জানতেন না। তবে ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ট্রাম্পের সাবেক সহযোগী মাইকেল ফিন তার অন্তর্বতী টিমকে জানুয়ারির শুরুর দিকে বলেন, তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময় অর্থের বিনিময়ে তুরস্কের হয়ে লবিং করেছিলেন। বিষয়টি এফবিআইয়ের তদন্তাধীন আছেন। ফিনকে সতর্কতা ছাড়াই নিজের জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প, কিন্তু মাত্র চব্বিশ দিনের মাথায় তাকে অপসারণ করতে হয়েছে।
×