ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ

এলিয়েনের সন্ধানে পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ মে ২০১৭

এলিয়েনের সন্ধানে পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ

চিলির আটাকামা মরুভূমিতে শুরু হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম টেলিস্কোপ স্থাপনের কাজ। ৩৯ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট লেন্সের এই টেলিস্কোপকে বলা হচ্ছে এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ বা ইএলটি, যা হবে পৃথিবী থেকে আকাশ দেখার সর্ববৃহৎ চোখ। সৌরজগতের বাইরের কোন গ্রহে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব কিনা বা এলিয়েন থাকলে তা খুঁজে বের করা এই টেলিস্কোপের অন্যতম উদ্দেশ্য। আকৃতির কারণেই এটি অনেক বড় ছবি তুলতে পারবে, যাতে সম্ভবত ওই সব গ্রহের পরিবেশের গুনাগুন সরাসরি পরিমাপ করা যাবে। টেলিস্কোপটি মহাকাশে বাসযোগ্য গ্রহ অনুসন্ধানে, ডার্ক ম্যাটার এবং কৃষ্ণ গহ্বর সংক্রান্ত গবেষণা প্রচেষ্টাকে নতুন পথ দেখাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১৫টি ইউরোপীয় দেশ ও ব্রাজিলের সমন্বয়ে গঠিত সংঘ সাউদার্ন অবজার্ভেটরি (ইএসও) এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই সংস্থাই চিলির অন্য বড় টেলিস্কোপগুলা চালাচ্ছে। কেরো আরমাজোনস নামে যে স্থানে এই টেলিস্কোপটি স্থাপন করা হয়েছে, সেটি চিলির আন্টোফাগাস্টা শহরের ১৩০ কিমি. দক্ষিণে অবস্থিত। দু’বছর আগে এখানে একটি পাহাড়ের উপরিভাগকে সমতল করা হয়েছে, যাতে প্রকৌশলবিদ্যার মাধ্যমে কাজ শুরু করা যায়। যেখানে ৮০মিটার উঁচু গম্বুজের সঙ্গে এমন একটি জানালা থাকবে, যেটি তারকারাজির আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে। এই নির্মাণ কাজ আগামী ২৬ মে শুরু হওয়ার কথা, যেটি ২০২৪ সালের নবেম্বর থেকে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি মাদ্রিদে বার্তা সংস্থা ডিপিএকে ইএসও-র মহাপরিচালক টিম ডে জুউ বলেন, বিদ্যমান টেলিস্কোপ ও এই ইএলটির মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, যেমনটা গ্যালিলিওর খোলা চোখ এবং তার টেলিস্কোপের মধ্যে ছিল। এই টেলিস্কোপটির মিরর বিদ্যমান যে কোন টেলিস্কোপের চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বড়। এটা বিদ্যমান টেলিস্কোপগুলোর চেয়ে ১৩ গুণ বেশি আলো একত্রিত করতে পারে, এটা ছবিকেও অনেক বেশি স্পষ্ট করবে। ডে জুউ বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরের প্রথম বাসযোগ্য গ্রহ এক দশকের মধ্যেই আবিষ্কার হতে পারে। এটা একটু অন্য রকম যে, আতাকামা মরুভূমির মতো দুর্গম স্থানে স্থাপন করা এই টেলিস্কোপটা অন্য গ্রহের প্রাণের প্রমাণ পেতে সাহায্য করতে পারে। এটা এমন এক মরুভূমি, যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থানের একটি। ১ লাখ ৫ হাজার বর্গ কিমি. আয়তনের এই মরুভূমির কোন কোন স্থানে কখনও বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে রেকর্ডে নেই। জায়গাটা অবশ্য মহাশূন্য পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী জায়গা। এখানকার রাতের আকাশ সাধারণত পরিষ্কার থাকে। নির্মাণের সময় এই টেলিস্কোপের পাঁচটা মিরর থাকবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টা হবে প্রাথমিকভাবে ৩৯ মিটার ব্যাসের। ১ দশমিক ৪ মিটার ব্যাসের অনেক ষড়ভূজাকার অংশ একত্রিত করে এটা তৈরি করা হবে। ডে জুউ বলেন, এই আকারের একটা আয়না তৈরি কিভাবে সম্ভব সেটা কারোরই জানা নেই। এমনকি কেউ সেটা করতে পারলেও সেখানে বহন করে নিয়ে যাওয়া অসম্ভত। ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউরো খরচে নির্মিতব্য এই প্রকল্প মূলত ইউরোপীয় দাতাদের টাকায় হচ্ছে। প্রকল্পটির কথা প্রথমে নব্বইয়ের দশকে ভাবা হয়, যখন ইএসও ১০০ মিটার ব্যাসের একটি টেলিস্কোপ নির্মাণ করতে চেয়েছিল। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ হতো। পরে এটাকে কমিয়ে ৩৯ মিটারে নিয়ে আসা হয়। বড় আকারের টেলিস্কোপ নির্মাণে এটিই একমাত্র উদ্যোগ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০মিটার ব্যাসের একটি টেলিস্কোপ নির্মাণে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। একুশ শতকের প্রথম দিকে এ ধরনের বেশ কিছু উদ্যোগ ইউরোপেও নেয়া হয়। পরে একত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে তাদের আলাদা আলাদা সেই উদ্যোগ থেকে সরিয়ে আনা হয়। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন ডে জুউ। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা যে কারও মান বাড়াতে সাহায্য করে। সূত্র : ডয়েচ ভেলে, লাইফ সায়েন্স
×