ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আহ্লাদি মা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৯ মে ২০১৭

আহ্লাদি মা

মা চলে গেছেন অনেকদিন। তখন আমি মোটামুটি বড়। তবু কেন জানি কিছু মনে নেই। স্মৃতি হাতড়ে বেড়াইÑ মা আমাকে কিভাবে আদর করত। আদর করে মা আমাকে কি বলে ভাবত। যখন আহ্্লাদ করতাম তখন মা আমার সঙ্গে কেমন করে কথা বলত? খুঁজে পাই না কিছুই। ‘মা’ বলতে যে ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে সে হলো মধ্যবয়সী একটি কিশোরী মেয়ে। যে হাত দুটো পেছনে দিয়ে ঘরময় হাঁটত আর মাথা দুলিয়ে বিভিন্ন কবিতা আবৃত্তি করত। অবাক হয়ে বলতামÑ আমরা মাত্র ক’বছর আগে পড়েছি; তাও তেমন কোন কবিতা মনে নেই। আর তুমি সেই কোন্কালে পড়েছ, এখনও এত কবিতা মনে আছে। যখনি মাকে মনে করতে চাই তখনি মিষ্টি হাসির মধ্যবয়সী এই কিশোরী মেয়েটাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মা ছিল আমাদের ভাই-বোনদের আহ্লাদি মেয়ে। রাগ করে মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকতাম। মায়ের সঙ্গে কথা বলতাম না। তবু বাইরে থেকে এসে দেখতাম, মা আমার পছন্দের খাবার তৈরি করে রেখেছেন। আমার প্রিয় মাছের টুকরাটা উঠিয়ে রেখেছেন। ফল কেটে ফ্রিজে রেখে ঠা-া করে রেখেছেন। তার কখনও কোন অভিমান ছিল না। খুব মনে পড়ে তোমায়, মা। কখনও বলা হয়নিÑ অনেক ভালবাসী মা। তখন ‘মা’ দিবস অতটা আলোচিত ছিল না। যখন হয়েছে, বুঝতে শিখেছি তখন মা হারিয়ে গেছে না-ফেরার দেশে। যারা কখনও মাকে ‘ভালবাসী’ কথাটি বলতে পারেনি তারা এই দিনে বলার চেষ্টা করেÑ বলে, আমি পারি না। একবার ভেবেছিলাম তার শিয়রে গিয়ে একটি লাল গোলাপ দিয়ে আসব। লাল গোলাপ তার পছন্দ ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি। ওখানে যেতে আমার ভাল লাগে না। অসুস্থ মায়ের পাশে শুয়ে যখন মনে হতোÑ আর ক’দিন পর মা থাকবে না, মাকে জড়িয়ে ধরে আর ঘুমানো হবে না। কত্তদি...ন মাকে দেখব না। কি করে থাকব এত বছর মা ছাড়া! কষ্টে বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যেত। মায়ের সামনে কাঁদতে পারিনি তখন। ভাবতামÑ মা সারাজীবন তার মায়ের গল্প বলেছে, ক’দিন পর আমার মা’ও গল্প হয়ে যাবে। ওমা, কি করে থাকব এতদিন তোমাকে ছাড়া। বেঁচে আছি মাগো, তোমাকে ছাড়া এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে আছি। ভালভাবেই বেঁচে আছি। তুমি নেই বলে কোন কিছু থেমে নেই। শুধু অভাব আছে। অভাব আছে তোমার ভালবাসার, তোমার আদর-স্নেহ-মমতার। তুমি নেই, তুমি গল্প হয়ে গেছÑ এটাই এখন সবচেয়ে বড় অভাব। তুমি ভাল থেকো, আহ্লাদি মা... শিউলী আহ্মেদ
×