ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়তি নাহার

মায়ের ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৯ মে ২০১৭

মায়ের ভালবাসা

চিরায়ত মাতৃত্বের অম্লান দ্যুতি একজন মাকে যেভাবে স্বপ্নময় অনুভবে আচ্ছন্ন করে রাখে, একইভাবে সন্তানের জীবনে মাতৃস্নেহ ধারার কোন বিকল্প নেই। মা হওয়ার আবেগাপ্লুত আবিষ্টতা নারী সত্তার এক অনুপম সম্পদ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় নারীর দ্বৈতচরিত্রে একটি স্নেহে, মায়ায়, মমতায় নারী মাতা আর প্রেমে, পূজায়, নিবেদনে নারী প্রিয়া, শাশ্বত এবং কাক্সিক্ষত অনুভবে অশৈশব লালন করা মাতৃমহিমার যে দীপ্তি তা যে কোন মাকে অনাবিল আনন্দে পূর্ণ করে। অতি বাল্যকাল থেকে পুতুল খেলার মধ্য দিয়ে মাতৃসত্তা জেগে ওঠার মধুর আবেদনে একজন বালিকা মা হওয়ার আচ্ছন্নতায় নিজেকে তৃপ্ত করে। পুতুলকে মেয়ে সাজানোর স্বাপ্নিক দ্যোতনা থেকে মা হওয়ার যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় সেটাই কোন মেয়েকে স্থায়ীভাবে মায়ের আসনে বসিয়ে দেয়। এই চিরন্তন মাতৃত্ব যে কোন মেয়ের জীবনে এক হৃদয়নিঃসৃত স্নেহাতিশয্যের গৌরবোজ্জ্বল বিকিরণ। আর তাই এই স্নেহশীল মাকে নিয়ে আলাদা কোন দিবসে বিশেষ কোন তাৎপর্য বহন করে না। মা যে কোন সন্তানের জন্য প্রতিদিনের, চিরকালের। মায়ের সঙ্গে সন্তানের যে নাড়ির এবং আত্মিক সম্মিলন তাকে কোন আলোচনাতে আবদ্ধ করা যাবে না। এই অসীম এবং প্রতি মুহূর্তের বন্ধনকে অনন্ত এক মুগ্ধকর আবেশে অনুভব করা যায় মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। আর তাই মাতৃমহিমার উৎসব তো অনুক্ষণের, সময়ের প্রতিটি বিন্দুতে। একজন মা দশ মাস দশদিন সন্তানকে নিজের জঠরে লালন করে যখন পৃথিবীর আলো দেখায় সেই আকাক্সিক্ষত এবং প্রত্যাশিত মাতৃরূপের তুলনা কোন কিছুতেই হয় না। স্বপ্নিল চেতনায় সুপ্ত মাতৃত্ব বাস্তবের আলোতে যখন দীপ্যমান হয় সেই অপরূপ সুষমা যে কোন মায়ের জীবনে চিরায়ত শৌর্য। সন্তানকে যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের দায়বদ্ধতারও কোন তুলনা নেই। সৎ, আদর্শবান, ন্যায়নিষ্ঠ, নৈতিক মূল্যবোধÑ সব মিলিয়ে সন্তানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তৈরিতে মায়ের যুগান্তকারী ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ্য। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের জাতিকে উপহার দিয়ে মায়েরা যে গুরু দায়িত্ব পালন করেন তা যেমন অমূল্য একইভাবে মাতভূমির প্রতি চরম দায়বদ্ধতাও বটে। মায়ের ছায়ায়, স্নেহে স্নতান বড় হয়, মায়ের শাসনে সন্তানের ন্যায়-অন্যায় বোধ জেগে ওঠে, মায়ের স্নিগ্ধ মমতায় সন্তানের সমস্ত শুভ বোধ তাকে জীবনের যথার্থ ঠিকানা দিতে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করে। সেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আদি এবং অকৃত্রিম। সন্তানকে শুধু বড় করে তোলা নয় তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে মায়ের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অতুলনীয়। ঝড়-ঝঞ্ঝা, বিপদ-আপদ, আনন্দ-বিষাদ এবং আশা-আকাক্সক্ষার হরেক রকমের অনুভবে মা-ই হয় সন্তানের সর্বক্ষণিক সঙ্গী। মায়ের মতো ভাল বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। মার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ আর নিবিড় হবে তার চলার পথ ততই নির্বিঘœ আর সহজ হবে। সন্তানের সমস্ত শুভযোগ আর মাঙ্গলিক বিষয় বিবেচনায় মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। মায়ের প্রতি মুহূর্তের নির্মল ছায়া যেমন সন্তানের সার্বিক নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী ঠিক একইভাবে সেখান থেকে সামান্য বিচ্যুতি ও সন্তানের সবনাশ ডেকে আনতে পারে। সমাজের নানামাত্রিকে মূল্যবোধ অবক্ষয়, উগ্রবাদ, অশান্ত, লক্ষ্যহীন কোন উন্মাদনা, আদর্শহীনতা কোমলমতি সন্তানের ওপর যেন বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে সে দিকটাও বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। ছোট, স্নিগ্ধ গৃহকোণটি যেন মায়ের আদরে, ভালবাসায়, আদর্শ-নিষ্ঠতায় পরিপূর্ণভাবে ভরে ওঠে। সমস্ত গ্লানি, আবর্জনা, অশুভ সঙ্কেত মাতৃমহিমার অপরিমেয় শক্তিতে যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। স্নেহশীল, আদর্শনিষ্ঠ এবং মানবিক মা-ই পারেন দেশের ভাবী প্রজন্মকে যথার্থভাবে মানুষ করে দেশমাতৃকার অগ্রযাত্রায় শামিল করে দিতে। নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও ভুলবার নয়Ñ একজন মা-ই পারেন একটি সুশৃঙ্খল জাতি উপহার দিতে। যুগে যুগে তাই-ই হয়েছে। আর তাই মা শুধু একজন যোগ্য নাগরিকই তৈরি করেন না, একই সঙ্গে দেশ গঠনেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখারও কৃতিত্বের দাবিদার। সুতরাং আন্তর্জাতিক মা দিবসের তাৎপর্যটিকে অভিনন্দন জানিয়েও বলা যায়Ñ মাকে কোন দিবসের মধ্যে আটকে রাখার ব্যাপার নয়। মা প্রতি মুহূর্তের, অনুক্ষণের এবং নিত্য পথ চলার অকৃত্রিম বন্ধু, সাথী এবং নির্দেশক।
×